সফটএক্সপোতে ফ্রিল্যান্সারদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দক্ষতা অর্জনের তাগিদ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক:  বর্তমানে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কী কী স্কিল ডেভেলপ করে দক্ষতার সাথে কাজ করা যায়, একজন ফ্রিল্যান্সারের কী ধরনের বিশেষ স্কিল থাকা জরুরি, আগামী ১০ বছরে এই সেক্টরে কোন কোন বিষয়ে কাজ করা যাবে, কীভাবে, কোথায় কাজ করা যাবে, কোথায় প্রশিক্ষণ নিতে হবে, কেউ কাজ শুরু করে বার বার ব্যর্থ হলে কী করতে হবে এসব বিভিন্ন দিকের দিক-নির্দেশনা নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগান নিয়ে বেসিসের আয়োজনে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’তে প্রদর্শনীর প্রথমদিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ফ্রিল্যান্সার ও খাতসংশ্লিষ্ট বক্তারা তরুণদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেন।

কাজ৩৬০-এর প্রতিষ্ঠাতা এমরাজিনা ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান। তিনি তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশে বলেন, ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। বাইরের দেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা দেশে আয় হয়ে থাকে তার একটা বড় অংশ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আসে। তাই এই পেশাটাকে কোনভাবে ছোট করে দেখা যাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের অর্থ অন্য দেশে পাঠানো যাবে না। অন্য দেশে থেকে অর্থ আনতে হবে। আর সেটা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। আগে ফ্রিল্যান্সিং কাজটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। প্রযুক্তির সুবাদে এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। পরিবেশ, শিক্ষার সুযোগ, ইন্টারনেট সবই সহজ হয়েছে।

তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিংকে আগে তেমনভাবে গুরুত্ব দেয়া হতো না। এখন পেশা হিসেবে নেয়া হচ্ছে। এটা একটা এমন পেশা যেটির মাধ্যমে ঘরে বসে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের কাজ করা যায়। এটাতে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়। হাজার হাজার তরুণরা এ পেশায় আছেন। লাখ লাখ ডলার আয় করছেন। সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।

আইসিটি বিভাগের লার্নিং আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আইসিটি ডিভিশনের সহায়তায় দেশের ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যাত্রাটা শুরু হয় ২০১৪ সালে। তখন শুরুতে যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সময়ের ধারাবাহিকতায় এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশের ফ্রিল্যান্সাররাও এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন সরকার সবকিছুই করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. আনোয়ার হক বলেন, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরকে এগিয়ে নিতে যেসব নীতি-নির্ধারণী কাজ করা দরকার সেগুলি আমরা করার চেষ্টা করছি। আমাদের দেশে সংখ্যার দিক থেকে ফ্রিল্যান্সার অনেক। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের কিছু দুর্নাম রয়েছে। আমাদের অনেক ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজ বিষয়ে দক্ষ না। তারা আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করার মতো দক্ষ না। তাই দেশের তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের কীভাবে দক্ষতা বাড়ানো যায় সে বিষয়গুলি নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আমরা কাজ করছি।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে পেওনিয়ার বাংলাদেশের হেড অব মার্কেট ডেভেলপমেন্ট সঞ্জীব সরকার বলেন, আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে পেওনিয়ার সেবার একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ডলার আনতে টাকা রূপান্তরিত করার সময় পেওনিয়ার সেবাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ফ্রিল্যান্সাররা ডলার থেকে টাকায় রূপান্তরিত করে দেশের আনার ক্ষেত্রে যেসব বাধা, সমস্যা ‍মুখোমুখি হয়ে থাকেন সেসব বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

একজন ফ্রিল্যান্সার কীভাবে ফিল্যান্সিং করেন, কোথায় করেন, সফল ফ্রিল্যান্সারের কী কী গুণাবলী থাকে, আগামী ১০ বছর এ সেক্টরে কোন কোন বিষয়ে ফিল্যান্সিং করা যাবে, ফিল্যান্সিং ক্যারয়িারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি মাহফুজ রহমান।

নিজল ক্রিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান নিলভ সেমিনারে নিজের ফিল্যান্সিং জীবনের শুরু থেকে বর্তমান অবস্থায় আসার গল্পটি সংক্ষেপে তুলে ধরেন। ফটোগ্রাফি থেকে ভিডিওগ্রাফি করে আজ তিনি কীভাবে সফল হয়েছেন সে অনুপ্রেরণার কথা ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও সেমিনারে বক্তব্য দেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর যুগ্ম সচিব কামরুন নাহার সিদ্দিকা, অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার বাংলাদেশ কমিউনিটি লিডার মো. জাহিদুল ইসলাম নীল, সফল ফ্রিল্যান্সার ও আফদল-এর সিটিও আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং ফাইবার ও আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসের টপরেটেড ফ্রিল্যান্সার গোলাম কামরুজ্জামান প্রমুখ।

চার দিনব্যাপী বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। সব ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই আয়োজন। দর্শনার্থীরা যাতে সহজেই বেসিস সফটএক্সপোতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বিশেষ শাটল বাস সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট ও কনসার্ট।

এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন। আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।

এবারের বেসিস সফটএক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীরা বেসিস সফটএক্সপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://softexpo.com.bd/) থেকে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারবেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন