ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইস পণ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে কর প্রত্যাহারের দাবী

মানববন্ধন
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন মানববন্ধন।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিখাতের গ্রাহক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট ২০২২-২০২৩ অর্থ বৎসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ফাইবার, ক্যাবল, মোবাইল হ্যান্ডসেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার তথা প্রযুক্তি পণ্যের উপর আরোপিত নতুন কর প্রত্যাহারের দাবীতে আজ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। মানববন্ধনে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইটার আইএসপিআইবি সভাপতি এমদাদুল হক টেলিফোনে মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বলেন, আমরা গ্রাহকদের এ দাবীর সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।

আমরা চাই সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রান্তিক পর্যায়ে কম মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন ব্রডবেন্ড ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিতে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে যে কর আরোপ করা হয়েছে তার মাধ্যমে সারা দেশে নেটওয়ার্ক সম্প্রাসারন করা ও প্রান্তিক পর্যায়ে কমমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা দূরহ ব্যপার হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট সাহেদা বেগম, স্বপন, শেখ ফরিদ, মোঃ শাজাহান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এমাদুল হক রানা, নাগরিক ভাবনার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুলহাস নাইম ও ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ সহ প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে সারা দেশে ইনফো সরকার ২-৩ এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারন করে যাচ্ছে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় ইতিমধ্যে ট্রায়াল পর্যায়ে ৫জি উদ্বোধন করেছে।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে প্রান্তিক পর্যায়ে নেটওয়ার্ক প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধিকতা তৈরী করার জন্য ব্রডবেন্ড ইন্টারনেটের সেবায় ১০% নতুন কর, সাথে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলে ১০% কর আরোপ কানেকটিভিটি তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি শুধুই করবে না, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় বাধার সৃষ্টি হয়ে দাড়াবে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার তের বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীর হাতেও ডিজিটাল ডিভাইস, দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফিচার ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬১% এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করীর সংখ্যা ৩৯% হলেও বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল হ্যান্ড সেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিভাইস এর সংখ্যা নগন্ন হলেও নতুন করে এ সকল পণ্যের উপর নতুন কর কাঠামো এই সেবা ব্যবহারের বিমুখ করবে।

মুঠোফোনের সিম এর ব্যবহার দিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে আনা সম্ভব না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডিভাইস অর্থাৎ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাব এর মূল্য কমিয়ে মানসম্পন্ন ডিভাইস শিক্ষার্থী এবং সাধারন মানুষদের মাঝে সরবরাহ করা। কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর বৃদ্ধির ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার সুবিধা প্রদান হলেও এর সুফল দেশের জনগণ খুব একটা ভোগ করে না। এর প্রধানতম কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোয়ালিটি অফ সার্ভিস থেকে বাদ পড়া ডিভাইসগুলি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করা হয় এবং মূল্য একেবারে যে কম সে কথা বলা যাবে না। এর পাশাপাশি ব্যাটারি চার্জার সহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে ও কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নেটওয়ার্ক।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ৪০ লক্ষ বলা হলেও মূলত এর ৯০%ই সরকারি-বেসরকারি রাষ্ট্রীয় বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ সেবার গ্রাহক। বাসাবাড়ি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার গত এক বছর যাবত সবেমাত্র বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে এমন সময় এই সেবার ওপর অর্থাৎ প্রকারান্তরে আইএসপি অপারেটরদের উপর যে ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে তার সাথে গ্রাহক পর্যায়ে চলমান ১৫ শতাংশ কর যুক্ত হলে এসেবা দিতে গিয়ে ক্ষুদ্র আইএসপি অপারেটরগুলো যেমন বিলীন হয়ে যাবে তেমনি প্রান্তিক পর্যায়ে এ সেরা নিতে জনগণকে হিমশিম খেতে হবে অন্যথায় এ সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ মুঠোফোন সেবার উপর গ্রাহক লেভেলে ২১.৭৫ শতাংশ করের সাথে অন্যান্য (অপারেটরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ+কর্পোরেট+রাজস্ব ভাগাভাগির+তরঙ্গের উপর কর+বিনিয়োগের উপর )সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ কর গ্রাহক কে দিতে হচ্ছে।

বর্তমানে ভয়েস কল ও এসএমএস কমে যাওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শত কোটি টাকা। আমরা ধরে নিয়েছিলাম এ ক্ষতি পোষাতে হয়তো চলতি অর্থবছরে এ খাতে কর কমানো হবে, কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক কমানো হয়নি নতুন অপারেটর ও বিনিয়োগকারীদের এ খাতে উৎসাহ দিতে বিশেষ সুবিধাও প্রদান করা হয়নি। ফাইভ-জি চালু হয়েছে অথচ এ সেবার সিম ট্যাক্স ,আইওটি ডিভাইস এ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে কর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই।

সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করতে চায় অথচ প্রযুক্তিপণ্যের উপর নতুন করে কর আরোপ করা হয়েছে। উল্টো ফাইবার আমদানির ক্ষেত্রে ও ১০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করেছে। মোটকথা এ বাজেট পর্যালোচনা করলে বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করলেও বাস্তবতা ভিন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে একথা গ্যারান্টি সহকারে বলা যায়।

আমাদের দাবী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে এমন কর প্রত্যাহার করতে হবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন