সরকারি হাই-টেকপার্ক গুলোতে ৯ প্রতিষ্ঠানের ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈর এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে নয়টি কোম্পানি বিনিয়োগ করবে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে সাতটি এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দুটি কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ প্রদান করেছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

আজ (বৃহস্পতিবার) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জমি হস্তান্তর বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো। চুক্তির আওতায় আগামী ৪০ (চল্লিশ) বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, টেকনোমিডিয়া লিমিটেড, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড, সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড, উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড, ম্যাকটেল লিমিটেড, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে রেডডট ডিজিটাল লিমিটেড ও ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ বিনিয়োগের সুযোগ পেলো।

চুক্তিতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং নয়টি কোম্পানির প্রধানেরা স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও, হালিমা টেলিকম কে বেসরকারি সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক ঘোষণার অনুমতিপত্রও আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে হার্ডওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ৩.০১ একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি এখানে আইটি/আইটিইএস, ডিজিটাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে কাজ করতে ৬.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ১৫৫০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

টেকনোমিডিয়া লিমিটেড এর অনুকূলে .৮৭ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে তারা এটিএম, সিআরএম, আরসিডিএম মেশিন এসেম্বল করতে প্রায় ২.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এতে প্রায় ২০০ জনের কর্মসংস্থান হবে।

ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড পাচ্ছে .৯৬ একর জমি যেখানে তারা প্রায় ৩.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ১০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। প্রতিষ্ঠানটি কালিয়াকৈরে আইটি এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এসেম্বল করবে। মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এসেম্বল এবং উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৭.০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মেডিকেল টেনোলজি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি পাচ্ছে .৬৫ একর জমি, যেখানে ২৫০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করতে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ৫৫০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ১.২৫ একর জমিতে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করবে, এখানে কর্মসংস্থান হবে ৩০০ মানুষের। উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড কালিয়াকৈরে পাচ্ছে ১.৮১ একর জমি।

স্মার্ট ফোন এসেম্বল করতে ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে ম্যাকটেল লিমিটেড, এরা পাচ্ছে ১.৩৭ একর জমি যেখানে ৩৩২ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে রেডডট ডিজিটাল লিমিটেড ও ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড ডাটা সেন্টার স্থাপনে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠান দুটির অনুকূলে যথাক্রমে .২১ ও .৪৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনু্ষ্ঠানে কুমিল্লার হালিমা টেলিকম ইন্ডস্ট্রিজ লি. কে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, আইসিটি বিভাগ করোনা মোকাবেলায় যে ভুমিকা রেখেছে তা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে আইসিটি বিভাগ। লাইভ করোনা টেস্ট, কোভিড-১৯ ট্র্যাকার, টেলি-মেডিসিন ও টেলিহেলথ, সহযোদ্ধা-প্লাজমা প্লাটফর্ম ইত্যাদি বহু উদ্যোগের সুফল পেয়েছে দেশবাসী। এর থেকেই একটি দেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির চিত্র সুস্পষ্ট। বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময় যেখানে হাই-টেক পার্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক যে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শ্রম-নির্ভর অর্থনীতি যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব দেশ জ্ঞান-ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে তারাই এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করতে সমর্থ্য হবে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করার তাগিদ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি” বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ফ্লাগশিপ প্রকল্প। আজ চুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে যে ৭টি কোম্পানি এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে যে ২টি কোম্পানি জমি বরাদ্দ পেলো, তারা হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, আইওটি, বিপিও, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমন্ট (আর এন্ড ডি), ডাটা সেন্টার প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। এর ফলে পার্ক দুটিতে প্রায় ৩,৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোম্পানিগুলো এখানে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।

তিনি আরো বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এরমধ্যে তিনটি পার্ক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৫০টির অধিক স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যমে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে ২৮,৫০০ জন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইসিটি খাতে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২১,০০০ জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে । সম্প্রতি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্মুখভাগ থেকে নেতৃত্বপ্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটির অর্জনকে ম্লান করে দেয়ার অপচেষ্টা করছে বলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার সবসময় বিনিয়োগকারীদের পাশে ছিলো, আছে এবং থাকবে।

বিনিয়োগকারীগণকে দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীগণকে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বর্তমানে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে যার মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, দেশের হাই-টেক পার্কগুলোতে ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব পার্কে এখন পর্যন্ত মোট বেসরকারি বিনিয়োগ ৫৭০ কোটি টাকা, এবং হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগ ৯৫০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনু্ষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এবং জমি বরাদ্দপ্রাপ্ত কোম্পানীর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান-কে নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কারওয়ান বাজারের ভিশন ২০২১ টাওয়ার (সাবেক জনতা টাওয়ার) সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন