ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ইন্টারনেট কেবল অপসারণ; বিচ্ছিন্ন জনসাধারন : আইএসপিএবি

টেকভিশন ডেক্স: করোনা মহামারীর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ অপসারণে নামায় শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, দুশ্চিন্তায় ভুগছেন অভিভাবকরা। কিন্তু হঠাৎ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অনেকের ছেলেমেয়ে অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। করোনার সময়ে এভাবে ইন্টারনেট সংযোগ অপসারণ করলে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল ইমদাদুল হক বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর মেয়র মহোদয়ের সাথে মিটিং করে আমাদের ‍ও গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়টা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করতে। বর্তমানে করোনাকালিন এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা আমাদের ব্যবসায়ীদের পক্ষে অসম্ভব। আজ ১২ই আগস্ট তারিখেও পুরান ঢাকায় কেবল কাটার খবর আসছে আমাদের কাছে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের টেকভিশনকে বলেন, ওনাদের বিভিন্ন সময়ে নোটিশ করা হয়ে অপরিকল্পিত কেবল সরিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করতে। এখন আমাদের হাতে কেবল কাটা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।

করোনার দুঃসময়ে বাসাবাড়ির ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মহামারীর ঝুঁকি এড়াতে বাসায় বসেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, চাকরিজীবীরা অফিস পরিচালনা, চিকিৎসকদের রোগী দেখা, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করা এবং আদালতে ভার্চুয়ালভাবে সব কিছু ইন্টারনেটের দ্বারা পরিচালনা করছেন। এছাড়াও টেলিমেডিসিন, বীমা, আউটসোর্সিং, কলসেন্টার, সফটওয়্যার, ই-কমার্স, ব্যাংক ও হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। অনেকে আবার মানসিক চাপ কমাতে অনলাইনে দেশ-বিদেশে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, বিনোদন দেখছেন ও বিভিন্ন খবর পড়ছেন। করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে অনলাইন নির্ভরতা বাড়লে ডিএসসিসি ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ অপসারণে নেমেছে। এতে সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দুর্ভোগে পড়েছেন।

জানা গেছে, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযানের আগে এলাকায় কোন ধরনের মাইকিং করা হয়নি। নোটিশও দেয়া হয়নি। হঠাৎ করে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ অপসারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। করোনার সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ কিংবা পার্ক বন্ধ থাকায় বড়দের মতোই মানসিক চাপে আছে শিক্ষার্থীরা। বাসায় বসে অনলাইন ক্লাস ও টেলিভিশনে বিনোদন দেখে কিছুটা মানসিক চাপ কমছে শিক্ষার্থীদের। এ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট কিংবা ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রশ্ন হলো, এ অসময়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে এমন ধরনের অতি উৎসাহী কর্ম কেন? দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা কি ওয়াকিবহাল নন? তারা কি বোঝেন না যে, এ মুহূর্তে যারা ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না বা বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে থাকছেন তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য বিরতিহীন ইন্টারনেট সেবা কতটা জরুরি? করোনার আগে কি রাজধানীতে ঝুলন্ত তার দৃশ্যমান ছিল না? তখন কেন বাড়তি তার অপসারণের কাজটি করা হয়নি? করোনার দুর্যোগে শিক্ষা, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, অফিস-আদালতসহ সব কাজের একমাত্র পাথেয় যখন ইন্টারনেট তখন পরিচ্ছন্নতার নামে বাসাবাড়ির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়ে সিটি করপোরেশন কোন অসাধ্য জয় করছেন তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

নগরের সৌন্দর্য বাড়াতে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে ইন্টারনেট সেবার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। কারণ মাটির নিচ দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কাজ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখেই কোটি কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট করলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন। তাদের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি অপূরণীয় ক্ষতি হবে ইন্টারনেট গ্রাহকদের। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজটি থেকে সিটি করপোরেশনকে বিরত থাকতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে, সবাইকে অবগত করে পর্যায়ক্রমে পরিচ্ছন্নতার কাজটি করা যেতে পারে। -তথ্যসূত্র : দৈনিক সংবাদ

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন