‘ফোরাম’র ইশতেহার ঘোষনা : বিজিএমইএ’র সকল কার্যক্রম ইআরপির অধীনে পরিচালিত হবে

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: আগামী ৪ এপ্রিল দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২১-২০২৩ সালের দ্বিবার্ষিক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ‘ফোরাম’। ভোটে ফোরাম জয়ী হলে পোশাক মালিকদের উন্নয়নে বীমা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে।

পাশাপাশি বিজিএমইএ ডিরেক্টরদের তিন মাস পর পর পারফরমেন্সের মূল্যায়ন করা হবে। ডিরেক্টররা যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদস্যদের অনুসন্ধানের জবাব দেয় সেই নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিজিএমইএ গড়তে পুরো কার্যক্রমকে ইআরপির অধীনে আনা হবে।

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষে ‘ফোরাম’র ইশতেহার ও সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতি দেন পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা। এসময় বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক, ফোরামের প্যানেল লিডার এ বি এম সামছুদ্দিনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ফোরাম প্যানেল ইশতেহারে নেতারা বলেন, আমরা আসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফিজিক্যাল, ভার্চুয়াল ও হাইব্রিড পদ্ধতিতে দূতাবাসকেন্দ্রিক রোডশো করা হবে। নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে অডিও-ভিজুয়্যাল ও ইনফোগ্রাফিক তৈরি করে তাৎক্ষণিক প্রচার করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতি ভবন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গার্মেন্টসসহ রফতানিযোগ্য অন্যান্য পণ্যের গ্যালারি তৈরি করা হবে। যাতে ভ্রমণরত বিদেশি অংশীজন আমাদের রফতানিযোগ্য পণ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সহজীকরণে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচবার মেয়াদে উত্তীর্ণকরণ। নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে সিএ ফামের্র অডিট রহিতকরণ। প্যাকিং ক্রেডিটের সুদহার কমানো এবং সময়কাল বাড়ানো। কাস্টম ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে মাসিক মিটিংয়ে ভিত্তিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানিতে মূসক বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া। কারখানা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত অংশের জন্য আমদানি শুল্ক দেয়া। আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ উপকরণ সংক্রান্ত অঙ্গিকারনামা অবমুক্তকরণ।

তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠানের রফতানি করা পণ্য কারানাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামাীরর কারণে ক্রেতা ফেরত পাঠালে সেই পণ্য সহজ শর্তে খালাস ও পুনঃরফতানির মেয়াদ বৃদ্ধিকরণের উদ্যোগ নেয়া। ইপিজেডসহ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম অবাধে ইপিজেডের ভিতরে ও বাইরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শর্তহীনভাব কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ দেয়া। পরিবেশবান্ধব কারখানা করতে অনেক নতুন যন্ত্রাংশকে শুল্কমুক্ত রেয়াতি হারে আমদানির তালিকা প্রদান করা হয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে অমীমাংসিত নিট শিল্পের ওয়েস্টেজ ১৬ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে বৃদ্ধি করার এসআরও খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প

ক্যাশইনসেনটিভ ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শ্রেণিমান ৫ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়নে উন্নীত করার চেষ্টা করা হবে। দেশের সকল প্রকার বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে এসএলই ক্লাস্টার করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট বরাদ্দের সুযোগ রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

রুগ্ন শিল্প ও এক্সিট পলিসি

রুগ্ন বা বন্ধ ১৩৩টি পোশাক কারখানাসমূহকে মূল ঋণ, আয়খাতে নিট সুদ ও মামলা খরচ সমুদয় অর্থ বহনের জন্য বাজেটে ৬৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফোরাম বিজয়ী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দক্ষ ব্যাংকারদের নিয়ে একটি ব্যাংকিং সাপোর্ট সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে। পাশপাশি মালিকদের জন্য বীমা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে।

পণ্যের দাম ও ক্রেতার জবাবদিহিতা

ক্রেতার চুক্তিপত্র পরীক্ষা করে দেয়ার সেবা প্রদান করা হবে। চুক্তিপত্রে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি শর্ত প্রত্যাহার করা হবে। কারখানার রফতানিকৃত পণ্যের পেমেন্ট নিশ্চয়তার জন্য বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করা হবে। রফতানি অপ্রত্যাবাসিত মূল্য আনয়নের লক্ষ্যে বিজিএমইএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসকে সম্পৃক্ত করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সেল তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ক্রেতার জবাবদিহিতা ও মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রবর্তন করা হচ্ছে যাতে পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে আমাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা যায়।

শিল্পের নিরাপত্তা ও নিজস্ব সক্ষমতা

আরওসসিতে শ্ৰমিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আরএসসিকে সকল ধরনের অডিটর কেন্দ্রবিন্দু করা হবে। বর্তমানে র্যাপ অডিটে ২০১টি, বিএসসিই অডিটে ১৫৪টি, সেডেক্সঅডিট ৬৩টি, বেটার ওয়ার্কস অডিটে ১০টি ও ফেয়ার ওয়্যার অডিটে ৮৪টি নথিপত্র তৈরি করতে হয়। আমরা বিজয়ী হলে সব সোশ্যাল অডিটকে একীভূত করার চেষ্টা করব। আরসির মাসিক রিভিউ মিটিং করা হবে এবং সকল পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

বাজার সম্প্রসারণ

দূতাবাসগুলো আরএমজি ডেস্ক স্থাপন করে অপচয় না করে, কীভাবে বি টু বি যোগাযোগ বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা হবে। দেশের অন্যান্য সেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে বড় আকারে আন্তর্জাতিকভাবে সিঙ্গেল কান্ট্রি মেলা করা হবে। যাতে করে আমরা বহুমূখী পণ্যের রফতানি বাড়াতে পারি এবং সব ধরনের ক্রেতার সমাগম ঘটাতে পারি। ব্রাজিলের তুলা দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য নির্দিষ্ট মার্কেটের তথ্য সরবরাহ করা হবে।

প্রযুক্তি সক্ষমতা

যেসব কারখানা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করবে তাদের করপোরেট কর ২ শতাংশ অতিরিক্ত হ্রাসকরণের প্রস্তাব চলমান রয়েছে। কমার্শিয়ালদের জন্য ডিজিটাল আইডি প্রদান করা হবে। বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশনর আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইনসেনটিভসহ বিজিএমইএ এর সকল কার্যক্রমকে ইআরপির অধীনে পরিচালিত করা হবে।

দক্ষতা ও উদ্ভাবন

লোকাল সোর্সিংয়ের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য ইনোভেশন সেন্টারকে কাজে লাগানো হবে। নতুন উদ্ভাবনকে মালিকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ইনোভেশন সেন্টারকে কাজে লাগানো হবে। প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট করার সুবিধার্থে একটি পেশাদার পুল অব ডিজাইন কনসালটেন্ট তৈরি করে সাহায্য করা হবে।

শ্রমিক কল্যাণ

লেবার আরবিট্রেশন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। মিড ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘স্টাফ কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ এবং এটুআই ও ন্যাশনাল স্কিল কাউন্সিলের অধীনের দক্ষতা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ

বিজিএমইএ ডিরেক্টরদের ৩ মাস পর পর পারফর্মের মূল্যায়ন করা হবে। ডিরেক্টররা যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদস্যদের অনুসন্ধানের জবাব দেয় সেই নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিজিএমইএ গড়তে পুরো কার্যক্রমকে ইআরপির অধীনে আনা হবে। বিজিএমইএর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইউএফটি ট্রাস্টি বোর্ডকে পুনর্গঠন করা হবে।

এক্ষেত্রে সাতজন সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবে। বৃহৎশিল্পসমূহ নিয়ে একটি ডিসকাশন গ্রুপ তৈরি করা হবে, যাতে পুরো শিল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বিজিএমইএ পর্ষদ একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। জাগোনিউজ অবলম্বনে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন