ব্লেন্ডেড পদ্ধতির শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি

ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ব্লেন্ডেড পদ্ধতির শিক্ষা চালু করতে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এলক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কানেক্টিভিটি ফর এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন্স অ্যান্ড ব্লেন্ডেড এডুকেশন বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২’-শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), এটুআই এবং বাংলাদেশ আ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোরডেবল ইন্টারনেট (এফোরএআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আবু বকর ছিদ্দীক ও এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসি’র চেয়্যারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং এটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের দায়িত্বও রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে ডিজিটাল সংযোগ ও মানসম্মত কনটেন্ট অপরিহার্য। ডিজিটাল কনটেন্ট মানে শুধু পাঠ্যসূচির পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা নয়, কনটেন্ট অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। প্রচলিত শিক্ষা শ্রেণিকক্ষ থেকে ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন করা আবশ্যক। ডিজিটাল সংযোগের মহাসড়ক তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও ফলপ্রসূ হবে না। ডিজিটাল শিক্ষার জন্য শিক্ষকদেরও ডিজিটাল উপযোগী দক্ষতা প্রদান করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিজিটাল শিক্ষা প্রদানের উপযোগী করতে না পারলে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগ স্থাপন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছি। দেশের দুর্গম অঞ্চলে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করছি।

ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আবু বকর সিদ্দিক তার বক্তব্যে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনসহ গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ডের মূল কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রেখে গ্রাহক পর্যায়ের কার্যক্রম বেসরকারি খাতে প্রদান করা যেতে পারে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থী যাতে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় সেজন্য ডিজিটাল ও গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার সংমিশ্রনে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২ এর আলোকে পরবর্তীতে ১০ বছরে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি আমাদের দেশের সাড়ে চারকোটি শিক্ষার্থী এবং ১০ লাখ শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথের চাহিদা মাথায় রেখে আমাদের ২০২৫, ২০৩০ ও ২০৪১ সালের পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীসহ সকলের জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্রডব্যান্ড নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভ জি সম্প্রসারণ শুরু হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২-এ ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাস্তবায়নে ডিজিটাল কানেক্টিভিটির স্থাপনের গুরুত্ব বিষয়ে বিশদ উপস্থাপনা প্রদান করেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি: জে: মো: নাসিম পারভেজ। তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপনের পরিকল্পনায়  সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাস্তবায়নে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের গুরত্ব, সার্বক্ষণিক কারিগরি জনবল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, সেবার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট (এফোরএআই) এর জাতীয় সমন্বয়ক শহীদ উদ্দিন আকবরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান, বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব সুব্রত রয় মৈত্র, এফোরএআই-এর হেড অব এশিয়া প্যাশিফিক অঞ্জু মঙ্গলসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এটুআই, এফোরএআই এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন