বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোরের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে চাই- আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

শেখ রাসেল ওয়েবসাইট এবং অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এর জন্মদিন ১৮ই অক্টোবরকে শেখ রাসেল দিবস  হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গ্রহণ করেছে বিশেষ কার্যক্রম। এরই আলোকে ৩রা অক্টোবর ২০২১, রবিবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর “শেখ রাসেল দিবস ২০২১” উপলক্ষ্যে “শেখ রাসেল ওয়েবসাইট ও অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন” রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ার -এর বিসিসি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি। সংবাদ সম্মেলনটিতে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহীদুল্লাহ, এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম-এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এছাড়া অনুষ্ঠানটিতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. বি. এম. আরশাদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর লেখা বই থেকে শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন, বিশ্বে যেনো আর কোনো শিশুকে শেখ রাসেলের মতো জীবন দিতে না হয়, এই রকম কলঙ্কজনক অধ্যায় যেনো আর কেউ তৈরি করতে না পারে, তার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোরের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, শেখ রাসেলের সংগ্রামী জীবন এবং তার যেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সেটি আমরা তুলে ধরতে চাই। পলক বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ যে গত ২৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতি বছর ১৮ই অক্টোবর তারিখ ‘শেখ রাসেল দিবস’ ‘ক’ শ্রেণীর দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই দেশের কোটি কোটি শিশু, কিশোর ও তরুনদের কাছে শেখ রাসেলের জীবন ও শৈশবকে তুলে ধরা হল এই দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য।

পরে প্রতিমন্ত্রী শেখ রাসেল দিবসের কর্মসূচি বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং শেখ রাসেল ওয়েবসাইট ও অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহীদুল্লাহ বলেন, পরিবারের সকলের প্রিয় ছোট্ট শোনামনি শেখ রাসেল খুব কম সময়েই তাঁর পিতাকে কাছে পেয়েছেন। তবে ছোটকাল থেকেই তাঁর হাটাচলা ছিল বঙ্গবন্ধুর মত এবং এমনকি পোশাকটিও পরতো বাবার মত করে। তিনি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞে পাষাণ ঘাতকের মন এতটুকু টলেনি নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলের আকুতিতে। মায়ের কাছে যাবার প্রাণপণ আর্তিতে কর্ণপাত করেনি খুনীরা।” সবশেষে তিনি শেখ রাসেলকে অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার তিব্র নিন্দা জানান।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, জাতির পিতার অনুপ্রেরণায় ও আদর্শে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই পরিচালনার দায়িত্বটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে পালন করছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে দেশের উন্নয়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে বেছেঁ নিয়েছেন। শেখ রাসেল দিবস সম্পর্কে মন্তব্য করে তিনি বলেন যে, এই আয়োজনটি এখন জাতিয় পর্যায়ে রূপ নিয়েছে। আমি আশা করি, আমাদের শিশু কিশোরদের মনে শেখ রাসেলের যে আদর্শটি প্রভাবিত করতে সহোযোগিতা করবে। আমরা চাই একটি উন্নত বাংলাদেশ যেখানে তথ্য ও প্রযুক্তি থাকবে এবং যেখানে একটি সুন্দর আদর্শের মাধ্যমে যুব সমাজ ও শিশু কিশোররা গড়ে উঠবে।  এই আদর্শের মূল জায়গাটি হচ্ছে শেখ রাসেলের শিশু জীবনের জীবন আদর্শ যা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ গঠনের জন্য আগামীতে তৈরি হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. বি. এম. আরশাদ হোসেন স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে শহীদ শেখ রাসেল-কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করছি। তিনিও বেঁচে থাকলে হয়তো বা সামিল হতেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে। ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে তার বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এখন যেমন দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, বেঁচে থাকলে তিনিও নিঃসন্দেহে নিজেকে দেশের জন্য নিয়োজিত রাখতেন।”

সবশেষে কুইজ প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী উপস্থাপন করেন এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম-এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ) এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি- সহ সকল মন্ত্রণালয় এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এর সার্বিক সহযোগিতায় “শেখ রাসেল দিবস” এর অংশ হিসেবে শেখ রাসেল (www.sheikhrussel.gov.bd ) নামক একটি ওয়েবসাইট ও অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্প। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিশু-কিশোর তথা বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে শেখ রাসেল সম্পর্কে জানতে পারবে।

দুরন্ত, প্রাণবন্ত শেখ রাসেল-এর জন্ম, শৈশব, শিক্ষাজীবন, স্বপ্ন, ভ্রমণ, পরিবার, পছন্দ, তাঁর উপর রচিত গ্রন্থ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তসহ বিভিন্ন বিষয় তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শেখ রাসেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে জাতীয়ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে “শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা”। মূলত উল্লেখিত বিষয়সমূহ থেকে প্রশ্ন নির্ধারণ করা হবে উক্ত প্রতিযোগিতায়। প্রথমে, আগ্রহী শিশু-কিশোরদের নিবন্ধনের জন্য ভিজিট করতে হবে quiz.sheikhrussel.gov.bd এই ঠিকানায়। এই প্রতিযোগিতায় ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যকার যে কেউ অংশ নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, এই আয়োজনে অংশ নিতে বয়সভিত্তিক “ক” ও “খ” নামক ২ টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে। নিবন্ধনকারির বয়স গ্রুপ “ক” এর ক্ষেত্রে ৮-১২ বছর এবং গ্রুপ “খ” এর ক্ষেত্রে ১৩-১৮ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩রা অক্টোবর ২০২১ রবিবার থেকে ১১ অক্টোবর ২০২১ সোমবার রাত ১২ টা পর্যন্ত অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে।

পরবর্তীতে, “গ্রুপ ক” অর্থাৎ ৮-১২ বছর বয়সের নিবন্ধনকারিরা ১২ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যে যে কোন ১০ মিনিট এবং “গ্রুপ খ” অর্থাৎ ১৩-১৮ বছর বয়সের নিবন্ধনকারিরা ১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যে যে কোন ১০ মিনিট সময়ে অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এমসিকিউ পদ্ধতিতে সকল প্রশ্নের উত্তরের জন্য চারটি বিকল্প থেকে একটি সঠিক উত্তর বাছাই করতে হবে। কম সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক উত্তরদাতা থেকে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। তবে চূড়ান্ত বিজয়ীদের ক্ষেত্রে বয়স যাচাই সাপেক্ষে পুরস্কার প্রদান করা হবে। “ক” ও “খ” দুটো গ্রুপ থেকেই ৫ জন করে অর্থাৎ মোট ১০ বিজয়ীর প্রত্যেককে দেওয়া হবে কোর আই ৭ – ১১ জেনারেশন মানের ল্যাপটপ। তবে একজন প্রতিযোগী একবারই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে অংশগ্রহণ করলে তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল বলে গণ্য করা হবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন