আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

ছবি পিক্সিবে থেকে।

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল প্রতিযোগিতা।

মোবাইল কোম্পানিগুলো  গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত বাজারে নিয়ে আসছে নিত্য নতুন মডেল এবং লেটস্ট কনফিগারেশনের ফোন।

আবার একই মডেলের আপডেটে ভার্সন তারা নিয়ে আসছে মাসখানেকের মধ্যে। আর এই ফোনগুলোর চাহিদা এত বেশি যে, ৬ থেকে ৭ মাস পরেই তা হয়ে যাচ্ছে স্টক আউট ।

অপরদিকে, গ্রাহকরাও নিজেদের পছন্দের মডেল সংগ্রহ করতে হয়ে উঠেছে মরিয়া। অনেকেই কয়েকদিন পর তার পুরাতন হ্যান্ডসেট বিভিন্ন অফলাইন এবং বিক্রয় ডট কমের মত অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেকে কম দামে ভালো ফোন কিনতে ঝুকছে এইসব মোবাইলের প্রতি।

আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মার্কেট চাহিদার উপর ভিত্তি করে এই  ক্লোন মোবাইলগুলো নিয়ে আসছে বাজারে। আর গ্রাহকও তাদের বিছানো ফাদে পা দিচ্ছে নিজের অজান্তেই।

যখন সমস্যা খুব প্রকট আকার ধারন করে তখন তারা এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠে কিভাবে চিনবে তাদের ব্যবহৃত ফোনগুলো আসল নাকি নকল?

আর তাদের জন্যই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল সহজ ৭টি উপায়ে আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার কৌশল বা পদ্ধতি ।

আশা করি এই আর্টিকেল  আপনাদের আসল এবং ক্লোন মোবাইলগুলো চিনতে সাহায্য করবে। আর আপনি হয়তো সেই ভুক্তভোগী না হওয়ার জন্যই আগে ভাগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবেন।

তাহলে শুরু করি। 

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭টি উপায়

কোনটি আসল আর কোনটি নকল? ই তাবৎ মহাবিশ্বে তা প্রমাণ করা সত্যিই অনেক কষ্টসাধ্য এবং দুরহ কাজ। 

কিন্তু  আমাদের নিজেদের স্বার্থেই তা আমাদের খুজে বের করতে হবে।  আর সেজন্য নকল ফোন চেনার সাথে সাথে আমাদের আসল মোবাইল ফোন সম্পর্কে জানার জরুরি।

আমাদের এই আর্টিকেল যেখানে আমরা বিষদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি  কিভাবে আপনি আসল এবং নকল ফোন চিনবেন?

আই এম ই আই নাম্বার

মোবাইল আসল নাকি নকল বুঝার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো আই এম ই আই নাম্বার  দ্বারা মোবাইল ফোন যাচাই করা। এই পদ্ধতি আমাদের জানা না থাকলেও অবশ্যই জানতে হবে। কারণ এই আই এম ই আই নাম্বার না জানলে আমরা বাকি হাজারটা উপায় অবলম্বন করেও কোন লাভ হবে না।

নিচের স্টেপগুলোতে মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার আই এম ই আই নাম্বার বের করে নিতে পারবেন। 

  1. প্রথমেই (*#06#) নাম্বারটি টাইপ করুন। সাথে সাথেই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে একটি কিংবা দুটো আইএমইআই নাম্বার। 
  2. আইএমইআই নাম্বারটি কপি করে নিন। এবং সোজা চলে যান লিংকের ওয়েবসাইটটিতে।(www.imei.info)
  3. কপি করা আইএমইআই নাম্বারটি ড্রপডাউন বক্সটিতে পেস্ট করুন। ক্যাপচা ভেরিফাই শেষ ক্লিক করুন চেক বাটনটিতে।

ব্যাস! নিমেষেই পেয়ে যাবেন ফোনের যাবতীয় সব তথ্য।

এখান থেকে পরিষ্কার ভাবে দেখে নিন। আপনার ব্র‍্যান্ডের সাথে সব মিলে যাচ্ছে কি না। এমনকি ওখানে দেয়া ফোনের কালারের সাথেও নিজের ফোনের কালার মিলিয়ে দেখুন।

তবে কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।  যেমন – যদি ১৬ জিবি র‍্যামের স্থানে ১৭ জিবি লেখা থাকে। এটি মূলত ওয়েবসাইটের এন্ট্রি বিষয়ক সমস্যা। কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো অবশ্যই চেক করে নিতে হবে।

মোবাইল ভেরিফিকেশন অ্যাপের সাহায্যে

প্লে-স্টোর কিংবা গুগলে Mobile Verification App লিখে সার্চ করলেই আপনি কতকগুলো অ্যাপ পেয়ে যাবেন। যা মূলত ফোন ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে সহায়্তা করবে। কিছু কিছু ব্র্যান্ডের আবার নিজস্ব অ্যাপও রয়েছে যেমন- শাওমি, বা রিয়ালমি।

এই অ্যাপটি কাজ করে মূলত আপনার ফোনের পিছনে থাকা স্টিকারের কিউআর কোড বা বারকোড স্ক্যান করে। 

অ্যাপটি দিয়ে কোড স্ক্যান করে আপনি নিমেষেই পেয়ে যাবেন সব তথ্য। যা আসল ফোন চেনার ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করবে। সেই সাথে ফোন ভেরিফিকেশনেও।

হার্ডওয়ার চেকার অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে

অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি মূলত ফোনের আভ্যন্তরীণ হার্ডওয়ার সমন্ধে জানতে পারবেন। যা আসল ফোনের সাথে চেক করে কনফার্ম হতে পারবেন ফোনটি ক্লোন কি না। এক্ষেত্রে নিচের স্টেপগুলো ফলো করুন-

  1. শুরুতেই আপনি প্লে-স্টোরে চলে যান। CPU-Z অথবা Hardware Info লিখে সার্চ করুন। এরপর অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন।
  2. ফোনে ইন্সটল হয়ে যাওয়ার পর এর ভিতরে প্রবেশ করুন। চেক করুন আপনার ফোনের হার্ডওয়ার ইনফো। এগুলো হুবহু আপনি যে ফোনটি চালাচ্ছেন তার তথ্য।
  3. এরপর,আপনার ফোনের ব্র‍্যান্ডের ওয়েবসাইটে চলে যান। আপনার মডেলটির স্পেসিফিকেশন চেক করুন। এবং আপনার ব্যবহৃত স্মার্টফোন বা ফিচার ফোনের সাথে মিলিয়ে দেখুন।

যদি মিলে চায় তবে চিন্তার কোনো কারণই নেই। তবে সন্দেহজনক কিছু দেখলে একটু ঘাটাঘাটি করুন। যদি দেখতে পান কিছুতেই মিলছে না।  তবে আপনার ফোনটি ক্লোন করা।

জেনারেশন বা ভার্শন চেক করার মাধ্যমে

অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায় সবকিছু অবিকল বানাতে পারলেও জেনারেশন সাপোর্টের দিকটা তেমন খেয়াল করে না। যার ফলে দেখা যায় জেনারেশন সাপোর্ট অফিসিয়াল মডেল থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। আর জেনারেশন কিংবা ভার্শন নাম্বার ক্লোন ফোন চেনার উপায় এর মধ্যে অন্যতম।

তাই ফোন কেনার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে দেখে নিতে হবে যে, জেনারেশন সাপোর্ট একই কি না। এটি করতে হলে আপনাকে নিচের স্টেপগুলো ফলো করতে হবে –

  1. প্রথমেই ফোনের সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করুন। 
  2. এরপর একেবারে নিচে চলে যান। সেখানে গিয়ে Advanced Settings/System Advanced খুজুন। এবং তাতে ক্লিক করুন।

তাহলেই আপনার সামনে আপনার ফোনের যাবতীয় তথ্য সামনে চলে আসবে।

ফোনের পার্থক্যতা

ক্লোন ফোনের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা তা হলো এর কম দাম। দেখবেন আসল ফোনের চেয়ে একেবারেই নগণ্য মূল্যে তা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন এই কম দাম তাও বেশ পরিষ্কার। কেননা তারা এতে কম দামী ম্যাটেরিয়ালস বা সামগ্রী ব্যবহার করেছে। আর তাই এর কোয়ালিটি ততটা প্রিমিয়াম হয় না।

পার্থক্যতা চেক করার জন্য, আপনি প্রথমেই আসল কোনো ফোন হাতে নিয়ে দেখুন। এর ক্যামেরা থেকে শুরু করে বডির প্রিমিয়াম কোয়ালিটি। এমনকি অ্যামোলেটেড স্ক্রিনটিও পর্যবেক্ষণ করুন।

এবার আপনি যেখানে কম দামে ফোনটি কিনতে গিয়েছিলেন সেই ফোনটি ধরে দেখুন। 

এক্ষেত্রে যদি তা সত্যিই ক্লোন ফোন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি একটা পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আমরা তো সকলেই মানুষ। ভুল কিছু রয়েই যায়। এভাবে দেখলে সেই ভুলটা নজরে আসবে এবং সতর্ক হতে পারবেন।

ব্যাটারী ও নেটওয়ার্ক একসেস

ক্লোন ফোনগুলো সবচেয়ে বাজে যে সার্ভিসগুলো দিয়ে থাকে তা মূলত ব্যাটারী ব্যাক আপ বা নেটওয়ার্কিং প্রসেসগুলোর ক্ষেত্রে। এই ফোনগুলোর খুব তাড়াতাড়ি চার্জ শেষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়। আপনি হটস্পট, নেটওয়ার্ক শেয়ারিং বা সিম নেটওয়ার্ক এমনকি ব্লু-টুথ এর ক্ষেত্রে বাজে অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হবেন। যা আসল ফোনে হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাই আসল ফোন চেনা উপায় এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাটারী এবং নেটওয়ার্কিং প্রসেসগুলো চেক করে নেয়া। যা আপনাকে ভুক্তভোগী হওয়ার হাত থেকে বাচাবে।

আনটুটু অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে

ক্লোন এবং আসল ফোন চেনার উপায় এর মধ্যে সর্বোকৃষ্ট একটি উপায় হলো আনটুটু অ্যাপ। ইতোপূর্বে এর নাম হয়তো আপনি শুনে থাকবেন। আর এই অ্যাপ দ্বারা একেবারে কেনার সময়ে পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারবেন। কিভাবে করবেন তার উত্তর নিচের স্টেপগুলো ফলো করলেই বুঝে যাবেন-

  1. আপনার পুরাতন ফোনের হটস্পট চালু করুন(এম্বি অবশ্যই থাকতে হবে)। এবং নতুন ফোনটিকে এই ফোনের সাথে যুক্ত করুন।
  2. দ্বিতীয়ত, আপনার নতুন ফোন আনটুটু অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন। প্লে-স্টোর (http://y.antutu.com) লিংকে যেয়ে তা ডাউনলোড করতে পারবেন।
  3. এখন আপনার পুরোনা ফোনের ব্রাউজারে আবার আগের লিংকটি পেস্ট করে চলে যান ওয়েবসাইটে। সেখানে একটি কিউআর কোড বা কিউআর নাম্বার দেখতে পারবেন।
  4. নাম্বারটি কপি করেন। নতুন ফোন দিয়ে তা স্ক্যান করে দেখুন।
  5. আপনার নতুন ফোনের একটি সার্বিক ফলাফল ভেসে উঠবে পুরানো ফোনের স্ক্রিনে। আর এর মাধ্যমেই বুঝতে পারবেন ফোনটি আদৌ আসল কি না।

আসল ফোন চেনার উপায় এর মধ্যে এটিও বেশ কার্যকর বলেই অভিহিত।

শেষ কথা

পরিশেষে আপনাকে এ বিষয়গুলোই মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো ক্রমেই কম দামের কথা ভাবা যাবে না। কেননা তার পাল্লায় পড়েই আজ এই অবস্থা। সেই সাথে কোনো ব্র্যান্ডের অতি মাত্রায় পাগল যেমন তা না হলেই আমার চলবে না এমন মনোভাবও পরিহার করতে হবে। এ বিষয়গুলো খেয়াল করলেই আপনি ক্লোন ফোনের ফাদ হতে দূরে থাকবেন। আর আমাদের ক্লোন ও অরিজিনাল ফোন চেনার উপায় তো রয়েছেই।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন