সম্ভাবনাময় বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার আহ্বান

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: মাননীয় অর্থমন্ত্রী গেল ২রাজুন ২০২১ তারিখে জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকারবাজেটপেশ করেছেন। বিপিও শিল্পের পক্ষ থেকে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বিপিও, যেখানেঅদ্যাবধি ৬০,০০০ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে ।দেশীয় বিপিও কাজের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিপিও শিল্প নিয়ে কাজ করে আমাদের দেশ অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে ।বর্তমানে দেশীয় বিপিও শিল্পের বাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে । কেননা, প্রযুক্তিনির্ভর কাজের চাহিদা বাড়ায় শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে এই খাতে ।

করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে জরুরী সেবার আওতায় বিপি ও শিল্পের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরামহীন ২৪ ঘন্টা কলসেন্টার সেবা, জরুরী সেবা এবং ব্যাক-অফিসের মতো সেবাসমূহ প্রদান করে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।

ফল শ্রুতিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের সুনাম, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে ।তথাপি প্রস্তাবিত বাজেটে এই শিল্পকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার এবং গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বাজেট ১৭২০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২০% এর অধিক। তাছাড়া Cloud   Service,   System   Integration,   e-learning platform, e-book, publications, Mobile Application  development  service  ও IT  Freelancing  ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে । এগুলো অত্যান্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে বাক্কো । Database, Operating Systems, Development tools, Productivity communication &Collaborative software for automatic data processing machinesআমদানি পর্যায়ে এবং মডেম, ইথারনেট, ইন্টারফেস কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, অপারেটিং সিস্টেমস, ডেভেলপমেন্ট টুলস ইত্যাদি সহ আরও অনেক সরঞ্জামাদিতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে মুসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ । বর্তমানকোভিডপরিস্থিতিবিবেচনা করে সরকার ঘোষিত বাজেট ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে আশা করা যায়। সন্দেহ নেই যে সরকারের সকল উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) একমাত্র বিপিও অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মুখ্য ভুমিকা পালনকারী এক অগ্রজ সৈনিক। সামগ্রিক বিপিও শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাক্কো প্রকাশিত বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিল যার আশানুরূপপ্রতিফলন ঘটেনি।আমরা মনেকরি আরও কিছু বিষয় এই বাজেটের অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী। বাক্কোর বাজেট সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া নিম্নে ব্যক্ত করা হলোঃ

১। আইসিটি সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কর্মসংস্থান তৈরীর যে খাতটি, তা হচ্ছে বিপিও।কাজেই এই খাতের আওতা ও পরিধি বাড়াতে হলে এই শিল্পের প্রধান পরিচালক তাদের ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে হবে এবং এইজন্যে এই শিল্পে যে সব ইন্ডাস্ট্রি তাদের কাজ আউটসোর্সিং করবে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে আকৃষ্ট করতে হবে। কারণ আরেকটি শিল্প তখনই আউটসোর্সিং এ আকৃষ্ট হবে যখন সে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। কিন্তু এই অপার সম্ভাবনা ময় খাতের উন্নয়নে এই ধরনের কোন উদ্যোগ এই বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।

২। বিপিও খাতের উন্নয়নে এবং সম্প্রসারণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর ৫% হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যহতি দেওয়া না হলে গ্রাহকের চাহিদাকৃত সেবাবাবদ ব্যয় আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আরও অনেক গ্রাহকদের বিপিও সেবা গ্রহণে অনুৎসাহিত করবে ।তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর ৫% হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের বাক্কোর দেওয়া প্রস্তাবটি আমলে নেওয়া হয়নি ।

৩। বিপিও শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা ও উন্নয়নেকনসালটেন্সি সার্ভিস, অডিট এবং এডভাইজরি ও সম্মানিখাতের উপর বিদ্যমানউৎসে মূল্য সংযোজন কর শিথিলকরণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা উক্ত বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে । IT/ITES শিল্পের বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরীতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান আইন শিথিল না করা হলে নিদির্ষ্ট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কষ্টসাধ্য হবে। যেহেতু বর্তমানে IT/ITES – সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকর্মবেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে সংকুলান করা হচ্ছে এবং এই খাতে সরকারি অনুদানও নেই,সেক্ষেত্রে গবেষণা সংক্রান্ত এই ব্যয় অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সংকুলান করা সম্ভব হবেনা।

৪। IT/ITESপরিষেবার সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রীক্রয়েমূল্য সংযোজন কর এবং উৎসকর থেকে অব্যাহতি প্রদান করার বিষয়টিও প্রকাশিত বাজেটেবিবেচনা করা হয়নি।

৫। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং এই জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিরব্যাপকসম্ভাবনারয়েছেবিপিও শিল্পে, তাইপ্রয়োজনসরকারিপৃষ্ঠপোষকতাএবংসুদৃষ্টি। সেলক্ষ্যেবিপিওশিল্পেরঅবকাঠামোগতউন্নয়ন, প্রশিক্ষণকার্যক্রম, সহজশর্তেঋণএবং Center of Excellence গড়েতোলারজন্য ৩০০ কোটি টাকার তহবিল রাখার প্রস্তাব করলেও এই বাজেটে তা উপেক্ষিত হয়েছে ।

৬। IT/ITES শিল্পকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি প্রদান করলেও, করোনা মহামারীর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিপি ও শিল্প এর সুফল ভোগ করতে পারছেনা, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরো ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। তাই IT/ITES শিল্পকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি প্রদান করার সুপারিশ করেছিল বাক্কো। যা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

৭। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকর্তৃক প্রদানকৃত ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট গ্রহণ IT/ITES প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যঅত্যান্তসময় সাপেক্ষকাজ । তাই তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আবেদনের সুযোগ এবং ১ মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদান করা এবং একইসাথে ৪ বছর মেয়াদি (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৪) পর্যন্ত ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট ইস্যু করার প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি ।

পরিশেষে, বিপিও শিল্পের সর্বোপরি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য বাক্কো প্রদত্ত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করে বাজেটের পরবর্তী অধিবেশনে এর অন্তর্ভুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ করা গেলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং একইসাথে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে বাংলাদেশ।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন