প্রায় ২’শ কোটি টাকার অর্ডার নিয়ে উধাও ই-অরেঞ্জ

দেশে ই-কমার্স প্রতারণার নতুন নাম ই-অরেঞ্জ ডটকম। গ্রাহকদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০০ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিচ্ছে না। অর্ডার নিয়ে পণ্য না দেওয়ার টালবাহানার মধ্যেই মালিকানা পরিবর্তন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন মালিকও লাপাত্তা। ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ কার্যালয়ের সামনে প্রায় প্রতিদিনই জড়ো হচ্ছেন এর গ্রাহকরা। ক্রেতাদের বড় অংশই ই-অরেঞ্জের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর সাবেক ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দুষছেন। তাঁরা দাবি করছেন, মাশরাফির বিজ্ঞাপন দেখেই তাঁরা এই অনলাইন শপের ওপর আস্থা রেখে পণ্যের অর্ডার দিয়েছিলেন।

ই-অরেঞ্জে গত ২০ মে ছয়টি মোটরবাইক অর্ডার করেছিলেন মোহাম্মদ রাব্বিল হাসান। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তা ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও পাননি। এখন হন্যে হয়ে ই-অরেঞ্জের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গতকাল সোমবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি সরকারের ই-কমার্স নীতিমালা প্রকাশের আগে ই-অরেঞ্জের ডাবল টাকা ভাউচার কিনেছিলাম। কিন্তু ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ডেলিভারি বন্ধ রেখেছে। গত ১৮ জুলাই ই-অরেঞ্জ একটি ডেলিভারি তারিখ প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে লকডাউনের দোহাই দিয়ে ডেলিভারি বন্ধ করে দেয় এবং জানায় যে লকডাউন শেষ হলে ডেলিভারি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। 

লকডাউন শেষ হওয়ার আগের দিন ১০ আগস্ট তারা আবার নতুন করে ১৬ আগস্ট ডেলিভারি লিস্ট দেবে বলে জানায়। কিন্তু গতকাল ই-অরেঞ্জ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে জানায়, তাদের আগের বাইক সেলারের সঙ্গে তারা চুক্তি বাতিল করেছে। তাই নতুন সেলার পেতে বা নিজেরা বাইক ইমপোর্ট করতে ৪৫-৬০ কর্মদিবস লাগবে। তাই যারা বাইক নিতে চায় তাদের অপেক্ষা করতে হবে, অথবা রিফান্ড রিকোয়েস্ট করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু গ্রাহক রিফান্ড চেয়ে ফোন করায় তারা বলে, ২১ কর্মদিবস লাগবে রিফান্ড পেতে। তখন সরকার নির্ধারিত ১০ দিনের কথা বলায় তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। আমরা বেশির ভাগই ই-অরেঞ্জের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেখেই অর্ডার করেছিলাম। এখন সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কা করছি।’ 

ই-অরেঞ্জের আরেক গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, তিনিও সাতটি বাইক অর্ডার করেছেন। গত জুলাই মাসে অর্ডার ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। এখন তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাচ্ছেন না। তাদের কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারছেন না কার কাছে যাবেন। 

জানা যায়, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অরেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ অনলাইন শপ। এটি ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে অনলাইনে পণ্য দিচ্ছে। লকডাউনে তেমন কার্যক্রম না থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। 

সূত্র জানায়, গত ১১ জুলাই ই-অরেঞ্জের মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমান মালিক বিথী আক্তার। কিন্তু বর্তমান বা সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিন—কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল অফিসের হটলাইন নম্বর এবং সনিয়া মেহজাবিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

গতকাল ই-অরেঞ্জের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫০ জন গ্রাহক বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এরপর গুলশান-২ গোলচক্করে অবস্থান  নেন শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক।

গুলশান থানার উপপরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সম্পর্কিত, এ জন্যই আমরা ক্রেতাদের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কাছে যাওয়ার কথা বলেছি। এর সমাধান তারাই দিতে পারবে।’

বিক্ষোভে আসা গ্রাহক মো. আতাউল্লাহ আরজু বলেন, কম্পানিটি ১৭ আগস্টের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে  ওদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছি। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ই-কমার্স মার্চেন্টদের ব্যাংক হিসাবের বিবরণ চাওয়ার পর বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স সাইটের লেনদেনের জন্য তাদের কার্ডের ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত করে। 

এদিকে গতকাল ফেসবুক পেজে ই-অরেঞ্জ শপ এর গ্রাহকদের জানায়, ‘ই-অরেঞ্জ শপের সঙ্গে ১ জুলাই থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজার চুক্তি শেষ হয়েছে। তাই আমাদের অফিশিয়াল কোনো বিষয়ে তিনি কোনোভাবেই অবগত নন এবং তিনি অফিশিয়ালভাবে কোনো কিছুই আপডেট দিতে পারবেন না।’

ই-অরেঞ্জ আরো বলেছে, ‘যাঁরা পণ্য অর্ডার করেছেন, কিন্তু এখনো পণ্য হাতে পাননি, আশা করি আমরা দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করব এবং আপনাদের পণ্য আপনাদের বুঝিয়ে দিতে পারব। ১৯ আগস্ট থেকে মোটরসাইকেল বাদে সব পণ্য সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।’ কালেরকন্ঠ অবলম্বনে

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন