বেসিস সভাপতির ৩/৩ ফর্মুলার মাধ্যমে ২০৩১ সাল নাগাদ ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব

ছবিতে: বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ‘২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বেসিস বিশ্বাস করে, শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা সম্ভব। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়া এই তিনটি স্টেকহোল্ডার সমন্বিতভাবে তিনটি কাজ করলেই সেটি সম্ভব হবে। কাজগুলো হলো- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন দৃড় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, “২০২৫ সাল কিন্তু খুব দূরে নয়, কাল বাদে পরশু। ২০৩১ সাল কিংবা ২০৪১ সালও খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনা। আমরা যেনো সেই সম্ভাবনার নৌকাটাকে মিস না করি।

বেসিস সভাপতি আরও বলেন, এবারের বেসিস সফটএক্সপো দেশের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী। সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতের উদ্যোগে এমন বৃহৎ পরিসরে কোনো তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার পাশাপাশি সম্ভাবনাকে তুলে ধরা। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রণী ভূমিকাতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয়ের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করা। এক্ষেত্রে একমাত্র শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে বেসিসই পারবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে।”

‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হওয়া বাংলাদেশের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩’ উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই আমাদের সফটওয়্যার নির্ভরশীলতা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বেসিসের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে বলে আশা করি। বেসিস সভাপতি ৫ বিলিয়ন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, সরকারি সহায়তা এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। তিনি তিনটি খাতকে একটি ছাতার নিচে আনতে বলেছেন। এক্ষেত্রে আগামীতে বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যদি এই প্রস্তাব রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হয় তবে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সেটা বিবেচনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ই-ফাইলিং, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ জাতীয় সংসদের ডিজিটালাইজেশনে কাজ করেছে বেসিস।  ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নামে চারটি স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রেও বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা অব্যহত থাকবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামার হানিফ উদ্দিন মিয়ার কোডিং থেকে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের যাত্রা। এখন এইখাত বহুগুন সমৃদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রফতানি বিকেন্দ্রীকরণের কথা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতই একমাত্র খাত যেখানে শুধুমাত্র মেধার মাধ্যমে শতভাগ ভ্যালুয়েশন সম্ভব। আমাদেরকে দুটি জায়গায় কাজ করতে হবে, একটি হলো মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও আরেকটি হলো শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাত যে করমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে সেটির সময় বৃদ্ধির জন্য বেসিসসহ আইসিটি খাতের ৫টি সংগঠনকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইসিটি এখন অন্যতম শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বর্তমানে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি ৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করতে সরকারি ও বেসিস যৌথভাবে কাজ করছে। রফতানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধনে আইসিটি বিভাগের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে পলক বলেন, এক লাখ ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রবলেম সলভার তৈরিতে প্রাথমিক থেকেই কোডিং শেখানো হচ্ছে। বেসিস সদস্যদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশের প্রয়োজন মেটাতে এআই ও মাইক্রোচিপ তৈরির কাজ করছে। এখন রোবটিক্স ও সাইবার সিকিউরিটিতে নজর দিতে বেসিস সদস্যদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের সফলতা নির্ভর করবে বেসিসের সফলতার ওপর।

বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান জানান, “বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মেটার্ভার্সসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যেই অগ্রযাত্রা চলমান সেই যাত্রায় বাংলাদেশকেও এগিয়ে নিতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের মেলার স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওয়েলকাম টু দ্য স্মার্টভার্স’। এবারের আয়োজনে ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিজনেস লিডারস মিট ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক পদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অ্যাম্বেসেডর নাইট, মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল ও চাকরির খোঁজ দিতে আইটি জব ফেয়ার এবং ক্যারিয়ার ক্যাম্প, বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন, ফ্রিল্যান্সিং কনফারেন্স, স্টার্টআপ কনফারেন্স, ডেভেলপার্স কনফারেন্স, উইমেন ইন আইটি প্রোগ্রাম, জাপান ডে’সহ নানা আয়োজন থাকছে। এছাড়াও বেসিস সফটএক্সপোতে অনুষ্ঠিত হবে অন্তত ১৮টি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক। যেখানে সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি বেসরকারি নেতৃবৃন্দ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

আয়োজকরা জানান, সফটএক্সপো উপলক্ষে ইতিমধ্যেই দেশের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে সহজেই বেসিস সফটএক্সপোতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বিশেষ শাটল বাস সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট ও কনসার্ট।

সফটএক্সপোতে সরকারি বেসরকারি নীতি নির্ধারক, প্রায় ২০০ জন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বক্তা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীবৃন্দ, বিদেশী প্রতিনিধি দল, দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী এবং আগ্রহী তরুণ-তরুণীসহ ৩ লক্ষাধিক দর্শণার্থী পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন। আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।

এবারের বেসিস সফটএক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীরা বেসিস সফটএক্সপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://softexpo.com.bd/) থেকে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারবেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন