ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো উদ্বোধন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এর ফাইল ছবি।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আজ ৪ এপ্রিল, ২০২১ অনলাইনে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ উদ্বোধন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সম্মানিত সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন।

‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এ অংশগ্রহণকারী সম্মানিত উদ্যোক্তাবৃন্দ, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও হার্ডওয়ার প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ২০২১ বাঙালি জাতির জন্য গৌরব ও আনন্দের একটি বছর। আমরা এ বছর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একসঙ্গে উদযাপন করছি। এ শুভক্ষণে আমি প্রিয় দেশবাসী ও দেশের বাইরের সকল প্রবাসী ও বিদেশি বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

বক্তব্যের শুরুতে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে জীবন আত্মোৎসর্গকারী সকল শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা এবং জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে যাঁরা দেশের স্বার্থে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের সকলকে।

দেশ এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই সময়ে ‘ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর আয়োজন ডিজিটাল ডিভাইস ও ইনোভেশন খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরবে বলে আমার বিশ্বাস। এবারের প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য “Make here, sell everywhere” অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি। এই প্রতিপাদ্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও উদ্ভাবনী জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচিত হওয়ার বার্তা। 

দূরদর্শী চিন্তা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিপ্লবে শমিল হওয়ার লক্ষ্যে দেশে বিজ্ঞান, গবেষণা ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভের উদ্যোগ নেন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে একই বছর এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ’ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরত-এ-খুদার নেতেৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। এই কমিশনের সুপারিশে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় বিজ্ঞান, গবেষণা, উদ্ভাবন ও কারিগরি শিক্ষাকে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট আর্থ-স্টেশনের উদ্বোধন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর অন্যান্য খাতের ন্যায় বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের পথ চলাও থেমে যায়। 

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কম্পিউটার আমদানীতে শুল্কহার হ্রাস করেন। মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। এছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। এই রূপকল্প ২০২১ প্রণয়নের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে এর মূল উপজীব্য করায় মূখ্য ভুমিকা পালন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়। 

২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। এই সময়ে দেশে আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশনে গৃহীত অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯% এলাকা মোবাইল কভারেজের আওতায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ১১ কোটির উপরে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে। এমনকি দেশের দূর্গম এলাকায়ও কানেক্টিভিটি পৌঁছে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখন এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই সম্প্রচার কার্যক্রম পারিচালনা করছে। 

সরকার আইসিটি খাতে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা। স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনী কালচারকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি ‘স্টার্ট আপ বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমি আশা করি, এ সকল উদ্যোগের ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থাপনার কারণে দেশের মানুষ ৬শ’রও বেশি সেবা অনলাইনে পাচ্ছে। এ বছরের মধ্যে আরও ১২শ’ সেবার ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। সরকারি অফিসসমূহে প্রায় ৯০ হাজারেরও অধিক কর্মকর্তা ই-নথি ব্যবহার করছে। সরকার দেশে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে ই-কমার্সের প্রসার ঘটেছে। 

সারাদেশে ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ পৌরসভা, ওয়ার্ড ও অন্যান্য মিলে মোট ৬ হাজার ৬৮১টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে তথ্য ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ায় নাগরিকগণ ডিজিটাল সেন্টার থেকে একাউন্ট খোলা, টাকা পাঠানো, সঞ্চয় করা, ঋণ গ্রহণ, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স উত্তোলন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা উত্তোলন, বিভিন্ন ধরণের ফি প্রদান ইত্যাদি আর্থিক কর্মকাণ্ড। 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন