বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের “বিজিবি দিবস-২০২১” উজ্জাপন উপলক্ষে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ১৯/১২/২০২১ইং রবিবার রাজধানীর ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ড সকাল ১১ ঘটিকায় ভার্চুয়ালই সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী । বীজিবি কে সুশৃঙ্খল আধুনিক ত্রিমাতৃক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে পুনঃগঠিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজিবিকে একটি আধুনিক ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিজিবিতে ২ টি অত্যাধুনিক Mi-171E হেলিকাপটার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ ত্রিমাত্রিক বাহিনি’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে । বিজিবি এখন জল এবং আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম । এ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এবং সিমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘ স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাঁকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম ‘ স্থাপন করা হয়েছে । বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ১২ টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ( এসিপি ) ১০ টি রায়ট কন্ট্রোল ভ্যাহিক্যাল , ২৮৭ টি All Terrain Vehicle ( ATঊচ্চ, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২ টি হাইস্পীড বোট , ২ টি ভেহিক্যাল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন সংযোজন করা হয়েছে । এছাড়াও বিজিবির সাংগঠনিক অবকাঠামো হতে অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্র বিলুপ্ত করে তার স্থানে১৪ টি আধুনিক ও যুগোপযোগী অস্র- সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর অভিজানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে সর্বমোট ১,০৩৬ কিঃ মিঃ সীমান্ত সড়ক এলাকায় ৩১৭ কিঃ মি ঃ রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে । সীমান্ত সু রক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্তিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিওপিসমুহ সীমান্তের কাছাকাছি নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ।ভারত ও মায়ানমার সীমান্তে ৪ টি ব্যাটালিয়ান এবং সুন্দরবন এলাকায় ২ টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২ টি বিওপি সৃজনের মাদ্ধমে প্রায় ৫৫০ কিঃ মিঃ অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪০০ এর অধিক কিঃ মিঃ সীমান্তই ইতিমধ্যে ঞ্জর নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে । খুব শীঘ্রই প্রায় ১৫০ কিঃ মি ঃ অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনা হবে ।সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র সহ মোট ৪ টি সৈনিক ব্যারাক সহ মোট ১১৩ টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়ন এর জন্য । ২০০৯ সাল থেকে ৪৫,৩৮৩ জন বিজিবি সদস্যকে পদোন্নতি প্রদান করে রেশন সুবিধা সহ আজীবন রেশন এর সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ।
‘ সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী ‘ হিসেবে বিজিবি একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী সদর দপ্তর বিজিবি , পিলখানায় নব নির্মিত ‘ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র ‘ এর শুভ উদ্ভোধন ঘোষণা করেন ।
প্রধানমন্ত্রী উক্ত আনুষ্ঠানিক কুচকাওাজে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ” বিজবি বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গরে তূলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন । জাতীর পিতার নীতি- আদর্শ অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ বাহিনীকে যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ” বর্ডার গার্ড আইন ২০২১ ” প্রণয়নসহ “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ ” এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে । এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবি বাহিনীকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫ টি রিজিওন, সেক্টর এবং ইউনিট সৃজন করে কমান্ডস্তরে ভারসম্য সৃষ্টি করা হয়েছে ।এ লক্ষ্যে ২০০৯ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে । নতুন ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান ।বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন ও লিংগ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এবং কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশিতকল্পে ২০১৫ সাল হতে মোট ৮৬৮ জন মহিলা সৈনিক নিয়োগ করা হয়েছে । আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ এই বিজিবি বাহিনির জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে । এছাড়া ৮৫০ কোটি টাকা্র মাদক ৬০০ কোটি টাকার চোরা চালান উদ্ধার করে গত এক বছরে বিজিবি ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এম পি এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ সাফিনুল ইসলাম , বিজিবিএম (বার) এনডিসি , পিএসসি আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন । সকাল ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্স ( বিটিসি)- এর মাধ্যমে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ অতিথি হিসেবে বিজিবি তে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজিবি’র কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকে পদক প্রদান করেন । এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোস্তফা কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিজিবি’র আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ – এর মহাপরিচালক শ্রী পংকজ কুমার সিং , আইপিএস সহ ৭ জন ভারতীয় প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।
-আফরোজা সুলতানা /