গ্রাহকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বাড়িয়েছে ব্যাংক-বিকাশ লেনদেন সেবা

বিকাশ অ্যাড মানি

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকিং করার বাধ্যবাধকতা আর নেই। প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে দেশের যেকোনো প্রান্তে গ্রাহক তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা নিজের টাকা নিজেই ব্যবহার করতে পারেন যেকোনো সময়। ব্যাংক এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর মধ্যে আন্তঃলেনদেন সুবিধার কারণে যখন প্রয়োজন তখনই নিজের টাকা ব্যবহারে গ্রাহকের সক্ষমতা ও স্বাধীনতা বেড়েছে বহুগুন। বিশেষ করে করোনাকালে এই সেবাটি গ্রাহকের জন্য নিয়ে এসেছে বাড়তি স্বস্তি।

বিগত ১০ বছরে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বা সীমিত ব্যাংকিং সেবা পাওয়া জনগোষ্ঠিকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক খাতে যুক্ত করতে সফল হয়েছে মোবাইল আর্থিক সেবা খাত। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দেশের বৃহত্তম এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ। আর ব্যাংক-এমএফএস আন্তঃলেনদেন সুবিধা গ্রাহকের আর্থিক লেনদেন সহজ করার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো নতুন সেবা আনার পথ উন্মুক্ত করেছে।

গ্রাহক এখন নিজেই নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশে ‘অ্যাড মানি’ অর্থাৎ টাকা আনতে এবং বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংকে ‘ট্রান্সফার মানি’ অর্থাৎ টাকা জমাও করতে পারেন। বিকাশ অ্যাপের অ্যাড মানি অপশন ব্যবহার করে দেশের যেকোনো ব্যাংকের ইস্যুকৃত মাস্টারকার্ড এবং ভিসা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে মুহূর্তেই এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা আনা যায়। এছাড়া সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি মোট ৩১টি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকেও অ্যাড মানি করা যায়। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় – ছুটির দিন হোক বা মধ্যরাত – দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টাই গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ব্যাংকের শাখা কিংবা এটিএম বুথে না গিয়েও ঘরে বসে যেকোনো সময় অ্যাড মানি করতে পারার সক্ষমতা এনে দেয়ায় বিকাশ অ্যাপ এখন কোটি গ্রাহকের মানিব্যাগে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ৩১টি ব্যাংকের গ্রাহকেরা বিকাশ হিসাবে টাকা আনতে পারছেন। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপ থেকে সহজেই নিজের বা প্রিয়জনের বিকাশ হিসাবে টাকা আনা যাচ্ছে।

অ্যাড মানি সেবার মাধ্যমে মোবাইল ওয়ালেটে টাকা এনে প্রয়োজনে প্রায় ৩ লক্ষ বিকাশ এজেন্টের যে কারো কাছ থেকে ক্যাশ আউট করতে পারেন গ্রাহক। আবার ডিজিটাল অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতেই বিভিন্ন কাজে খরচও করতে পারেন। যেমন, মোবাইল রিচার্জ, সেন্ড মানি, ট্রান্সফার মানি, অনলাইন/অফলাইন পেমেন্ট, সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, অনুদান দেয়া, বেতন পরিশোধ, কর পরিশোধ, রাইড শেয়ারিং সেবার পেমেন্ট, বাস-ট্রেন-লঞ্চ-বিমান ও মুভির টিকেট কেনা, বীমার কিস্তি পরিশোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি সেবার ফি পরিশোধ ইত্যাদির মতো প্রয়োজনীয় সেবার কল্যাণে আরও স্বাচ্ছন্দ্য ও সক্ষমতা এসেছে গ্রাহকদের।

ব্যাংক, কার্ড ও মোবাইল আর্থিক সেবার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগকে দেশজুড়ে দিনদিন আরও বিস্তৃত করছে এবং একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে। গ্রাহক ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান – উভয়েরই ক্যাশ টাকার উপর নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস সমাজ হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে দেশে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার দ্রুত প্রসার ঘটছে এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন সেবা আসবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে বিবেচনায় রেখে গ্রাহকদের জন্য আরো সৃজনশীল এবং সময়োপযোগী সেবা নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিটি ব্যাংক বিকাশ গ্রাহকদের জন্য ১ বছর ধরে সফলভাবে পাইলট প্রকল্প পরিচালনার পর বাণিজ্যিকভাবে ইনস্ট্যান্ট ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু করেছে। এই সেবার মাধ্যমে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা সাপেক্ষে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের জামানতবিহীন ডিজিটাল ন্যানো লোন পাবেন। বার্ষিক ৯ শতাংশ সুদে ৩ কিস্তিতে বিকাশ অ্যাপ থেকেই ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এখন অন্য ব্যাংকগুলো চাইলে নিজেদের সেবা নিয়ে বিকাশের গ্রাহকদের কাছে সহজেই পৌঁছে যেতে পারে।

ব্যাংক-এমএফএস আন্তঃলেনদেনের ক্ষেত্রে আরো একটি উদ্ভাবন হলো বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি’র সেভিংস স্কিম বা সঞ্চয় সেবা। বিকাশ অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকরা এখন যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকেই কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে কাগজ-পত্র বা ফর্ম পূরণের ঝামেলা ছাড়াই ক্ষুদ্র অংকের এই মাসিক সঞ্চয় সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে সঞ্চয়ের কিস্তিও বিকাশ অ্যাপ থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইডিএলসি’তে জমা হয়ে যায়। এদিকে সঞ্চয়ের মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর মুনাফাসহ পুরো টাকা ক্যাশআউট করতে পারবেন কোন খরচ ছাড়াই। ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক প্রায় ১৪ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন এই সেবার আওতায়। বর্তমানে মাসিক ৫০০, ১ হাজার, ২ হাজার এবং ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে সঞ্চয়ী প্রকল্প থেকে নিজের পছন্দমত সঞ্চয় করতে পারছেন। অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশের ৫ কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহকের যে কেউ সঞ্চয় সেবাটি নিতে পারছেন। এসব সুবিধার কারণে এরই মধ্যে সারাদেশের গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সেবাটি। –এসআরসি/০৩এ/২২

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন