৮ই অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড শুরু; আয়োজক “বাংলাদেশ”

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-সহ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ১ম বারের মত বাংলাদেশে আয়োজিতব্য “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” আয়োজন করছে

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আজকের যারা শিশু, তারাই হবে ২০৪১ সালের লিডার – পলক তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতি বছরই বিশেষভাবে আয়োজিত হয় “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড (IBCOL)”। হংকং থেকে শুরু হওয়া বহুল প্রত্যাশিত এই অলিম্পিয়াড এবারই প্রথম হংকং এর বাইরে বাংলাদেশে আয়োজিত হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে এই বিশেষ আয়োজনকে ঘিরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) একটি সংবাদ সম্মেলন ৬ অক্টোবর ২০২১, বুধবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ার -এর বিসিসি অডিটরিয়ামে আয়োজন করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণকে ব্রিফ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি।

উক্ত সংবাদসম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” এর চেয়ারম্যান এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম এবং অনলাইনে সংযুক্ত হন হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এর প্রতিটি ফল বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ভোগ করতে পারছে। বিগত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর নেতৃত্বে “আইসিটি খাত” এর চারটি পিলার শক্ত ভিত্তির উপর দাড়িয়েছে। দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি পৌছে গেছে উল্লেখ করে পলক বলেন দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। যারা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে। সারাদেশে সফট্ওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ও বিপিও সেক্টরে ১৫ লক্ষ তরুণ-তরুণীরা কাজ করে আইসিটি শিল্পের অবদান রাখছে। তিনি আরো বলেন, বিগত ১২ বছরে ১৫ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। সরকারের ৫২ হাজার ওয়েবসাইট ১৫ হাজার সেবা প্রদান করছে। আইসিটি শিল্প ১২ বছর আগে মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলারে ছিল বর্তমানে ১.৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পলক বলেন, আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দিষ্ট টার্গেট দিয়েছেন সেটা হল, এখন যে সাড়ে তিন শো বিলিয়ন ডলারের জিডিপি সাইজ এটা ২০৩১ সালে হবে ৭০০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৪১ সালে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এখন আমাদের পোশাক শিল্প থেকে আয়, আমাদের প্রবাসী কর্মীদের আয়, কৃষি ও অন্যান্য যে সকল শ্রমনির্ভর অর্থনীতি শিল্প আছে সেগুলোর সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনা চান, একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ও একটি প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে। আর এ সকল কিছুর জন্য আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি “ব্লকচেইন প্রযুক্তি”। তিনি আরো বলেন যে আমাদের দেশের স্টার্টআপরা অনেক সফলতা পাচ্ছে এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের উপরে বিদেশি বিনিয়োগ এনেছে গত ৫ বছরে। ব্লকচেইন হতে পারে বাংলাদেশের বিনিয়োগের অন্যতম একটি প্রযুক্তি খাত। তিনি বলেন, ব্লকচেইনকে উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্লকচেইনকে তাদের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ব্লকচেইনের মত একটি ভবিষ্যতমূখী প্রযুক্তি সম্পর্কে যাতে এই দেশের কিশোর-কিশোরিরাও জানতে পারে সেই জন্য আমরা শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব আরো নতুন করে আরো ৫০০০ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরো ১০ হাজার পরিকল্পনা আছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের শিশু-কিশোরীদের ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তিতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে দেশে অত্যাধুনিক শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। দেশে ইতিমধ্যে ৮,০০০টি “শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব” স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৫০০০টি “শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব” ও ৩০০টি “স্কুল অব ফিউচার” স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও আগামীতে আরও ১০,০০০টি “শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব” স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে আরো ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। পলক বলেন, আজকের যারা শিশু, তারাই হবে ২০৪১ সালের লিডার। প্রতিটি সেক্টরে তারাই নেতৃত্ব দেবে। আজকের শিশু প্রজন্মকে আমরা যেভাবে গড়ে তুলবো, ২০৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ সেভাবেই গড়ে উঠবে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ জানান যে, ন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশ এর বিজয়ী ১২ টি দল এই আয়োজনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এবং সফলতা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম বলেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এটা এখন আর শহর কেন্দ্রিক নয় বরং গ্রামেও এর সুফল পাচ্ছে এবং অনেকেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ বলেন যে, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড হল একটি গ্লোবাল কম্পিটিশন। এটা আয়োজন করা আমাদের জন্য সত্যিই খুব সম্মানজনক।

তিনি এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারি সকলকে ধন্যবাদ জানান। হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা বাংলাদেশকে এই “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড (IBCOL)” সফলভাবে আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান পাওয়া সম্ভব বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” এর চেয়ারম্যান এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম আয়োজকসহ সকলকে এই আয়োজনে পাশে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশ্বে ব্লকচেইন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং প্রসারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য, প্রতি বছর আন্তর্জাতিকভাবে এই আয়োজনটি করা হয়। তিনি এই আয়োজনের সকল অংশগ্রহণকারিদের ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানান।

এই আয়োজনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “অনুপ্রেরণামূলক ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবন”। এটি একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশ পর্বে “ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ২০২১” -এর বিজয়ী ১২ টি দল এই আয়োজনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে। বিজয়ীদের জন্য সর্বমোট ৪০,০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ এই ইভেন্টে বিচারক এবং বক্তা হিসাবে সংযুক্ত হবেন।

এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় মোট ১২ টি দেশ অংশগ্রহণ করছে: চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ থেকে মোট ৫০ টিরও বেশি দল অংশগ্রহণ করছে। ইভেন্টটিতে যোগ দিতে https://ibcol2021.com/ এ ভিজিট করতে হবে। মূলত আগামী ৮ ই অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” এর যাত্রা শুরু হবে। ৩ দিনব্যাপী এই অলিম্পিয়াড চলবে ১০ অক্টোবর ২০২১, রবিবার পর্যন্ত। এ বছর অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি মোট ৪ টি সেমিনারের আয়োজন থাকছে। সেমিনারগুলি হবে সিবিডিসি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি, ই-গভর্নেন্স, আইডেন্টিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি এবং ফিনটেক বিষয়ে। অনুষ্ঠানসহ সেমিনারগুলো IBCOL এর ওয়েবাইসাইট (https://ibcol2021.com) -এই ঠিকানায় বিশ্বব্যাপী সকল অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-সহ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ১ম বারের মত বাংলাদেশে আয়োজিতব্য “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” আয়োজন করছে। এছাড়াও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে এফবিসিসিআই, বেসিস, আইবিএ, এসিআই লি., ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউথ পলিসি ফোরাম ও একাত্তর টিভি।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন