সবার জীবনে থাকুক একটা গল্পঃ ইকবাল বাহার

নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের  প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ।

টেকভিশন২৪ ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘টেক ইন্টারভিউ’। যেখানে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসা, সফলতা-ব্যর্থতা এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

এবারের অতিথি যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এমন মানুষের কাছে পরিচিত নাম ইকবাল বাহার জাহিদ। ‘চাকরি করবো না, চাকরি দেবো’ এই ব্রত নিয়ে যিনি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষন প্লাটফর্ম “নিজের বলার মতো একটা গল্প”। বেকারত্ব দূরিকরনে তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখান নিজে কিছু করার ৷ শেখান কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন যায় ৷ গল্প এবং অর্জন ইত্যাদি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন টেকভিশন২৪-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. গোলাম দাস্তগীর তৌহিদ।

প্রশ্নঃ কেমন চলছে অনলাইন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষন কার্যক্রম?

ইকবাল বাহারঃ জ্বি ধন্যবাদ,এখন পর্যন্ত খুবই ভালো চলছে আলহামদুলিল্লাহ। অনলাইনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখের মত শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষন দিয়েছি।

প্রশ্নঃ আপনাকে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর বলা হয় কেন?

ইকবাল বাহারঃ আমি তো আসলে শুধু কিভাবে উদ্যোক্তা হবে সেটা শিখাই না বরং উদ্যক্তাদের উন্নয়নে নার্সিং করি। দেখুন,উদ্যোক্তা তৈরি করা খুব সহজ কিন্তু তার ব্যবসাটা চালিয়ে যাওয়া,পরবর্তী ধাপে পোছানো, এর উন্নয়ন এই জায়গাগুলোতে আমি বেশি কাজ করি। যাতে কোন উদ্যোক্তা ঝরে না পড়ে। সেই অর্থে হয়তো কারিগর বলা যেতে পারে। আমি শুধু স্বপ দেখাইনা,স্বপ্নটাকে কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় আমি সেটাও শেখাই।

প্রশ্নঃ নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের শুরু টা কিভাবে?

ইকবাল বাহারঃ আমি ছাত্রজীবন থেকেই সেচ্ছাসেবি কাজ করতাম। সেখান থেকে আমার মধ্যে একটা তাগিদ তৈরি হয় যে,আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই।মাথায় ঘুরতে থাকে কি করব? কিভাবে করব? এরই মধ্যে মনে হল আমি যখন কথা বলি মানুষ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনে।  আমি ভাবলাম তাহলে আমি তাদেরকে গল্পের মতো করে শেখাই। আমি নিজে যখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হই তখন থেকেই মাথায় কাজ করতো বাংলাদেশে বেকার সমস্যা কিভাবে দূর করা যায়? সেলক্ষ্যেই এনবিএমইজিএফ প্রতিষ্ঠা করি। যেন এখান থেকে উদ্যক্তা তৈরি হয়।

প্রশ্নঃ এনবিএমইজিএফ শুরুর চ্যালেঞ্জ কি ছিলো?

ইকবাল বাহারঃ আমি যখন ফ্রীতে মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে শেয়ার করলাম,সবাই আমাকে প্রচন্ডভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। এমনও বলেছে ফ্রি জিনিস কেউ খায় না। এমনকি  যেদিন শুরু করি সেদিনও জানতাম না যে আমি এটা ব্যাচ আকারে চালাবো নাকি শুরুতেই শেষ হয়ে যাবে আমার স্বপ্ন।

ইকবাল বাহার জাহিদ

প্রশ্নঃ কতগুলো ব্যাচ শেষ হয়েছে এবং কততম ব্যাচ চলছে?

ইকবাল বাহারঃ শুরুতে ভেবেছিলাম সাত দিন চলবে একটি ব্যাচ এর পর হয়ত শেষ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এতটাই তীব্র দেখেছি যে,আমি এটাকে বন্ধ করতে পারিনি। মানুষ যদি টানা নব্বই দিন কোনো একটা কাজ করে সেটা তার অভ্যাসে পরিণত হবে সুতরাং ওইটা থেকে আমিই নব্বই দিনে গেলাম। প্রথম ব্যাচ একশো চৌষট্টি জনকে নিয়ে শেষ করার পর দেখলাম যে প্রায় দুই হাজার জন অপেক্ষা করছে।তারা উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নিতে চায়। তারপর দুই তিন দিনের মধ্যে যুক্ত হল চার হাজার এভাবে দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু করলাম ছয় হাজার জনকে নিয়ে।এরই মধ্যে আমরা ২০টা ব্যাচ শেষ করেছি যেখানে প্রায় সাত লাখ লাখ ছেলে মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ইতমধ্যে প্রায় এক লক্ষ নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

প্রশ্নঃ চাকরি ছেড়ে কেন এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলেন?

ইকবাল বাহারঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রতিটা মানুষের একটা বলার মত গল্প থাকা দরকার। তবে আপনার বা আমার বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, বিশাল প্রতিপত্তির মালিক, আমি একা অনেক বড় হয়ে গেলাম, এটা আসলে কোন গল্প হতে পারে না। আপনার গল্পটা বলার মত হবে যখন আপনি এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দশ জন, বিশ জন,একশজন মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন। এই চিন্তা থেকেই গড়ে তুলেছি এনবিএমইজিএফ।

প্রশ্নঃ নিজের গলার মতো গল্প সরকার অনুমদিত কিনা?

ইকবাল বাহারঃ জ্বি অবশ্যই। আমাদের ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে সোসাইটি অ্যাক্টের অধীনে অনুমোদন পেয়েছি। আমরা তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়,শিশু ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতমধ্যেই কাজ করেছি।

ইকবাল বাহার জাহিদ

প্রশ্নঃ কার্যক্রম আরও  প্রসারিত করতে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?

ইকবাল বাহারঃ আমাদের উদ্যেক্তাদের সহজ শর্তে লোন দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটা ব্যাংকের সাথে সমঝোতা হয়েছে। এছাড়াও তাদেরকে আরও বেশি প্রশিক্ষিত করতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছি।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোন কোন দেশে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন?

ইকবাল বাহারঃ বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আমাদের নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যো্তারাই আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ঠিক তেমনি করে সৌদিআরব, দুবাই, ইটালী, জার্মানী, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো প্রায় ৫০টি দেশে আমাদের ফাউন্ডেশনের উদ্যো্তারাই বিদেশে নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন।

প্রশ্নঃ যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

ইকবাল বাহারঃ যারাই আমার কাছে শিখতে আসে আমি সবসময় বলি, তুমি উদ্যোক্তা হবে,অনেক বড় কিছু করবে তার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরী। তার পর ব্যবসা করো বা অন্যকিছু, মূল্যবোধের জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। এটাতেই আমি বেশি গুরুত্ব দেই।সবাইকে বলতে চাই,তুমি একা বড় না হয়ে কিছু মানুষকে সাথে নিয়ে বড় হও। অন্যদেরকেও বড় হতে সাহায্য করো।যার কারণে বাংলাদেশে এই প্রথম আমাদের প্লাটফর্মের ছেলেমেয়েরা একজন আরেকজন উদ্যোক্তাকে প্রমোট করে বিনা পয়সায়।  

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন