“আইডিয়াথন” বিজয়ী ৫ দল দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়াবে বাংলাদেশের পতাকা

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ-দ.কোরিয়া আয়োজিত “আইডিয়াথন” কনটেস্টের সফল সমাপ্তি বিজয়ী ৫ দল ক্রেস্টসহ সম্মাননা ও দ.কোরিয়াতে ৬ মাসের ইনকিউবেশন এবং সেরা ৩০ এর প্রত্যেক সদস্য মোট ১১১ জন পেল বিশেষ সনদপত্র বাংলাদেশের স্টার্টআপদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ ভাবে আয়োজন করে “আইডিয়াথন (ideaTHON)” কনটেস্ট।

গত সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতায় iDEA প্রকল্পের উদ্যোগে সফলতার সাথে প্রায় ৩ মাস ধরে এই আয়োজনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ-দ.কোরিয়া যৌথভাবে আয়োজিত এই আয়োজনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁও আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে যথাযথ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন এবং আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ।

এছাড়া, উক্ত আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব জনাব পার্থপ্রতিম দেব, দক্ষিন কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এর পরিচালক স্যাংগন পার্ক, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক  টিনা এফ জাবিন।

অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, স্বাধীনতার মহান স্থপতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং তিনিই আমাদেরকে দেখিয়েছেন কিভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে গত নয় মাস আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ফুড ডেলিভারী, গৃহহীন ও কর্মহীন মানুষকে আর্থিক সহোযোগিতাসহ নানাভাবে সহোযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগী ও সঠিক দিক-নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকার প্রায় ১৪০০ এর বেশি ডিজিটাল সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। ৬০০০ ডিজিটাল ডেলিভারি সেন্টার এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ৬ মিলিয়ন মানুষ ডিজিটাল সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। একইসাথে, আমরা কম সময়ে, কম খরচে এবং হ্যারেসমেন্ট কমিয়ে দ্রুততার সাথে গুণগত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছি। এগুলোর সকল কিছুই সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়াকে পাশে থাকার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও তাদের এসকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তিনি অনুরোধ করেন।

লি জ্যাং-কিউন করোনা পরিস্থিতিতেও এ ধরণের আয়োজনে যে সকল মেধাবী তাদের উদ্ভাবন নিয়ে অংশ নিয়েছেন তাদের সকলকে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যকার এই পার্টনারশীপ দুই দেশের সম্পর্ককে অবশ্যই আরো উন্নত করবে। আমি বিজয়ী ৫ স্টার্টআপকে শুভেচ্ছা জানাই”। তিনি আরো বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়া এই বিজয়ী স্টার্টআপদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং, কনসাল্টিং এবং নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে আগামী ৬ মাস এই বিজয়ী স্টার্টআপদের উপযুক্তভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কাজ করবে।”

এন এম জিয়াউল আলম পিএএ দক্ষিণ কোরিয়াকে আইসিটি খাতে সহোযোগিতা করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা এনালগ থেকে ডিজাটাল যুগে প্রবেশ করেছি এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির দিকে যাচ্ছি। এই পরিবর্তন গুলোর সাথে আমরা খাপ খাইয়ে নিয়েছি। আমি মনে করি, আজকের তরুণ প্রজন্মের সেই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা আছে, তাদের মানুসিকতা আছে এবং সেই ভাবে তারা গড়ে উঠছেন। তিনি স্টার্টআপদেরকে একটি উন্নত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ধরনের আয়োজনের প্রশংসা করেন।

সৈয়দ মজিবুল হক সমাপনী অনুষ্ঠানে “আইডিয়াথন” কনটেস্টে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান এবং তিনি এই আয়োজনের সাথে যারা পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত হয়েছেন তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিব শতবর্ষে “Let’s Start You Up” স্লোগান নিয়ে আয়োজিত “আইডিয়াথন” কনটেস্টের ব্যাপক প্রচারণা ও সারাদেশের ৮টি বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অ্যালামনাই ক্লাব, কমিউনিটি এবং ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে মোট আবেদনের সংখ্যা দাড়ায় ৩১৪৭টি। উদ্যোক্তাদের আবেদন গ্রহণের পর প্রথম স্ক্রিনিংয়ে প্রাপ্ত ৩৮৯টি আবেদনের থেকে ২য় স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ১১৮টি আবেদনকে বাছাই করা হয়।

পরবর্তীতে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে ১০ জন করে ২টি প্যানেলে মোট ২০ জন অভিজ্ঞ বিচারকের মাধ্যমে টপ ৩০টি টিম ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয়। এর পরে, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি থেকে ৮ জন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ জন এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪ জনের সমন্বয়ে গঠিত মোট ১৬ জন সদস্যের একটি অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিচারকদল এই কনটেস্টের চূড়ান্ত নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

বিচারকগণ চূড়ান্ত নির্বাচন শেষে সেরা ৫টি বাংলাদেশি স্টার্টআপকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন।

বিজয়ীদলগুলো হল-  ছবির বাক্স (আরিফ রহমান, আরাফাত রহমান, ইবনুল ইসলাম, সুমিত আদনান এবং ইমতিয়াজ আহমেদ)  কৃষিয়ান (এহসান আহমেদ এবং মো: মামুনুর রেজা)  চার ছক্কা লিমিটেড (নওরীন হক হৃদি, আসফাকুল আজম, ইয়াসির হাসান টাকি এবং রুকসার আলম)  এএনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেড (থাজিড ইবনে রউফ উদয়, রাফিদ উদ্দিন ভূইঁয়া নেহাল, নাজিব আহমদ, শুভদ্বীপ দাস এবং সাবাব মাহমুদ)  রক্ষী লিমিটেড (আবরার মাসুম শান্ত, প্লাবন শেখ, আবরার গালিব, মোহাম্মদ ফয়সাল ও ফাহিম হাসনাইন ফাহাদ) বিজয়ী স্টার্টআপগণ দক্ষিণ কোরিয়াতে ৬ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেশন, ফান্ডিং, আন্তর্জাতিক পেটেন্টসহ কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক পাবার সহযোগিতা পাবে। বিজয়ী ৫টি স্টার্টআপ টিমের প্রতি টিম হতে ২ জন করে মোট (৫ x ২=১০ জন) দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে, এই কনটেস্টে সেরা ৩০টি টিমই বিশেষ মেন্টরিং গ্রহণ করে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী ৫ স্টার্টআপ টিমকে সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিশেষ সনদপত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া, উক্ত আয়োজনে টপ ৩০টি স্টার্টআপকে ক্রেস্টসহ টিমের প্রত্যেক সদস্যকে অর্থাৎ মোট ১১১ জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, “আইডিয়াথন (ideaTHON)” কনটেস্টের সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এবং কোরিয়া ইনভেনশন প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশন (কাইপা)। এছাড়া, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মিনিস্ট্রি অফ জাস্টিস ও গ্লোবাল স্টার্টআপ ইমিগ্রেশন সেন্টার এই আয়োজনের পার্টনার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন