দুবাই এক্সপোতে এটুআই ও ইপিবি আয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সভাপতিত্বে সেমিনার অনুষ্ঠিত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান দুবাই এক্সপো-২০২০ অংশ হিসেবে ‘গভর্নমেন্ট এজ দ্য ভ্যানগার্ড ফর ইনক্লুসিভ, ব্রেকথ্রো ইনোভেশন: এক্সপিরিয়েন্স ফ্রম দ্য গ্রোবাল সাউথ’- শীর্ষক এক উচ্চ-পর্যায়ের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটুআই ইনোভেশন ল্যাব এর সহযোগিতায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং দুবাইস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে বুধবার এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, এমপি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সেমিনার পরিচালনা করেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, এমপি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যুগোপযোগী অবকাঠামো তৈরি করতে পেরেছি, যা আমাদেরকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়া সুযোগ করে দেবে। গ্লোবাল সাউথের অর্জনগুলো তুলে ধরার জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফরপিএসআই)। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথ এর উন্নয়ন ধারণাগুলো গ্লোবাল নর্থে পৌঁছে দিতে পেরে আমরা (বাংলাদেশ) গর্বিত। তবে, উন্নয়নের দিক থেকে উত্তরাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো। ফলে গ্লোবাল সাউথের সাফল্যের মূলে কাজ করতে পারে নর্থ-সাউথ কোঅপারেশন। সেক্ষেত্রে, সাউথের উন্নয়নে নর্থ-সাউথ কোঅপারেশন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের উন্নয়নের জন্য সাউথ এবং নর্থের সব দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”

অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, “সরকার ব্যবস্থাকে আরো বেশি নাগরিক-বান্ধব হিসেবে তৈরির লক্ষ্যে উদ্ভাবনী মনোভাব প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি অংশীদারদের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনোভেশনের প্রতি মনোযোগ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে আরো দক্ষ এবং নাগরিককেন্দ্রিক করতে আমরা ব্লকচেইন, আইওটি, এআই, বিগ ডেটার মতো ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, “আই-ল্যাব হলো এমন একটি উদ্যোগ যেখানে নতুন নতুন ইনোভেশন নিয়ে কাজ করা হয়। শুধু তাই নয় বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই উদ্ভাবনগুলোকে বাণিজ্যিকীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা সমাজের বড় বড় সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। এছাড়া বিশ্বের উন্নয়নের জন্য সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফরপিএসআই) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে বিনিময় করার জন্য স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীলসহ উন্নত দেশগুলোকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, “শুধু সাউথ-সাউথ কোপারেশন নয়, আমরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জীবনে নতুন নতুন আইডিয়া গুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকার খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

সেমিনারে বক্তারা গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে সাথে নিয়ে একই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে জানান। এপ্ল্যাটফর্ম বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া, সুশীল সমাজ, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সমাধান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্র তৈরি করবে। স্থানীয় উদ্ভাবকদের সমন্বয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরে ধরেন বক্তারা। এই সেমিনার আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিলো ইনক্লুসিভ ইনোভেশন পলিসি ও স্ট্যাট্রেজি উন্নয়নের বিভিন্ন উপায় খোঁজে বের করা। যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন দেশের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোরআইআর) ও সোশ্যাল ইনোভেশন ক্ষেত্রের প্রসারে কাজে আসবে।

সেমিনারের আলোচনায় ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, মাদাগাস্কার, কম্বোডিয়া, লেসোথো এবং রুয়ান্ডা প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে রুয়ান্ডার প্রতিনিধি ইনোভেশন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে রুয়ান্ডার একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলেও জানান। নতুন সব ইনোভেশনের আদান-প্রদান ও এসংক্রান্ত প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরিতে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো উদ্ভাবন এবং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পরিবর্তনের জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারি বিপর্যয় মোকাবিলা করেও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংকে ভিত্তি করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আইসিটি-তে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। ফলে গত এক দশকে বাংলাদেশ মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের 123 শতাংশ বৃদ্ধি অর্জনে করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। সেমিনারে এটুআই-এর আই-ল্যাব এর হেড-অব-টেকনোলজি জনাব ফারুক আহমেদ জুয়েল ‘দ্য ইনোভেশন ইকোসিস্টেম বাই বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এছাড়াও সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), দুবাইস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, এটুআই এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর প্রতিনিধিবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন