বিডাব্লিউআইটি’র নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন ও বাংলাদেশ উইম্যান ইন টেকনোলজি (বিডাব্লিউআইটি)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সবখাতেই রয়েছে নারীর শক্তিশালী অংশগ্রহণ। নেতৃস্থানীয় পর্যায়গুলোতেও জায়গা করে নিচ্ছে নারীরা। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ অন্য যেকোন সময়ে তুলনায় বেশি। আর এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্র ইচ্ছা এবং একযুগ আগে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে একজন নারী ও একজন পুরুষকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্যোগ। তবে এখানেই থামা নয়, আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। নিজেদের দক্ষতা ব্যবহার করে  প্রযুক্তিখাতের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

সোমবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় গুলশানের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন ও বাংলাদেশ উইম্যান ইন টেকনোলজি (বিডাব্লিউআইটি)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি মি. ব্রায়ান শেলার, বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক, বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সুপর্ণা রায় এবং বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরা জুবেরি হিমিকা।

নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আছিয়া খালেদা নীলার সঞ্চালনায় দুইপর্বের এই আয়োজনের শুরুতে বক্তব্য দেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।

নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ হতে স্বাগত বক্তব্য দেন নবনির্বাচিত সভাপতি রেজওয়ানা খান। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানটি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট কিংবদন্তি লুনা শামসুদ্দোহাকে উৎসর্গ করেছি যিনি একজন বাংলাদেশী টেক উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক লিমিটেডের প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে ২০১০ সালে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ উইম্যান ইন টেকনোলজি (বিডাব্লিউআইটি)। সেসাথে প্রযুক্তিতে মেয়েদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে, তাদের ক্ষমতায়ন এবং এগিয়ে যেতে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত পদপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করেছেন। আমরা তাঁর উত্তরাধিকারী হতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবতী মনে করছি। তাঁর সৃষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের সবক্ষেত্রে সেরা কাজটা করার চেষ্টা করব।

দ্বিতীয় পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন নব নির্বাচিত কমিটির সহ সভাপতি রুমেসা হোসেইন। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে  প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে আজকের এই অর্জনের যাত্রা শুরু হয় ১২ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে একজন নারী ও একজন পুরুষকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি খাতে নারী-পুরুষ অনুপাত সমান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি আরও বলেন, আইসিটি বিভাগ সব সময় নারীবান্ধব। তথ্যপ্রযুক্তিতি নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকার শিপাওয়ারের মতো উদ্যোগের আওতায় প্রায় ১০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। এছাড়াও হার পাওয়ারের মাধ্যমে ১২শ নারী উদ্যোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে সিড মানি দিয়েছি। আইসিটি ডিভিশনের আওতায় যতগুলি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আছে, প্রত্যেক জায়গায় নারীদের জন্য ৩০% কোটা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেখানে নূন্যতম নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে টার্গেট দিয়েছেন, দেশের আইটি সেক্টরে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সেসাথে ২৯৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ইকনোমিতে  নারী এবং পুরুষে সমান সমান অংশগ্রহণ থাকবে।

এছাড়াও পাঠ্যক্রম থেকে বৈষম্যমূলক চিন্তা দূর করতে গার্হস্থ্য শিক্ষার মতো পাঠ উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় মেয়েদের চিকিৎসক ছাড়া আন্যান্য পেশায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।  একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নারীদের সহজ ঋণদেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বক্তব্যে ব্রায়ান শেলার বলেন, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ ইতিবাচক এবং আমেরিকাতে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কাজে বিডাব্লিউআইটিকে আমরা সহায়তা দেবো। 

বক্তব্যে রাসেল টি আহমেদ বলেন, আমাদের মেয়েরা কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগী এবং প্রতিশ্রুশীল। নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তারা নিজের জায়গা নিজেরাই তৈরি করে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য গর্বের। তাদের এগিয়ে চলায় যেকোন সহায়তা দিতে বেসিস পাশে থাকবে।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরি হিমিকা এবং বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সুপর্ণা রায়।  

অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ইক্যাব-এর সহসভাপতি সিহাব উদ্দিন শিপন, বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ।

অনন্যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নব নির্বাচিত কমিটির সহ সভাপতি (একাডেমী) ড. নোভা আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক ড. সেলিনা শারমিন, অর্থ সম্পাদক নাসমুস সালেহীন, পরিচালক নাজনীন নাহার, কানিজ ফাতিমা, রিম শামছুদ্দোহা, ফাতেমা আকতার এবং ড. ফারনাজ নারিন নুর প্রমুখ।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন