বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে টেলিযোাগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল সংযুক্তি এবং শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর স্মাার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল সংযুক্তি এবং শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর স্মাার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। দেশের মানুষকে ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়কে নিয়ে আসার জন্য দায়িত্ব নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট একদেশ একরেটের আওতায় এনেছি। মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যম সুন্দর সিকদার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ স‌্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেডের চেয়ারম‌্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব-উল-আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবেসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন ও ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারে গৃহীত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের বঙ্গবন্ধু বপন করা বীজ অঙ্কুরিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে চারা গাছে পরিণত হয়। ২০০৮ সালে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিক শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরের বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়-এর দিকনির্দেশনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল সংযুক্তি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক নির্মাণসহ বহুমুখী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিগত ১৪ বছরে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্বভার গ্রহণকালে বাংলাদেশের টেলিডেনসিটি ছিল ৩০ শতাংশ। বর্তমানে ( ফেব্রুয়ারি-২০২৩ পর্যন্ত) এই হার শতকরা ১০৪.৩৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে মোবাইল গ্রাহক ছিল ০৪ কোটি ৪৬ লাখ, বর্তমানে (ফেব্রুয়ারি-২০২৩ পর্যন্ত) তা ১৮ কোটি ২৬ লাখ অতিক্রম করেছে। ঐ সময়ে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল মাত্র ৪০ লখা, বর্তমানে ফেব্রুয়ারি-২০২৩ পর্যন্ত) এ সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। ব্যান্ডউইদথের ব্যবহার যেখানে ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস বর্তমানে তা প্রায় ৪১০০ জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, ১৭ মে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের এক অনন্য দিন, বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পঁচাত্তর পরবর্তী ছয় বছরের লড়াই, দু:খ-কষ্ট, নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম করে বাংলাদেশে পদার্পন করেছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মতো দু:সাহসিক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কর্মসূচি না নিলে আজকের এই বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে দেশে ২জি, ২০১৩ সালে ৩জি, ২০১৮ সালে ৪জি এবং ২০২১ সালে ফাইভ জি প্রচলন করেন।

সভাপতির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, প্রযুক্তি দুনিয়ায় নেতৃত্ব প্রদানকারি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সোপান রচনা করেছেন। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এর দিকনির্দেশনায় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে বাংলাদেশ অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মূল প্রবন্ধে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্মার্ট সংযোগ , স্মার্ট ডিভাইস বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, স্মার্ট প্রোগ্রেস মনিটরিং এবং আরএন্ডডি‘র প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে ডিজিটাল প্রযুক্তি সহজ লভ্য করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ সমূহের ক্ষমতায়নে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির বিকল্প নাই।

ড. মুহাম্মন মাহফুজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এখন ক্লাসরুমের প্রযুক্তি ব্যবহেরের মাধ্যমে শিক্ষক বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারছে। কাজেই শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের বাড়াতে হবে। নাহয় আমরা পিছিয়ে যাবো। আগামীর বিশ্বে বিগ ডাটা এবং ব্লকচেইন ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব তাই আমাদের এখনহ এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
মাহবুব-উল-আলম ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সফলতা অর্জনের চিত্র তুলে ধরেন।

ডাক টিকেট অবমুক্তকরণ এদিকে ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস-২০২৩‘ উদযাপন উপলক্ষ্যে ডাক অধিদপ্তর দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট, দশ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম, পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড এবং বিশেষ সিলমোহর প্রকাশ করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার আজ ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিজিটাল প্লাটফর্ম – এ সংযুক্ত থেকে বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে স্মারক ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন