মুজিববর্ষে ২ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে এককালীন সিড-মানি দিবে আইসিটিডি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরি শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এনডিসি এবং বাংলাদেশ পুলিশ-এর মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ।

জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এমপি, বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে নারী-পুরুষের বৈষম্য না করা। আমাদের সন্তানদের মধ্যে উদার মানসিকতা তৈরির শিক্ষাটা পারিবারিকভাবে দিতে হবে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দুই হাজার নারী উদ্যোক্তাকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সিড-মানি হিসেবে নন-রিফান্ডেবল ফান্ড আইসিটি ডিভিশনের ইনোভেশন ডিজাইন অনটারপ্রেনিউরশিপ একাডেমি থেকে প্রদান করা হবে। এই দুই হাজার উদ্যোক্তাকে স্বনির্ভর করতে ১০ কোটি টাকা দিয়ে তাদেরকে আমরা সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই। শুধুমাত্র বড় বড় বক্তব্য ও বাণী দিয়ে আমরা ব্যক্তি ও পরিবার জীবনে যদি নারীকে সম্মান না দেই, নারীর স্বাধীনতার সুযোগ না দেই, তাহলে কখনোই সমাজে পরিবর্তন আসবে না। ব্যক্তি, পরিবার ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিশু-কিশোর ও আমাদের সন্তানদের মধ্যে নারী-পুরুষের বিভেদ তৈরির সুযোগ না দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, সারাদেশে স্থাপিত হাইটেক পার্কগুলোতে যে সব প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে তাতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩০ ভাগ নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে নারীরা স্বাভাবিকভাবেই বেশি মাত্রায় আন্তরিক হয়ে থাকে। দেশের আইসিটি খাতে জড়িত জনশক্তির মধ্যে নারী রয়েছেন প্রায় ১৬ ভাগ এবং সংখ্যাটি ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। নারীদেরকে আইসিটি খাতে আরও বেশি অনু্প্রাণিত করতে তাদের ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক নারী কর্মীবাহিনী তৈরির আহ্বানও জানান তিনি।

ডিজিটাল মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশ-এর গৃহীত উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, করোনার সময়ে অনলাইনে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা ঈর্ষণীয় হারে বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন। 

এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, বলেন, সারাদেশে স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সাথে আইসিটি বিভাগ কর্তৃক ‘শী পাওয়ার’সহ এমন অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নারীদের অসামান্য অবদান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইসিটি খাত নারীদের উৎসাহ দিতে অনেক ইনক্লোসিভ ওয়েতে এগিয়েছে। আমরা যদি নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে আরও বেশি কাজ করতে পারি তবে দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে যেতে পারবে, বলেও জানান তিনি।

এছাড়া অনলাইন প্যানেল আলোচকগণ বাংলাদেশে ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুয়েশনে জেন্ডার গ্যাপ কমাতে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে জেন্ডার গ্যাপ কমানোর ক্ষেত্রে নেয়া প্রযুক্তিগত উদ্যোগ ও কর্মজীবী নারীদের জন্য বিদ্যমান পরিবেশ, সুযোগ ও সামাজিক বাস্তবতায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লব-বান্ধবকতা নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি মিজ শমী কায়সার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কর্মজীবী নারীদের বিশেষ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভবানার বিষয় তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মিজ সেলিনা পারভেজ, যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), এটুআই এবং নারীকে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে এটুআই বা ডিজিটাল সেন্টারগুলো কি ভূমিকা রেখেছে এবং এক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে সে সম্পর্কে তুলে ধরেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান পিএএ।

অনলাইন প্যানেল আলোচনায় মিজ শোকো ইশিকাওয়া, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইউএন উইমেন; মিজ নিহাদ কবির, সভাপতি, এমসিসিআই; আনীর চৌধুরী, পলিসি অ্যাডভাইজর, এটুআই; মিজ ফারহানা এ রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি, বেসিস; সোনিয়া বশীর কবির, ফাউন্ডার, এসবিকে টেক ভেঞ্চার অ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশন; ডা. ফাহরিন হান্নান, প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা কাস্ট (ঢাকা হেলথকেয়ার); এবং মিজ নীলা চৌধুরী, উদ্যোক্তা, বড়াইগ্রাম, নাটোর; আলোচক হিসেবে তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন।

এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন