২০২১ সালের প্রযুক্তিগত পরির্তনে টেলিনরের গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: চলমান বৈশ্বিক মহামারি  বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং দেশজুড়ে ডিজিটালাইজেশন  প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। টেলিনর রিসার্চ সম্প্রতি প্রযুক্তি নিয়ে পাঁচটি পূর্বাভাস করছে যা চলতি বছর মানুষের পথচলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনে সহায়তা করবে। গ্রামীণফোন আজ রাজধানীর জিপি হাউজে  এক অনুষ্ঠানে টেলিনরের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট এ পূর্বাভাসগুলো নিয়ে গবেষনা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

নানা কারণেই ২০২০ সাল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গত বছরটি ছিলো শতাব্দীর অন্যতম  প্রতিকূল সময়; একইসঙ্গে এ সময়ে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে নানা পরিবর্তন। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মানুষকে নিউ নরমাল বা নতুন এক জীবনধারণে  অভ্যস্ত করে তুলেছে।  টেলিনর গবেষণা যেটি টেক ট্রেন্ড নামে পরিচিত তার ষষ্ঠ সংস্করণে ২০২১ সালের প্রযুক্তি দুনিয়ার পূর্বাভাস হিসাবে: দূরশিক্ষণ ও কাজ এর জন্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন , ইন্টারনেটে সুরক্ষা বিষয়ে শংকা, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে আধিক্য একং একাকিত্ব ঘোচাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে টেলিনর রিসার্চের হেড বিয়র্ন তালে স্যান্ডবার্গ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গবেষনার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে- এ বিষয়টি দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ডিজিটাল সেবাগুলো বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন সময়ে আমাদের দেশের জনগণের সুরক্ষায়  ও অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখতে দ্রুততার সাথে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশমালাগুলো গ্রহণ করা হয়েছিলো সেগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করেছে। মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় সমাধান প্রদানে উদ্যোক্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের জন্য গবেষনার বিষয়গুলো ভবিষৎ কর্মপন্থা সঠিকভাবে পরিচালিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

এ নিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “আমরা সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলাকে ত্বরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তি বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন সময়ে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। আমাদের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  এসেছে। এই টেক ট্রেন্ডগুলো দেখাচ্ছে যে, প্রযুক্তি ও কানেক্টিভিটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করতে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করবে একই সাথে গ্রিন টেক  এর মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে,  ইন্টারনেটে নিরাপদে থেকে   উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে। এই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা রেগুলেটর, ইকোসিস্টেম পার্টনার, উদ্ভাবক ও পলিসি মেকারদের সাথে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।”

আনির চেীধুরী, পলিসি এডভাইজার, এটুআই; সোনিয়া বশির কবির, ফাউন্ডার এসবিকে ভেনচার এ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশান, ড. মেহতাব খানম, কাউন্সিলিং সাইকোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনায় অংশ নেন।

টানা ছয় বছরের মতো স্যান্ডবার্গ ও টেলিনর রিসার্চ টিম গত বছর বিশ্লেষণ করে ২০২১ সালের পাঁচটি টেক ট্রেন্ড’র বিষয় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন:

ট্রেন্ড ১: মানসিক স্বাস্থ্যজনিত অসুস্থতা মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার

স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘২০২০ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, নিঃসঙ্গতা জনস্বাস্থ্যের একটি মৌলিক সমস্যা। এটি এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মোকাবিলায় ২০২১ সালে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজন পড়বে। আমরা অনুমান করছি যে, ই-হেলথ খাত মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসবে যা এখাতে সেবার বিকাশ ঘটাবে। পুরোপুরি ফাইভজি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোতে আমরা সম্ভবত হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশন টুল হিসেবে অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল  রিয়েলিটি’র ব্যবহার দেখতে পাবো আগামী বছরের মধ্যে।’

ট্রেন্ড ২: গ্রিন টেকের জন্য একটি ডিজিটাল বসন্ত

স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘মহামারি অতীব প্রয়োজনীয় জলবায়ুবান্ধব কার্যকলাপের সূত্রপাতের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্বের সব সরকার জলবায়ু আইন কার্যকর করার মাধ্যমে ২০২১ সালের সবুজ পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করতে ২০২০ সালে প্রাপ্ত গতি কাজে লাগাবে।’

ট্রেন্ড ৩: পাসওয়ার্ড আতংকসাইবার সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে

স্যান্ডবার্গ ভবিষ্যদ্বাণী করেন, “যেহেতু কর্মীরা তাদের লগইন ডিটেইলস মনে রাখার জন্য মূল্যবান সময় নষ্ট করেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ব্যবহারকারী-বান্ধব সুরক্ষা সমাধানের বৃহত্তর বাস্তবায়ন দেখার প্রত্যাশা করি। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সুবিধা বা আইরিস এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং সমাধান আরও বেশি প্রচলিত হবে, যার মাধ্যমে দক্ষতা, সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং শ্রমিকদের ঝামেলার একটি কারণ কমে যাবে।”

ট্রেন্ড ৪: কর্ম ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা সহজীকরন হবে

“২০২১ সালে আমরা আশা করি অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের বাইরেও কর্মীদের কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে আরো নমনীয়তা প্রদর্শন করবে। ভবিষ্যতের কাজের পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করতে পরিচালকরা কর্মীদের সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল হাইজিন, ডিজিটাল টুলস এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কিত দক্ষতা বৃদ্ধির উপর আরো জোর দেবে”, বলেন  স্যান্ডবার্গ।

ট্রেন্ড ৫: শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধান নিয়ে ভাবনা

সবশেষে স্যান্ডবার্গ বলেন, “যদি এই জরুরি সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে  দেশগুলির মধ্যে সঠিকভাবে সমাধান না করা হয় তবে আমরা আসন্ন বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো।   শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধানের ব্যাপক ঝুঁকি বাড়বে। এই ব্যবধানটি কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষা এবং আইসিটি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী এবং দ্রুত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে, সকলের জন্য ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রচারের জন্য একত্রে কাজ করতে হবে।

 

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন