টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ২৯ জুলাই সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডে। সারা বিশ্বের জুলাই মাসের শেষ শুক্রবার আইটি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার কর্মীদের কৃতজ্ঞতাস্বরুপ এই দিনটি পালন করা হয়। দুইহাজার সালে দিনটি পালন করা শুরু হয়। বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আইটি কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য কেক কেটে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে দিনটি পালন করে।
মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম বলেন, আজকে যে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মুহুর্তের ক্লিকেই দৈনন্দিন জীবন যাপিত করছি, এর নেপথ্যে আছে এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ আই টি কর্মীর নিষ্ঠা, শ্রম। তথ্যপ্রযুক্তিতে সব তথ্যই কম্পিউটারের স্টোরেজে সংরক্ষিত থাকে। এই কম্পিউটারগুলোকে বিভিন্ন ভাবে সুপার কম্পিউটার, সার্ভার বলা হয়ে থাকে। এসব যন্ত্রগুলি বিশ্বের বিভিন্ন ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত থাকে। এই ডাটা সেন্টার হতে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সেবার জন্য বৈশ্বিক ডাটা সেন্টার ব্যবহার করে থাকে, সাধারণত তখন বলা হয় তারা ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করছে। অপরদিকে অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ডাটা সেন্টার থাকে , তখন বলা হয় তারা অনপ্রেম সার্ভিস ব্যবহার করছে। এসব ডাটা সেন্টারের সার্ভার তথা কম্পিউটার সংরক্ষণ করার জন্য হার্ডওয়ার, অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ডাটাবেইজ, বিভিন্ন এপ্লিকেশনস কে বিভিন্ন প্রকৌশলগত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হয়। আর এসব সিস্টেমকে প্রতি সেকেন্ডের নিখুঁত ব্যবহারের জন্য মনিটরিং, মেইন্টেনেন্স ও নিরাপত্তা হালনাগাদ’র প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমরা ব্রাউজার বা এপ্সের ক্লিকে মুহুর্তের মধ্যে যেই সার্ভিস নিমিষেই পাচ্ছি এর নেপথ্যে রয়েছে এক ঝাঁক আইটি কর্মী যারা তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামোগত খাতকে সবসময় ব্যবহারউপযোগী রাখছেন। এই কর্মীদের সার্বিকভাবে বলা হয় আইটি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের নিষ্টা, শ্রম অধিকাংশ সময়ই স্বীকৃতি পায়না কিংবা বলা হয়ে থাকে, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস জব, থ্যাঙ্কসলেস জবস।
বাংলাদেশেও বর্তমানে ছোট-মাঝারি-বড় সব প্রতিষ্ঠানের আইটি ডিপার্টম্যান্টে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা কাজ করে থাকে। প্রতি প্রতিষ্ঠানেই এই সংখ্যা ২ থেকে ২০০ জনের মধ্যে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংক, টেলিকম অপারেটর, গার্মেন্টস, এনজিও, আন্তর্জাতিক-সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বিভিন্ন কার্যক্রম আই টির মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত। আমরা মাঝেমধ্যে নোটিশ করি, জন্মনিবন্ধন-টিকেট সহ বিভিন্ন সার্ভিসে সার্ভারের ত্রুটি বিপর্যয় হয়। সাময়িক বিপর্যয়ের এই সময়েই অনুধাবন করা যায়, এই পেশার সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব কতটুকু। অথচ- দিন রাত নিরবিচ্ছিন্ন অবকাঠামোগত আইটি সার্ভিস নিশ্চিতকরার জন্য নিবেদিত প্রাণভাবে কাজ করে যাচ্ছে অজস্র সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা। বাংলাদেশে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবেনা।
এতদসত্বেও, প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন মহলের কাছে এখনো সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পেশাজীবীরা ন্যায্য স্বীকৃতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পায়না। উন্নত বিশ্বে, এই পেশাজীবীদের সামাজিক ও আর্থিক স্বীকৃতি দৃষ্টান্তমূলক। এ কারণেই, আমাদের দেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা উন্নত জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে থিতু হচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনার মধ্যে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। আইটি অবকাঠামোর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য অত্যাধুনিক ট্রেইনিং ও প্রয়োজনীয় হার্ডওয়ার, সফটওয়ারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
পরিশেষে, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দিবসে আই টি অবকাঠামোর নেপথ্যের কারিগরদের টুপিখোলা অভিভাদন ও শুভেচ্ছা।