বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট গেমিং অ্যাপ ‘হাউজ্যাট- মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল” এর উদ্বোধন 

অ্যাপটি উদ্বোধন করলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল সম্পূর্ণ বাংলাদেশে তৈরি প্রথম লেজেন্ডারী ক্রিকেট গেমিং অ্যাপ- হাউজ্যাটমুশি দ্য ডিপেন্ডেবল”।

আজ ১ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার বিকেলে হোটেল আমারি ঢাকা-তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য তারকা মুশফিকুর রহিম এর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে এই অ্যাপের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গেমিং অ্যাপটির নির্মাতা ও উদ্যোক্তা কেপিসি এন্টার প্রাইজের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান, গেমিং অ্যাপটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও টারটেইল সলিউশনসের চেয়ারম্যান খান রিফাত সালাম এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি বলেন “আমি খুবই খুশি এবং চমকপ্রদ যে বাংলাদেশে এত সুন্দর গেইমস তৈরি করা হয়েছে। আমি যখন এই গেমিং অ্যাপটি উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ পেলাম তখন জানলাম, বাংলাদেশ দেশের ছেলেরা একটা গেমিং অ্যাপ তৈরি করেছে। আমি দেখলাম এটা একটা বিশ্ব মানের গেম। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, যেভাবে মুশফিকুর রহিম যেভাবে আমাদের দেশকে অনেক জয় এনে দিয়েছেন। আগামী দিনে তার নেতৃত্ব গেমিং বিশ্বেও আমরা নেতৃত্বে দিতে পারি। আমি এই প্রত্যাশা করছি। তিনি জানান, অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের গেমিং -এর বাজার তৈরি হবে এবং লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এজন্য এরইমধ্যে আইসিটি ডিভিশন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, একটা দেশে গেমিং ইন্ডাস্ট্রিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেটের সাবস্ক্রাইবার। আমাদের সৌভাগ্য যে ১২ বছর আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর ভিশন ঘোষনা করেন। ঐ সময় বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৬ লক্ষ যা বর্তমানে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প পূরণের আমরা চূড়ান্ত বছরে অবস্থান করছি তখন এই সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সেটা এমনিতেই সম্ভব হয় নাই। তিনি আরো বলেন, এক সময় ইন্টারনেটের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা প্রতি এমবিপিএস এবং ইন্টারনেট ঢাকার বাইরে ছিলনা। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌছে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধু মোবাইলে থ্রি-জি থেকে ফোর-জি নয়, আমাদের ফিক্সড ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি অর্থাৎ আইএসপি এর ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীর (আইএসপি) সংখ্যা প্রায় ১৭০০ এরও বেশি। যার ফলে একদিকে ১৭ কোটি মানুষের ১৭ কোটি সিম কার্ড, ১২ কোটি মোবাইল, প্রায় ৬ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা বর্তমানে রয়েছে বাংলাদেশে। এমনকি স্যামসং, ওয়াল্টন, সিমফোনি থেকে শুরু করে প্রায় ১০ টি মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলাদেশে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৮০ শতাংশ মোবাইল ফোনের চাহিদা পূরণ করছে দেশিয় কোম্পানি এবং একইসাথে প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি মোবাইল ফোন বিক্রি করছে।

অনুষ্ঠানে মুশফিকুর রহিম বলেন “আমার নামে যখন একটা গেইম শুরু হলো তখন আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। আমার মনে হচ্ছে এই গেমের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন একটা যুগের সূচনা হচ্ছে। আমি সেই আশাই করছি। এর মাধ্যমে সাজিদ ভাই আর বাকিরা যে সবাইকে একটা সুস্থ্য বিনোদনের সুযোগ করে দিয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এই গেমস থেকে প্রাপ্ত অর্থের দুই শতাংশ মুশফিক ফাউন্ডেশনে যাবে যা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।”

বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আমিনুল হাকিমও আশাবাদী। তিনি বলেন “ যারা গেম ডেভলপার, আমি তাদের সবসময় এগিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তাইতো গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন কোন মানুষ গেইম ডেভেলপমেন্টে এগিয়ে যেতে পারে, আমরা সর্বস্তরে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি করেছি।

গেমিং অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান বলেন “আর কিছু দিনের মধ্যেই মাল্টি প্লেয়ার গেম হয়ে যাবে মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল। তখন আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের সাথে কানেক্ট করতে পারবো। এই গেমসটা বানিয়েই আমরা এখানে থেমে থাকবো না। আমরা আগামীতে আরও নতুন কিছু আপনাদের উপহার দিবো। আমরা এই গেমিং অ্যাপ নিয়ে টুর্নামেন্ট রাখবো। কেউ যদি টুর্নামেন্ট জিতে, তাহলে আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করবো, পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকবে।”

অনুষ্ঠানে গেমিং অ্যাপটির সহপ্রতিষ্ঠাতা, টারটেইল সলিউশনসের চেয়ারম্যান খান রিফাত সালাম জানান, “এই গেমের পেছনে ১৮ মাসের রিসার্চ কাজে লেগেছে। নিরলম পরিশ্রম করেছে বাংলাদেশের আট গেইম ইঞ্জিনিয়ার। টার্টেল গ্রুপ বিভিন্ন দেশে কাজ করছে এখন। তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বাজার হয়ে যাবে, তখন যেন অন্তত ১ শতাংশ আমাদের দেশের কন্ট্রিবিউশন থাকে।”

মুশফিকুর রহিমকে ব্র্যান্ডিং করে গেমিং অ্যাপটি যৌথভাবে তৈরি করেছে কেপিসি এন্টারপ্রাইজ ও টারটেইল সলিউশনস। প্রতিষ্ঠান দুটির ৮জন প্রোগ্রামার প্রায় ৫মাস ধরে তৈরি করেছে এই অ্যাপটি। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। গেমিং অ্যাপটিতে ক্রিকেটের প্রায় সবধরনের ব্যাটিং স্ট্রোক এবং বোলিং অ্যাকশান  যুক্ত করা হয়েছে। রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মোডিউল: জেনারেল, মাল্টিপ্লেয়ার এবং লিজেন্ডারি মোড।জেনারেল মোডে একজন ইউজার বেছে নিতে পারবেন প্রতিপক্ষ দেশ; যার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন তিনি। মাঠে নামবেন মুশফিক হয়ে। বেছে নিতে পারেন পছন্দের টুর্নামেন্ট, খেলার মাঠ। আছে দিন-রাতের ম্যাচ, আবহাওয়া, টস, রিভিউ সিস্টেম, থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত এবং ধারাভাষ্যকারের বর্ণনা।সব মিলে শতাধিক অপশন আর ফাংশন। ঘরে বসে মাঠের অনুভূতি দেবার জন্য যুক্তকরা হয়েছে হাইডেফিনেশন গ্রাফিক্স। গেমটির মাল্টিপ্লেয়ার মোডে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সুযোগ আছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে থাকা বন্ধুদের নিয়ে সেখানে চার বা আট জনের টিম তৈরি করা যাবে। তারা নিজেদের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে এবং চাইলে সেটা সরাসরি নিজের ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারবে।তবে হাউজ্যাট-মুশি দ্য ডিপেন্ডাবলের সবচেয়ে আকর্ষনীয় মোড হলো লিজেন্ডারি মোড। তারকা মুশফিকুর রহিম তার ক্যারিয়ারে এমন অনেক ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তিনি প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটি একাই জিতিয়ে এনেছেন। লিজেন্ডারি মোডে একজন ইউজার এমন একটি জায়গা থেকে খেলা শুরু করবেন যেখান থেকে জিতে আসা বেশ কঠিন। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জটি মাথায় নিয়ে তাকে মুশফিক হয়ে মাঠে নামতে হবে। রিয়েল টাইম ক্রিকেটের সাথে মিল রেখেই ভার্চুয়াল জগতের জন্য তৈরি এই গেমটি খেলা যাবে অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই।

উল্লেখ্য যে, মানুষের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা পেতে গেমিং অ্যাপটির একটি বেটা ভার্সন গুগল অ্যাপ স্টোরে আপলোড করা হয়। মাত্র ২৪ ঘন্টায় এক লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রিপশন যুক্ত হয় এই অ্যাপটির একং এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ লক্ষ বার খেলা হয়েছে গেমটি।

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন