স্বপ্ন দেখি “মেড ইন বাংলাদেশ” প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে লাল-সবুজ প্যাকেটে বিশ্ববাজার জয়ের : মোহাম্মদ মারবীন

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক :  দেশকে কিছু দিতে হলে পাগল হতে হয়, মনে কঠিন কোনো জিদ পুষতে হয়, জীবনের অনেক স্বাদ-আল্লাদ ত্যাগ করতে হয়! কেউ জীবন দিয়ে আমাদের দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা, আর কেও সেই লাল-সবুজের পতাকাকে বুকে ধারণ করে কাজ করে, সে দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন! অনেকে আবার বলে, দেশের মাটিতে থেকে দেশকে ভালোবাসা আর বিদেশের মাটিতে বসে দেশকে ভালোবাসার গাঢ়ত্ব অনেক বেশী! দেশে বসে আমরা বিদেশী পণ্য কিনি ই -কমার্স সাইট দিয়ে, আবার কেও বিদেশ থেকে অর্ডার করে দেশী পণ্য! আবার অনেকে স্বপ্ন দেখে, দেশি পণ্য (মেড ইন বাংলাদেশ) বিশ্ববাজারে, লাল-সবুজে প্যাকেট এ মোড়া!সেটার জন্য কাওকে না কাওকে চ্যালেঞ্জ টা নিতে হয়।

মোহাম্মদ মারবীন,  ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ এবং  সিইও ভাইব্রেন্ট ইউকে।  মারবীন কাগজে ব্রিটিশ, মনে-প্রাণে ১০০% মাছে ভাতে বাঙালী! বাংলাদেশের যে কোনো জয়ে তার উৎসব, আর হার মানেই দ্বিগুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পরা নেক্সট চ্যালেঞ্জে! বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক এর প্রথম উদ্যোক্তা, একজন NRB।।অনেকে হয়তো জানেই না তার নাম, ভীষণ জেদী ও প্রচার বিমুখ মানুষ তিনি! ক্যামেরার পেছনেই কাজ করতে পছন্দ করেন! ইউরোপ-আমেরিকা তে বিশ্বের নামি দামী ১০ কোম্পানি তে কাজ করেছেন IT এক্সপার্ট হিসাবে! বাংলাদেশের জন্য সরাসরি কিছু করার চেষ্টা সবসময়ই তারা করে বেড়াতো তাকে, যখনই অফিসে ভালো কিছু দেখতো, মনে মনে ভাবতো, আমার দেশেও এটা করা সম্ভব ! ২০১৫ সালে যখন হাইটেক পার্ক লন্ডনে তাদের রোডশো করে, প্রথমে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি করার কল্পনায় চুক্তিবদ্ধ হয় তার নিজস্ব কোম্পানী Vibrant Software, UK. তারই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে মার্কেট এনালাইসিস করে সিন্ধান্ত নেন, হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি করবেন, দেশের হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ইম্পোর্ট সাবস্টিটিউট করবেন মেড ইন বাংলাদেশ প্রোডাক্ট দিয়ে, পাশাপাশি এক্সপোর্টও করবেন! চুক্তি করেন দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন গ্রুপ এর সাথে! শুরু হয়ে যায় তার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়! কোটি কোটি টাকার কাজ ফেলে দেশে চলে আসেন পুরো পরিবার নিয়ে বাংলাদেশ এ। নিজের সাজানো সংসার ও বাচ্চাদের কথা ভেবে প্রথমে না বললেও পরে পুরোপুরি সায় দেন তার সহধর্মিনী আঁখি খান, সেও যে আরেক কম্পিউটার প্রকৌশলী! বলে রাখা ভালো – দুইজনেই একসাথে স্নাতক ডিগ্রী নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার ও প্রযুক্তি তে।

ছবিটা সংগৃহীত।

২০১৭ সালে জমি বুঝে নিয়েই কাজ শুরু করে দেন ইন্ডাস্ট্রিজর। প্রথম ইনভেস্টর বলে সব জায়গাতেই জটিলতা পোহাতে হয়েছে তাকে! পুরো ২ বছর দেশে পরিবার রেখে ঘুরে বেড়িয়েছেন চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়া! দেখছেন পৃথিবীর নামি দামি ফ্যাক্টরী, তৈরি করেছেন Vibrant বাংলাদেশ ফ্যাক্টরী বিশ্বমানের। নোকিয়ার মতো বড় কোম্পানীর প্রোডাক্ট আজ এসেমব্লি হচ্ছে vibrant ফ্যাক্টরীতে! স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের FoxConn বানানোর! সেদিন আর দূরে নয়, মেড ইন বাংলাদেশ ডিজিটাল পণ্য দখল করে নেবে বিশ্ববাজারে!
শুধু vibrant ফ্যাক্টরীর জন্যই নয়, পুরো হাই-টেক পার্ক অথরিটির পলিসি গত অসংখ্য জটিলতা গুলোরও সমাধান করেছেন তিনি হাই-টেক পার্ক অথোরিটির সাথে কাঁধ মিলিয়ে! হাই-টেক পার্ক অথোরিটিও তাকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছেন তার এই মেড ইন বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণে।

মোহাম্মদ মারবীন ঢাকা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে HSC, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অফ বেডফোর্ডশায়ারে, ইংল্যান্ড থেকে স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন! পড়াশোনায় পাশাপাশি খেলাধুলাতে সব সময় ভালো ছিলেন! ইংল্যান্ড এ মাস্টার্স করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা থাকলেও, ছেলের অসুস্থতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু দেশের জন্য কাজ করার অদম্য ইচ্ছা তাকে কখনো আটকাতে পারেনি! ইংল্যান্ডের বন্ধু বান্ধব তাকে পাগল বলে! আসলেই সে এক বদ্ধ পাগল।

ছবি সংগৃহীত।

১৯৭১ সালে পাগলরাই দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলো, আর এখন মোহাম্মাদ মারবীন এর মতো পাগলরাই মেড ইন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পাগলামি করে যাচ্ছে! আমাদের দেশে এমন পাগল ই দরকার, যারা দেশের লাল-সবুজের পতাকা টা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পাগলামো করে যাচ্ছে! বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিতে, মোহাম্মদ মারবীন এর মতো আরো অনেক পাগল চাই আমাদের!।

-জিডিটিএন/১২নভে/২১

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন