বিটিআরসির উদ্যোগে ঢাকায় ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২ বিষয়ক কর্মশাালা অনুষ্ঠিত

কর্মশালায় প্রধান অতিথি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার সহ অন্যরা।
টেকভিশন২৪ ডেস্ক: দেশের ব্রডব্যান্ড সেবায় একটি মানসম্পন্ন, যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০২২ প্রণয়নে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো, পরিষেবা এবং সংযোগের বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি পরামর্শমূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ।
 
বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে এতে বিশেষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান। শুরুতে ব্রডব্যান্ড পলিসি সম্পর্কে বিশদ উপস্থাপনা করেন কমিশনের সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ নাসিম পারভেজ।
 
কর্মশালায় জানানো হয় যে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট (a2i) এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোরডেবল ইন্টারনেট (A4AI) সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ব্রডব্যান্ড নীতিমালা তৈরি করছে।
 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সব অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের উপযোগী একটি ব্রডব‌্যান্ড নীতিমালা করা সময়ের দাবি। ২০৪১ সালকে সামনে রেখে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাব‌্য পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস‌্যপূর্ণ একটি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ‌্যমে জনগণের চাহিদা উপযোগী ব্রডব‌্যান্ড নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ব্রডব্যান্ডের প্রয়োগ ক্ষেত্র থেকে শুরু করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করে পলিসি তৈরি করতে হবে।
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ব্রডব্যান্ড পলিসি তৈরির এ উদ্যোগে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান একটি জনবান্ধব ও কার্যকরী পলিসি তৈরিতে সহায়ক হবে।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিটিআরসি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী ও টেকসইকরণে বদ্ধ পরিকর। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসি যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তা প্রণয়ন করা হবে। তিনি হাওর-বাওরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় যারা এখনো ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত রয়েছেন তাঁদেরকে এর আওতায় নিয়ে আসতে তাঁর আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।
 
দিনব্যাপীর অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার প্রথম সেশনে দেশের ব্রডব্যান্ড ও প্রেক্ষাপট বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন A4AI এর ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর শহীদ উদ্দিন আকবর, A4AI এর হেড অব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্জু মঙ্গল, বিডব্লিউআইটি এর সভাপতি ড. লাফিফা জামাল, এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর ড. আনির চৌধুরী, এমটবের মহাসচিব ব্রিগেঃ জেনাঃ এস এম ফরহাদ (অবঃ)।
 
কর্মশালায় ৫টি গ্রুপে নিম্নোক্ত বিষয়াবলী আলোচিত হয়েছেঃ
• মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এবং পরিষেবাসমূহ (4G+/5G)
• ফিক্সড ওয়্যার্ড এবং ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এবং পরিষেবাসমূহ
• পাবলিক অ্যাক্সেস সুবিধাসমূহ এবং কমিউনিটি নেটওয়ার্ক
• সাশ্রয়ী মূল্যের ইন্টারনেট সংযোগ: মূল্য এবং ভর্তুকি
• সহায়ক অবকাঠামো, কস্ট শেয়ারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিজনেস মডেল,
টেকসই এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসসমূহ।
 
উল্লেখিত পাঁচটি গ্রুপে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটরস, আইজিডব্লিউ অপারেটরস, এনটিটিএন, আইএসপি, বিআইজিএফ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং, বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন এর তথ্য প্রযুক্তিবিদগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণসহ মোট ৭৫ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়সমূহের উপর নানাবিধ প্রশ্নাবলী উপস্থাপনসহ সুপারিশমালারূপে এসকল প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করেন। যা পরবর্তী সেশনে আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়।
 
দ্বিতীয়ার্ধে পলিসি সংক্রান্ত সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনা করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মাহবুব উল আলম ও অন্যান্য বক্তাগণ। বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সুব্রত রায় মৈত্রের সভাপতিত্বে সমাপনী ও ভবিষ্যত নীতিনির্ধারণী আলোচনায় অংশ নেন বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন, বিটিআরসি’র এসএস বিভাগের ডিজি ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক ড. মইনুল জাবের, গ্রামীণফোনের মহাব্যবস্থাপক মইনুল মোমেন, এনটিটিএন এর পক্ষ থেকে সামিট কমিউনিকেশনের এমডি মোঃ আরিফ আল ইসলাম এবং আইএসপিএবির সভাপতি মোঃ এমদাদুল হক।
জনগণের দ্বোরগোড়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে, মানসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সর্বস্তরে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার গঠনমূলক ও সুষ্ঠু ব্যবহার অপরিহার্য। তাই দেশের সর্বত্র উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় এনে সবার জন্য ব্রডব্যাড সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন ব্রডব্যান্ড নীতিমালা গঠন করা হচ্ছে।
 
জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা কার্যকর এবং সফল হওয়ার জন্য, সরকারের সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমস্ত সেক্টর, অংশীদার এবং স্টেকহোল্ডারদের সমর্থন প্রয়োজন। এই কর্মশালা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বৃদ্ধি করতে নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সংযোগের মূল্যায়নের উপর ফোকাস করবে।
প্রাপ্ত পরামর্শসমূহ সারাদেশে উচ্চ মানের এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং পরিষেবা সরবরাহের জন্য অন্তর্নিহিত নেটওয়ার্ক এবং আইসিটি অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত, সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা অন্বেষণ করবে৷ বিদ্যমান নেটওয়ার্ক কভারেজ এর চিত্র, পরবর্তী চার বছরের অনুমান, সেইসাথে অর্থনৈতিক, নীতি, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং অধিক উন্নয়নের সম্ভাবনা বিষয়ে অংশীজনদের দক্ষতার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই কর্মশালা সহায়তা প্রদান করাবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন