বাংলাদেশ-ভারত আয়োজিত হ্যাকাথনে বিজয়ীদের মেন্টরিং শুরু

টেকভিশন ডেক্স: শুরু হল সম্প্রতি সমাপ্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজিত জাতীয় হ্যাকাথনের বিজয়ী ১০ স্টার্টআপ নিয়ে মেন্টরিং প্রোগ্রাম। দেশের ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে সমাপ্ত “ন্যাশনাল হ্যাকাথন অন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিস” এর বিজয়ী দলগুলোর প্রায় ৩০ জন উদ্ভাবক মাসব্যাপী এই মেন্টরিং প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে অনলাইনের মাধ্যমে এই মেন্টরিং প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হবে এবং এর আয়োজন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)” এবং ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড”। টেক মাহিন্দ্রা’র মেকারস্ ল্যাব এর একটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ টিম বাংলাদেশের এই ১০ স্টার্টআপকে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, বিভিন্ন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ডিজাইন থিংকিং এবং ৮টি বিষয়ে সিএক্সও ট্রেইনিংসহ মোট ১৭ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেন্টরিং করবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আগামী ২০২১ এর মার্চ মাসে বাংলাদেশের এই উদ্ভাবকগণ ভারতে টেক মাহিন্দ্রা’র মেকারস্ ল্যাবে সরাসরি প্রশিক্ষণ নিবে। পরবর্তীতে প্রকল্পসমূহের ম্যাচুউরিটির পর “টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড”-এর আওতাভুক্ত মার্কেটিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা করে তাদেরকে গ্রোথ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজিত হ্যাকাথনে বিজয়ী স্টার্টআপদের নিয়ে ৯ আগষ্ট ২০২০ রবিবার এই মেন্টরিং প্রোগ্রামের উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। অনলাইনে আয়োজিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একটি বিশেষ অডিও-ভিজুয়াল প্লে করার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এন এম জিয়াউল আলম বলেন “ভারত তথ্য-প্রযুক্তিতে অনেক ভালো করছে। আমরা জানি যে, ভারত তথ্য প্রযুক্তিতে দুটি প্রধান উপাদানে সমন্বিত একটি শিল্প। এই দুটো উপাদান হচ্ছে আইটি পরিষেবা এবং বিপিও। এই খাতটিতে ভারতের জিডিপিতে তার অবদানকে ১৯৯৮ সালে ১.২% থেকে বাড়িয়ে ২০১৭ সালে ৭.৭% এ উন্নীত করতে পেরেছে যার অর্থ ভারত আইটি খাতে অত্যন্ত ভাল করছে। একই সাথে বাংলাদেশও তথ্য-প্রযুক্তিতে অসাধারণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে, এই মেন্টরিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্টার্টআপরা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো জ্ঞান লাভ করবেন এবং একই সাথে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের এই আয়োজক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতের টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেডের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স এর সভাপতি সুজিত বক্সী বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে এই আয়োজনটি সফল করবার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন টেক মাহিন্দ্রার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দক্ষ টিমের দ্বারা মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকাথন থেকে প্রাপ্ত এই স্টার্টআপদের গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান থাকবে।

এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, গ্লোবাল ইনোভেশন প্রধান নিখিল মালহোত্রা এবং অনলাইন অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন iDEA প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক। টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেডের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির এভিপি, ফাংশন হেড অব ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট শ্রীনি চেটলাপল্লি, হেড অবস্টার্টনেট অ্যান্ড ক্যাম্পাস কানেক্ট উমেশ কাদ, কাস্টমার রিলেশন বিভাগীয় প্রধান ও মেকারস্ ল্যাবের প্রতিনিধি আকাশ দলাস, এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার দেবাশীষ মিত্র। আরো উপস্থিত ছিলেন iDEA প্রকল্পের উপ-পরিচালক কাজী হোসনে আরা, হ্যাকাথনের বিচারক ও মেন্টরগণ এবং প্রকল্পের পরামর্শকগণসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তাগণ।

উল্লেখ্য, সারাদেশ থেকে নির্বাচিত প্রায় ১৫০ জন উদ্ভাবকের সমন্বয়ে ৫১টি টিম নিয়ে বাংলাদেশের ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে শুরু হয় “ন্যাশনাল হ্যাকাথন অন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিস”। প্রাথমিক বাছাইকৃত ৩৪৯ টি টিম থেকে নির্বাচিত ৫১ টি দল মূল হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছেন যাদের মেনটরিং করেছেন ৪০ জন মেনটরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দক্ষ টিম। হ্যাকাথনে ১০ টি চ্যালেঞ্জের জন্য ১০টি জাজিং বোর্ড গঠন করা হয় যেখানে ৩০ জন অভিজ্ঞ বিচারক এই চূড়ান্ত বিজয়ীদের বাছাই করেন।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে হ্যাকাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই হ্যাকাথন থেকে প্রাপ্ত সেরা ১০ টি ইনোভেশনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাতীয় হ্যাকাথনের এই পুরো আয়োজনটিতে সহোযোগী পার্টনার হিসেবে সহোযোগিতা প্রদান করছে “বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন”।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন