শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫, ৮:১৮ অপরাহ্ণ
35 C
Dhaka

পড়াশুনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ছাত্র-ছাত্রীদের এখনই দরকার ব্যবহারিক ক্লাস

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এত দীর্ঘকাল বন্ধ রয়েছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। নভেল করোনা ভাইরাস মহামারিতে প্রায় দেড় বছর টানা ছুটিতে  ২০২০,২০২১,২০২২ সালের অন্তত তিনটি শিক্ষা বর্ষের সূচি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তি সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেনা। মহামারি কমার পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর চিন্তা থেকে সরে এসে কিভাবে এখনই সকল শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে এনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায় তা নিয়ে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে আমাদের শিক্ষা খাতের ক্ষতির রেশ দীর্ঘকাল বইতে হবে আমাদের অর্থনীতিকে। মহামারি কালীন শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাবিদগনের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

বর্তমান সময়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাস্তর পর্যন্ত চার কোটি শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে পড়ে গেছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার কাজ চললেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেকগুলো পাবলিক পরিক্ষা পিছিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে বাড়ছে হতাশা আর এ কারনেই বাড়ছে সেসন জট, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আয়বর্ধক কাজে নিয়োগ, বাল্য বিবাহ সহ বাড়ছে সমাজের বহুবিধ সমস্যা।

ইউনিসেফের তথ্য মতে দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই গত ২০২০ এর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে আমাদের দেশের শিক্ষাবিদগন বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। 

এদের মধ্যে অন্যতম দেশ বরন্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি বলেন, অনির্দিষ্টকাল তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে চলা সম্ভব নয়। তাই সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় এনে এখনই ব্যবহারিক শিক্ষা চালুর বিকল্প নাই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষার বিকল্প নাই । প্রতিটি শিক্ষার বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে তার ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক শিক্ষা। অনলাইনের মাধ্যমে থিউরিটিক্যাল  টপিক পড়ানো সম্ভব হলেও ব্যবহারিক সব জ্ঞান দেওয়া সম্ভব হয়না। আমাদের আরও খেয়াল রাখতে হবে দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী  ডিজিটাল ডিভাইজ, ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে বর্তমানে  অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, স্কুল খোলার পর সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে একটা বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন প্রয়োজনে সরকারকে এ খাতে বিশেষ প্রনোদনা দিতে হবে। তা না হলে ঝরে পড়া সকল শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা নিন্মোক্ত  কিছু পদ্ধতি অনুসরন সাপেক্ষে এই করনা কালিন সময়েও শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু করতে পারি।

সাপ্তাহিক পদ্ধতি:  প্রতিটি শেনীর বাচ্চাদের জন্য সাপ্তাহে একদিন খোলা রেখে শিক্ষাদান। অথ্যাৎ একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা একদিন ক্লাসে আসবে দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণীকক্ষে বসবে ও শিক্ষকগন পাঠদান করবেন। পূরো সপ্তাহের পড়া দেওয়া এবং পরবর্তী সপ্তাহের পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরবে।

শ্রেণীকক্ষ নির্ধারনপূর্বক: প্রয়োজনীয় দুরত্ব বজায় রেখে বসার জন্য শ্রেণীকক্ষ নির্ধারন করে দেওয়া যাতে করে অন্যদের সাথে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারন: প্রতিটি শ্রেণীর পাঠদানের জন্য আলাদা আলাদা সময় সূচি নির্ধারন পূর্বক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শ্রেনীকক্ষে ফেরানো সম্ভব।

পরিক্ষা ভিত্তিক শর্ট সিলেবাস: পরিক্ষার জন্য শর্ট সিলেবাস নির্ধারন পূর্বক শ্রেণী কক্ষে স্বল্প মেয়াদী পাঠদান । এতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু টপিক পড়াশুনা ও ব্যবহারিক ক্লাস করে পরিক্ষায় অবতীর্ন হবে।

অনলাইনে অনাগ্রহীদের আলাদা ব্যবস্থা: যে সকল শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষায় অনাগ্রহ রয়েছে অথবা প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারে নাই তাদরে জন্য ক্লাসরুম ভিত্তিক ও ব্যবহারিক ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।

রিমোট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া: গ্রাম ভিত্তিক অথ্যাৎ প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল কলেজ গুলো এখনই স্বাস্থবিধি মেনে খুলে দেওয়া, যাতে গ্রাম গঞ্জের শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারে।

শিক্ষা ডিভাইস চালুকরন: সরকার একটা প্রজেক্টের আওতায় একটি শিক্ষা ডিভাইস বিনা মূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরন করতে পারে যাতে সবাই অনলাইন শিক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারে।

সর্বোপরি আমাদের দেশের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও শিক্ষাবিদগনের দাবী স্বাস্থবিধি মেনে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। কারন আমরা শিক্ষায় বামনজাতী হয়ে থাকতে চাইনা। আমাদের সকলের প্রানের দাবী আর যেন দেশে অটো পাশ না দেওয়া হয়। প্রয়োজনে শিক্ষাক্ষেত্রের সকল স্টেকহোল্ডার এর মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহন জরুরী।

লেখক ও কলামিষ্ট, মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, ইমেইলঃ mshahnewazmazumder@gmail.com

এই সপ্তাহের জনপ্রিয়

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল...

আইএসপিএবি ২০২৫ নির্বাচনে আমিনুল হাকিমের নেতৃত্বে ‘আইএসপি ইউনাইটেড’ প্যানেল

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আসন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের...

এআইনির্ভর গ্রাহক সেবা চালু করেছে এয়ারবিএনবি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: এয়ারবিএনবি অনেকটা চুপিসারেই যুক্তরাষ্ট্রে চালু করেছে তাদের...

সর্বশেষ

দেশে দক্ষতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: মোবাইল ফোনের কল্যাণে আরও স্মার্ট জীবন যাপন...

শাওমির ১০ কোটি টাকার ঈদ ক্যাম্পেইন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আসন্ন ঈদ উল আযহাকে ঘিরে ১০ কোটি...

ডিআইইউতে ‘ইঞ্জিনিয়ার দিবস ২০২৫’ উদযাপিত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বিশ্বকে রূপদানকারী প্রকৌশলীদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং অক্লান্ত...

দেশের প্রযুক্তি বাজারে এলো ফিলিপসের সর্বাধুনিক মনিটর

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ফিলিপস-এর নতুন মডেলের (ইভনিয়া...

এ সম্পর্কিত

spot_img

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

spot_img