ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর আহবান

স্থানীয় সাংবাদিকদের এক ভার্চূয়াল ওয়ার্কশপ উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অর্জনের সাফল্যের গল্প নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এমপি। তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রত্যাশা যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যের গল্প, যা বিগত ১২ বছরের শ্রেষ্ট অর্জন। এগুলো নিয়ে আপনারা (সাংবাদিকরা) প্রতিবেদন তৈরি করে দেশের ১৭ কোটি মানুষ এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।’ প্রতিমন্ত্রী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক ভার্চূয়াল ওয়ার্কশপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহবান জানান।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি-এর সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই প্রোগ্রাম এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস যৌথভাবে এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালম আজাদ ওয়ার্কশপের সমাপনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান। বাসস ইনফোটেনমেন্ট ইনচার্জ মাহফুজা জেসমিনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এটুআই প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. আব্দুল মান্নান, পিএএ। বাসস’র প্রধান বার্তা সম্পাদক এ জেড এম সাজ্জাদ হোসেন সবুজ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বাসস’র সিটি এডিটর ও পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মধূসুধন মন্ডল, এটুআই’র কমিউনিকেশন অফিসার মামুনুর রহমান, এটুআই’র কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া আউটরীচ কনসালটেন্ট আদনান ফয়সল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটুআই’র যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (ই-গর্ভনেন্স অধিশাখা) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। এটুআই’র ই-সার্ভিস স্পেশালিস্ট দৌলতুজ্জামান খান ও পলিসি স্পেশালিস্ট আফজাল হোসেন সারোয়ার, বাসস’র প্রধান বার্তা সম্পাদক (বাংলা) রুহুল গনি সরকার জ্যোতি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দিন আহমেদ রিসোর্সপার্সন হিসেবে কর্মশালায় অংশ নেন। বাসস’র রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৭ জন প্রতিনিধি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।   

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় নিজে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের আর্কিটেকচার উল্লেখ করে পলক বলেন, ‘তার নির্দেশনায় এটুআই প্রকল্প এবং আমরা সকলে মিলে এই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছি। ১২ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০২১ কিভাবে ধাপে ধাপে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার যায় এজন্য কাজ করেছি। গত ১২ বছর ধরে একটানা কাজ করে সফলভাবে এই কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা গেছে বলেই বিগত ১৩ মাসে করোনাকালীন সময়ে সাড়ে ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন।’ 

এটুআই প্রোগ্রাম এবংবাসস এর ওয়ার্কশপ।

জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিলেন। সেই মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য একেবারে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি বিষয়কে বাধ্যতামূলক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদি এই দশ বছরে আইসিটি বিষয়টা আবশ্যিক না হতো বাংলাদেশে সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার প্রায় ১৫ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো না।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন তখন বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৬ লাখ। ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সৃষ্টি হয়েছে। ইন্টারনেটের দাম ৭৮ হাজার টাকা পার এমবিপিএস থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকার নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। একেবারে গ্রাম পর্যায়ে ৩৮শ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন এবং ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে সরকারের প্রায় ১৪শ’ সেবাকে অ্যাভেইলেবল করা হয়েছে, ৫১ হাজার ওয়েবসাইট ন্যাশনাল পোর্টালে নিয়ে আসা হয়েছে, ২৭০টির বেশি ইন্টারনেট নির্ভর ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ফাইনান্সিয়াল ওয়ালেটে আজকে ১০ কোটি মানুষ লেনদেন করছে। অফিস ব্যবস্থাপনাকে পেপারলেস, পরিবেশবান্ধব করা হয়েছে। গত ১৩ মাসে প্যানডেমিকের এই সময়ে ২০ লক্ষের অধিক ফাইল সম্পাদন হয়েছে এবং সব মিলিয়ে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ১ কোটির উপরে ই-ফাইল সম্পাদন হয়েছে। এখন প্রায় ৮ হাজার অফিসে ১ লাখ অফিসার ই-ফাইল ব্যবহার করছে। এর ফলে বিগত বছরের ৬৬ দিন এবং বর্তমান লকডাউন অবস্থায় আমাদের অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সরকারি কোনো কার্যক্রম থেমে নেই।

সমাপনী বক্তব্যে বাসস ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা দিয়েছিলেন, তখন এটাকে নিয়ে অনেকে হাস্যরস করেছেন। কিন্ত এখন এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। তিনি ধর্মের নামে যারা এদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে, সেসব স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন