তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার তৈরীতে মেয়েদের পাশে থাকাবে ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্প

ইএসডিজিফরবিডি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: প্রযুক্তি খাতে দেশের মেয়েদেরকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো এনাবলিং সাসটেইনেবল গোলস অফ বাংলাদেশ ফর – ২০৩০ (ইএসডিজিফরবিডি) প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান। একই সময়ে এ প্রকল্প থেকে অর্জিত শিক্ষাকে আরো ব্যাপকভাবে প্রসার করার ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ৩ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)।

প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এক পা দু পা করে দেশের সাথে নিজেদেরকেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে আমাদের মেয়েরা। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নারীদের প্রযুক্তি নির্ভর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য এখনো উপযোগী হয়ে ওঠেনি। এই সমস্যাকে সামনে রেখে প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহন আরও সহজ করতে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)-এর হাত ধরে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে এ প্রকল্প। এর আওতায় দেশব্যাপী  বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের তথ্য- প্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে তুলতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, চাকুরির প্রস্ততিমূলক কর্মশালা, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, ইন্টর্নশিপ প্লেসমেন্টসহ বিভিন্ন  কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৭০০০ নারী শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতা পৌছে দিয়েছে বিডিওএসএন।

সমাপনী আয়োজনের শুরুতে এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কানিজ ফাতেমা। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহন ভীষনরকম কম হওয়ার কারন দেশে যথেষ্ট নারী রোল মডেলের অভাব। বিডিওএসএন তার ১৬ বছরের স্টেম (STEM) এবং আইসিটি খাত নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ ঘাটতি পূরনে ভূমিকা পালন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।”

সমাপনী আয়োজনে গবেষণা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেঠোপথ এ প্রকল্পের সফলতা নিয়ে করা গবেষণার সারাংশ তুলে ধরেন। তাদের মতে, ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্পে অংশগ্রহনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের আইসিটি সেক্টরের নারী শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে কাজ করা প্রসঙ্গে নর্থ সাইথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ বলেন, ‘দেশের বাইরে পিএইচডি করার সময় ছোট সন্তানকে সামলিয়ে পড়াশুনা করতে অন্যদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি বলে হীনমন্যতায় ভূগতাম। পরবর্তীতে একটি কন্ফারেন্সে দেখলাম আমার এই দূর্বলতাগুলোকেই সবাই গুন হিসেবে নিয়ে প্রশংসা করছে। মেয়েদের দূর্বলতা গুলোকে গুনে রুপান্তরিত করতে বাংলাদেশে ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্পের মতোই কোনো উদ্যোগ নেয়া হোক আশা করছিলাম। বিডিওএসএন এর মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে’।

আয়োজনের এক পর্যায়ে ইএসডিজি প্রকল্পের একজন অন্যতম অংশগ্রহণকারী পূজা চক্রবর্তী যে বর্তমানে ইতালীতে তার স্নাতকোত্তর করছেন, নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে একটি ক্ষুদে ভিডিও বার্তা পাঠান। সে ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট এর বিজয়ীদের একজন। তাঁর মতে এই প্রকল্প তার প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তথ্য ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। উদ্ভাবনী প্রতিযোগীতা ডেভম্যানিয়ার বিজয়ীদের মধ্য থেকে তাফসির বিনতে মান্নান জানান এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সে নিজের দক্ষতাকে ঝালিয়ে নেবার সুযোগ পেয়েছে । এছাড়াও গার্লস ইনোভেশন ব্যুটক্যাম্পের একজন অংশগ্রহনকারী সামা জামিলা রহীম বলেন, এই প্রকল্প তাকে  জড়তা  ও ভীতি কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

ইএসডিজিফরবিডি

আলোচনার এক পর্যায়ে সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাফায়েত হোসেন এ প্রকল্প সম্পর্কে তাঁর মতামত প্রদান করেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশসেরা আইটি ইন্ডাস্ট্রিগুলো ঘুরে দেখা ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি বিডিওএসএনকে সাধুবাদ জানান।

৩ বছর ৬ মাস ব্যাপী এ প্রকল্পে কাজ করা কর্মীদের মধ্য থেকে রায়হান ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন ‘বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে যে জড়তা কাজ করে তা থেকে তাদের একবার বের করে আনতে পারলে মেয়েদের সাফল্য আর কোনো কিছুই আটকাতে পারবেনা। এই প্রকল্পের সাথে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের’।

সমাপনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পক্ষ থেকে ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট কোওর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান তন্ময় তার বক্তব্যে বলেন, “সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার অনেক পরে গিয়ে এর ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়। তবে ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্পটির একটি অংশই ছিলো এর কার্যকারীতা বিশ্লেষন যা আমার কাছে এ প্রকল্পের অনন্য দিক মনে হয়েছে। এই ধরণের কাজে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আরো সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহী।”

সবশেষে, বিডিওএসএন-এর সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান ইএসডিজিফরবিডি প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে আরও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করে এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, বিডিওএসএন বিশ্বাস করে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের মধ্যে যে যাত্রার সূচনা করেছে তা তথ্য প্রযুক্তি খাতে নারীদের অগ্রসরতায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন