জুলাই মাসটা তিন বাঙালী নারীর জয়যাত্রার মাস

ছবি উহ এর সৌজন্যে।

লিখেছেন লন্ডন প্রবাসী তৌফিকুল ইসলাম সুহৃদ –জুলাই মাসটা বাংলাদেশের তিন নারীর জয়যাত্রার মাস ছিলো। তা-ও আবার বিশ্বজুড়ে -বাংলাদেশের মাটিতেও না।

সাদিয়া খানম, প্রথম সপ্তাহের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তে। বিজ্ঞানী, আবিষ্কারের নেশায় তিন প্রজন্মের বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করলেন।

১৯৬৪ সালে বিলেতে অভিবাসী হয়ে আসা দাদা আজমত আলী এবং বাবা কবির আহমেদ এর মেয়ে, করোনা মহামারীর সময়ে ভীষণ রকম দরকারী এক স্প্রেয়ার “Voltique” আবিষ্কার করেছেন যা কিনা যুগান্তকারী আবিষ্কার বলেই স্বীকৃতি দিয়েছে বিলেতের স্বাস্থ্য সেবা সার্ভিস – এনএইচএস এমনকি সঙ্গে নাসা’ও! এ-ই আবিষ্কার বানিজ্যিক ভাবে প্রস্তুতির জন্য ইতিমধ্যেই দশ মিলিয়ন পাউন্ড এর অর্ডার নিশ্চিত হয়েছে। ব্ল্যাকবার্ন মাদ্রাসা থেকে জিসিএসই, ম্যানচেস্টার এর হলিক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজের পাঠ চুকিয়ে চেস্টার ইউনিভার্সিটির জেনেটিক্স এ মাস্টার্স ডিগ্রীধারী সাদিয়া কিন্তু সামনে পিএইচডি শেষ করতে চান অ্যালজেইমা আর নিউরোডিজেনারেশন নিয়ে গবেষণা করেই।

এরপর আসে আজমেরী হুক বাঁধন, সঙ্গে অবশ্যই আবদুল্লাহ সাদ এর নাম আসবেই। আরও আসবে ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ নামটি। অনবদ্য অভিনয় দিয়ে গড়া এক প্রতিবাদী সিনেমা, বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার শো’তে, নিঃসন্দেহে বলাই যায়, “ভিনি,ভিসি, ভিডি!” পুরস্কার পেলে অবশ্যই পরিচালক সাদ এর ভাষায় বলাই যায়, “পেলে অবশ্যই ভালো লাগতো” – আমাদেরও! তবুও এখনকার প্রাপ্তিই বা কম কিসের? ভালো কথা, সুমি নাসরীন এর ডিজাইন করা ওয়ান অফ শোল্ডার ড্রেস, আড়ং এর জলপাই সবুজ রঙা জামদানী, আর সাদ এর পছন্দের রেড ওয়াইন কালারের জাম্পস্যুট এ বাঁধন কিন্তু দারুণ চমকে দিয়েছেন পশ্চিমা মিডিয়াকে, বাঙালী মেয়েদের ফিগারও এসব পোষাকে মানায়!

শেষ নারী – এখনও পর্যন্ত এমাসের সবচেয়ে আলোচিত, আরেক অভিবাসী, বাংলাদেশের বাবা আর ভারতীয় মা’য়ের কন্যা, কিশোয়ার চৌধুরী। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফাইনালিস্ট, শিরোপা না পেয়েও সবচেয়ে বেশী আলোচনা এ-ই তৃতীয় পুরস্কৃত মানুষকে ঘিরেই। পান্তা ভাতে আলুভর্তা, সঙ্গে পোড়ামরিচ, আর ইলিশ বা পুঁটির বদলে সার্ডিন মাছের মুচমুচে ভাজা – প্রাসঙ্গিক ভাবে সৈয়দ মুজতবা আলী’র বিখ্যাত রসগোল্লা থেকেই বলি, ও পরান আমার, খাবিনি ব্যাটা, খেয়ে দেক না” জাজদের খাইয়েই প্রশংসা আদায় করেছেন। যদিও ডেজার্ট এ পানটা পান্তার পরে খাওয়ানোর দরকার ছিলো। যাই হোক যতটা পাওয়া তাতেই কিস্তিমাত! আপাতত যদি ভীষণ খেতে মন চায়, ঈদের আগেই রোববার মেরে দিতে আগের রাত্র ভাত বেশী করে রান্না করে রেখেন, সকালে সাঁটিয়ে দিতে।

যারা ধর্মীয় ব্যাখ্যায় নারীকে আটকে রাখতে ব্যস্ত, তাদের মুখে ঝাঁটা মেরে দেখিয়ে দিলেন তিন বাঙালী নারী, আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হয়ে, প্রশংসা কুড়িয়েই!

শুভেচ্ছা রইলো পরিচিত তিন রত্নের জন্য – হীরা, পান্না, চুনি পাথরের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে উঠুন অনাগত ভবিষ্যতের ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে!

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন