বিটিআরসি ও ডিআইইউ এর উদ্যোগে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা দিবস উদযাপন

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতা দিবস-২০২৩’-এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতা দিবস-২০২৩’-এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আশুলিয়াস্থ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সহযোগিতায় আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার। সারাবিশ্বে অক্টোবর মাস জুড়ে চলমান সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত কর্মশালায় ৬টি প্লানারি সেশনে সাইবার বুলিং, অর্থনীতিতে সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি এবং হ্যাকিং থেকে মোবাইল ফোন সুরক্ষা এবং নেটওয়ার্ক সিস্টেমের নিরাপত্তায় করণীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌঃ শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড.মুশফিক মান্নান চৌধুরী, ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুল হক মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, নব নব প্রযুক্তির প্রসারের ফলে সাইবার জগত সুরক্ষা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তরুণ প্রজন্মকে সাইবার সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে যুগোপযোগী পাঠক্রম চালুর পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আত্মসচেতন অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষায় এ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ ও কার্যকরী পলিসি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সাইবার সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পারস্পারিক সহযোগিতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উন্নয়নশীল দেশের জন্য সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ বিষয়ে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, বিশ্বের সকল দেশই সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাইবার সুরক্ষায় উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, আইনগত কাঠামো প্রণয়ন, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাইবার সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পারস্পারিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। সাইবার সুরক্ষায় নির্ভূল ডাটার ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবী খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিটি অবকাঠামোর সাথে প্রযুক্তি সংযুক্ত থাকায় ডাটা সুরক্ষায় গুরুত্ব প্রদান না করলে যেকোনো সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব ডাটানির্ভর হওয়ায় পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে ।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান বলেন, পৃথিবীকে নিরাপদ রাখতে সাইবার সুরক্ষায় ন্যূনতম জ্ঞান থাকা জরুরি এবং তরুণ প্রজন্মকে সাইবার সচেতনতার জন্য কর্মশালা ও জনগণের সচতনতায় ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন।

পরবর্তীতে হ্যাকারস থেকে মোবাইল ফোন সুরক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল সেশন সঞ্চালনা করেন বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। এ সময় তিনি অ্যাপস চালুর ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদানে সচেতন থাকা জরুরি উল্লেখ করে যে কোনো সেবা গ্রহণের জন্য সম্মতিপ্রদানের শর্তাবলী স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। উক্ত সেশনে মুল বক্তব্য উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌ: শেখ রিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতায় ঘরে বসেই মানুষ প্রাত্যহিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে। মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে হ্যাকারগণ চুরি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদের টেকনোলজি অডিটের সিনিয়র ম্যানেজার এন.এম.আই রাইসুল বারী বলেন, বিশ্বে ৭.২ বিলিয়ন মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহাকারীর মধ্যে ৫ বিলিয়ন হ্যান্ডসেট ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রয়েছে । ম্যালওয়ার দিয়ে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ৭০ ভাগ হ্যাকিং হয়ে থাকে উল্লেখ করে ব্যক্তিগত মোবাইল হ্যান্ডসেট সুরক্ষায় প্লে স্টোর ব্যতিত অ্যাপস ইনস্টল না করা, প্যাটার্ন লকের পাশাপাশি টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করা, অপরিচিত সোর্স এবং এসএমএসের মাধ্যমে আসা লিংকে ক্লিক না করা, অ্যাপস ইনস্টলের সময় অনুমতি যাচাই করা এবং ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেন তিনি।

সরকারি এবং বেসরকারি খাতের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সাইবার সুরক্ষায় প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের সাইবার নিরাপত্তায় ২৬ হাজার পর্নসাইট বন্ধের পাশাপাশি ১৬ হাজার বেটিং সাইট বন্ধ করা হয়েছে। প্রযুক্তির প্রসার ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো সম্প্রসারণের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার সুরক্ষায় দক্ষ জনবল বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বক্তারা। 

অর্থনীতিতে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি সংক্রান্ত প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক অবকাঠামোয় সাইবার আক্রমণের জন্য হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে প্রাথমিক সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করে, পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমকে দুর্বল করে সাইবার আক্রমন পরিচালনা করে। বক্তারা বলেন, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত প্রতারণার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজ অসচেতনতা এবং ডিভাইসের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যতম কারণ । প্রযুক্তির নিরাপত্তায় দেশিয় সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন আলোচকরা।

সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, সাইবার সচেতনতার লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের জনগণ উপকৃত হবে। বিগত ৮০ এর দশকে বিশ্বে প্রযুক্তির প্রসার খুবই ধীর গতিতে হলেও গত এক দশকে প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রযুক্তি বন্ধ না করে বরং সেগুলোর নেতিবাচক কর্মকান্ড যাতে সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হয় সেজন্য সুরক্ষা এবং সচেতনতা প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কর্মশালা শেষে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস প্রজেক্ট শোকেজিং কনটেস্ট, গুগল হ্যাকাতন কনটেস্ট এবং ক্যাপচার দি ফ্লাগ কনটেস্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন