বাংলাদেশি অভিবাসীদের জীবন বদলে দিচ্ছে “আমিপ্রবাসী”

প্রায় ১০ লক্ষ ডাউনলোড মাত্র কয়েক মাসে, বিএমইটি-র সাথে ৫০% নিবন্ধনের হার, অভিবাসী শ্রমিকদের টিকাদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া, বিদেশি রেমিট্যান্সের ধারা বজায় রাখার জন্য নানা প্রকল্প চালু করা।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক : “আমিপ্রবাসী” ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি বিদেশে কাজ করার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশি নাগরিকদের কাজটি সহজ করছে এবং এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছে। আগ্রহী অভিবাসী ও প্রবাসীদের কাছে অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। চালু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ৯ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। একইসাথে, এটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকও অর্জন করেছে।

৪ লক্ষেরও বেশি বিএমইটি নিবন্ধন

মাত্র আড়াই মাসে অ্যাপটি ৪,২৯, ১৬০ টি সফল ২৪/৭ খোলা থাকা বিএমইটি নিবন্ধনকে অতিক্রম করেছে। এই সংখ্যাটি আমিপ্রবাসী ব্যবহারকারীদের মোট সংখ্যার ৪৪%। বিএমইটি নিবন্ধন, পাসপোর্টের বৈধতা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিডের টিকার নিবন্ধন সহ আরো অনেক ফিচার এই অ্যাপ প্রদান করে থাকে। অ্যাপটি ডেটা নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও পুরো পদ্ধতিটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, বিদেশে চাকরির সুযোগ খোঁজার জটিলতা ও খরচও কমিয়ে আনে।

২৪/৭ অনলাইন নিবন্ধনের সুবিধা

একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যে কেউ ঘরে বসে অ্যাপটিতে নিবন্ধন করে সকল সুবিধা নিতে পারবেন। এতে প্রবাসীরা কম ঝামেলায়, কম ভ্রমণ করে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছেন। ২০২১ এর ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৪০ দিনের কঠোর লকডাউন চলাকালে রেকর্ডসংখ্যক ২ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি বিদেশগামী প্রবাসী ঘরে বসে তাদের বিএমইটি নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। 

২৪/৭ অনলাইন পাসপোর্ট বৈধতার সুবিধা

অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয় চ্যানেলের মাধ্যমে পাসপোর্টের বৈধতার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ করে দিয়েছে। ডিইএমও সেন্টারে উপস্থিত হয়ে শুধু অফিস চলাকালীন কর্মদিবসেই নিবন্ধন করা যায়। অপরপক্ষে, আমিপ্রবাসীর মাধ্যমে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন চ্যানেলের অফ পিক আওয়ার লিঙ্ক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সপ্তাহান্তে এবং সরকারি ছুটির দিনগুলি সহ ২৪/৭ নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। 

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২ ধাপের কোভিড টিকার নিবন্ধন সুবিধা

বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে যে আগ্রহী প্রবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার জন্য বিএমইটি নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে আমিপ্রবাসী অ্যাপ এর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২ ধাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আগ্রহী অভিবাসীদের জন্য একটি বিশ্বস্ত রোডম্যাপ

অ্যাপটির মাধ্যমে বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা একেবারে শুরু থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে জানতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা আবেদন করা, চাকরি খোঁজা, সরকার অনুমোদিত এজেন্টদের সাথে যুক্ত হওয়া, বিমানবন্দরে সহায়তা পাওয়া, অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার, চাকরির সুযোগ খোঁজা, নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিস ও ডিইএমও অফিস খোঁজা সহ আরো অনেক সেবা পাচ্ছেন।

সম্ভাব্য অভিবাসী শ্রমিকদের পুল

আমিপ্রবাসী-র প্রধান অংশীদারদের মধ্যে আছে মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, বিওইওএসএল-এর মতো সরকারি সংস্থা, নিয়োগকারী সংস্থা এবং বিদেশি নিয়োগকর্তা। প্ল্যাটফর্মটি এসব অংশীদারদের সম্ভাব্য প্রবাসী শ্রমিক এবং তাদের দক্ষতা ও পছন্দ বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে। কোনো সম্ভাব্য কাজের সুযোগের জন্য যেকোনো সময় এসব শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে।   

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট বেইস

আমিপ্রবাসী অ্যাপটিতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে শুরু করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলো সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিবাসীদের ক্লায়েন্ট বেস রয়েছে যা নিয়োগকারী সংস্থাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ট্র্যাকারের মাধ্যমে  তাদের চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পেতে সাহায্য করে|

ক্রস বর্ডার পেমেন্ট ট্রান্সফার ফিচারের মাধ্যমে মাইগ্রেশন খরচ কমানো

বৈধ পথে আসা বিদেশি রেমিট্যান্সের প্রবাহ দ্বিগুণ করার জন্য কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে আমিপ্রবাসী। এর জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারিশ্রমিক আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে আমিপ্রবাসী-র মাই ইনফরমেশন ফিচারের মাধ্যমে সবাই প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পাবে এবং অভিবাসনের খরচও অনেক কমে আসবে। বৈধ পাসপোর্টধারী ক্রেতার পরিচয় যাচাই করার জন্য এতে স্বয়ংক্রিয় এপিআই রয়েছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মোবাইল ফিনানশিয়াল সার্ভিস ও রেমিট্যান্সের মতো ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস পাওয়া সহজ হবে।

পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে আসা

এই অ্যাপটি পুরো প্রক্রিয়াতে আরো স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে এবং ধীরে ধীরে দালালদের ওপর নির্ভরশীলতাও কমিয়ে আনবে। তাছাড়া, দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম বৃহৎ অবদানকারী গোষ্ঠীকে একটি ডিজিটাইজড প্রক্রিয়ার মধ্যেও নিয়ে আসছে। তাদের নিরাপত্তা এই অ্যাপের প্রধান চিন্তা। বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহলের ফেরত পাঠানোর চেষ্টার পরেও আগ্রহী অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন আরো সহজ করার জন্য আমিপ্রবাসী কাজ করে যাবে।

প্রবাসীকল্যাণ  মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং থেইন সিস্টেমস এর যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এই অ্যাপ চালু করা হয়। দেশের যেসব মানুষদের প্রায়ই অবজ্ঞা বা হয়রানি করা হয়, তাদের জন্য আমিপ্রবাসী একটি সময়োপযোগী ও অতিপ্রয়োজনীয় উদ্ভাবন। রেলওয়ে

টিকেট বা হজ নিবন্ধনের মতো সার্ভিস চার্জ মডেল অনুসারে তৈরি এই অ্যাপটি সরকারি মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি থেকে কোনোরকম বিনিয়োগ ছাড়াই তৈরি হয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন