বিটিআরসিতে সাইবার জগতে বাংলা ভাষার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ক কর্মশালা

টেকভিশন২৪ ডেস্ক:  ইউনিভার্সেল একসেপ্টেন্স স্টিয়ারিং গ্রুপ (USAG) এবং ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN) এর সহযোগিতায় আগামী ২৮ মার্চ ২০২৩ সারাবিশ্বে প্রথমবারের মত পালিত হতে যাচ্ছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা (Universal Acceptance) দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সাইবার জগতে বাংলা ভাষার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (BIGF) এর যৌথ উদ্যোগে ২৭-২৮ মার্চ ২০২৩ খ্রি. দুইদিন ব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে।

রবিবার সকালে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্ধোধনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার, সম্মানিত অতিথি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গর্ভনেন্স ফোরামের চেয়ারপার্সন হাসানুল হক ইনু, এমপি ও মাননীয় সাংসদ আফরোজা হক এবং বিশেষে অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব আবু হেনা মোরশেদ জামান উপস্থিত ছিলেন।

সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা (Universal Acceptance) হলো সকল ডোমেইন নেইম, ই-মেইল ঠিকানা, ইন্টারনেট সক্ষম যে কোনো অ্যাপ্লিকেশনস (Apps) এবং সিস্টেমে স্থানীয় ভাষায় আধেয় (Content), ভাষা এবং বর্ণকে যুক্ত, বৈধতাকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সক্ষমতাকে বোঝায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস্ বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ এহসানুল কবীর বলেন, পৃথিবীতে কোটি কোটি ডিভাইস একে অপরের সাথে যুক্ত রয়েছে। এসব ডিভাইসগুলোকে মাতৃভাষার মাধ্যমে ব্যবহার করা না গেলে সকলের কাঙ্খিত উপকার নিয়ে আসবে না। এজন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবক, সরবরাহকারী, একাডেমিয়া ও সরকারকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশে ইন্টারনেট ডাটার ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৮ ভাগ মানুষ ফোরজি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করছে এবং ৯৮ ভাগ ভৌগোলিক এলাকা ফোরজি সেবার আওতায় এসেছে।

ভিডিও বার্তায় ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস্ অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN) এর গ্লোবাল ডমেইন এন্ড স্ট্রাটেজি বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিসেস থেরেসা স্যুইনহার্ট বলেন, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিজ মাতৃভাষায় ইন্টারেনট ডোমেইন ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাইবার জগতে সকল ভাষার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলে সব শ্রেণীপেশার মানুষকে মাতৃভাষায় ইন্টারনেট ডোমেইন ও ইমেইল ব্যবহারে উৎসাহিত করা যাবে।
কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন (BIGF) এর মহাসচিব জনাব মো. আবদুল হক অনু । তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমাজে ডিজিটাল বৈষম্য ও বিভাজন হ্রাস, ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং নারীদের প্রযুক্তিতে অগ্রসর করে তুলতে সরকারের সাথে কাজ করছেন তারা।

বাংলার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সাথে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কাজ করছে জানিয়ে BCC নির্বাহী পরিচালক জনাব রনজিত কুমার বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম চলছে এবং বাংলা বর্ণের জটিলতা নিরসনে ইউনিকোডের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, বাঙ্গালিরা ভাষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। সাধারণ মানুষ নিজ মার্তৃভাষার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে। সাইবার জগতে বাংলা ভাষার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সকল অংশীজনদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গর্ভনেন্স ফোরামের চেয়ারপার্সন জনাব হাসানুল হক ইনু বলেন, চীনা, রাশিয়ান ও আরবীসহ বিশ্বের অনেক ভাষায় ডোমেইন ও ইমেইল ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি চালু হয়নি। ইউনিকোডে চারটি বর্ণের(।, ড়,য়,ঢ়) জটিলতার কারণে বাংলায় ডোমেইন ও ইমেইলসহ অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ডিজিটাল স্বাক্ষরতা, ই-সিটিজেন, বাংলায় কনটেন্ট ব্যাংক ও চারটি বাংলা বর্ণের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতি আহবান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, যেই চারটি বর্ণের জন্য আমরা ইউনিকোডের সাথে লড়াই করছি সেই চারটি অক্ষরের জন্য ইউনিকোডে ভারতীয় বিকল্প শব্দ থাকায় নুকতা ব্যবহার করে আমাদের লিখতে হয়। সঠিক সময়ে যথাযথভাবে ইউনিকোডকে বুঝাতে সক্ষম না হওয়ায় এখনো ইন্টারনেটে বাংলার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলা, দেবনাগরী লিপি ও ভারতীয় বাংলা একই গোত্রের ভাষা হওয়ায় বর্ণের মধ্যে মিল পাওয়া যায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইউনিকোডের কাছে যথাযথভাবে চারটি বর্ণের জটিলতা নিয়ে অগ্রসর হলে তা দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে। বিটিআরসির নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে জানিয়ে তিনি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মত মোবাইল ইন্টারনেটেও ‘এক দেশ এক রেট’ চালুর আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার কর্মশালায় অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান । তিনি বলেন, বাংলা ভাষার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতে জটিলতাসমূহ কর্মশালার মাধ্যমে উঠে আসবে তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে।

কর্মশালার প্রথম দিনে সকলের জন্য একটি উন্মুক্ত, বিনামূল্যে এবং নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে ‘জাতিসংঘের গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট’ বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আ.হ.ম বজলুর রহমান।

আলোচনায় নিরাপদ এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী ডিজিটাল সংযুক্তি, ইন্টারনেট ব্যবহারে বৈষম্য কমানোসহ জবাবদিহিতার মানদণ্ড প্রবর্তন করে একটি বিশ্বস্ত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চতের বিষয়ে আলোকপাত করা হয় ।

এছাড়াও, ভার্চুয়াল উপস্থাপনায় সাইবার জগতে ইন্টারনেট ডোমেইন ব্যবহারের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN) এর গ্লোবাল ডোমেইনস এন্ড স্ট্রাটেজি বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার পিটিনান কুয়ারমর্নপাতানা, যিনি আগামীকাল (২৮ মার্চ ২০২৩) অনুষ্ঠিতব্য কর্মশালার দুইটি সেশনে কারিগরি পর্যালোচনা ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত ইমেইল পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার জনাব ডঃ মুশফিক মান্নান চৌধুরী , খাত সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট অংশীজন ও বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন