বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময়

টেকভিশন ডেস্ক: দেশের হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এলক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল ‘বিয়নড-২০২০’ শীর্ষক ওয়েবিনার এর দ্বিতীয় দিনে এসব বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা। দক্ষতা উন্নয়ন, স্টার্ট-আপ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ‘বিয়নড-২০২০’। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের উপযোগীতা জানান দিতেই অন-লাইন প্লাটফর্মে এই ওয়েবিনার আয়োজিত হচ্ছে।
ওয়েবিনারের দ্বিতীয় দিনে বিনিয়োগকারীদের জন্য হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রণোদনা সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস-সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রণোদনা প্যাকেজ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সহায়ক অবকাঠামো, অনুকূল রফতানি শর্ত, নেতৃস্থানীয় ভোক্তা দেশগুলির সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক ইত্যাদি সূচকে বাংলাদেশ ভারতসহ বিশ্বের মধ্যে নয়টি উদীয়মান গন্তব্যগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে আলোচনায় উঠে আসে। অন্যদিকে পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্কের ক্রমাবনতির ফলে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীগণ নতুন গন্তব্যের খোজে রয়েছে যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে বলে আলোচকগণ মনে করেন।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময় যেখানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক যে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শ্রম-নির্ভর অর্থনীতি যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব দেশ জ্ঞান-ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে তারাই এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করতে সমর্থ্য হবে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৫টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ৩৫৫ একর জমিতে বিভিন্ন কোম্পানি কাজ করছে। এখান থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। মাত্র চার বছরে হাই-টেক পার্কগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনেয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে। সম্প্রতি ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড নামীয় একটি চীনা জায়ান্ট বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া সামস্যাং, নকিয়া, ওয়ালটনসহ আরো বেশ কিছু কোম্পানি এই পার্কে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এছাড়া আজকের ওয়েবিনারে আলোচনা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক ভল্ট ইনভেস্টমেন্ট এর চেয়ারম্যান সুলতান লুতাহ, Ernst & Young,Bangladesh এর এসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুইজ তাসনিম তাকি, LightCastle Partners এর সিইও বিজন ইসলাম, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈবাল চক্রবর্তী প্রমুখ।
উল্লেখ্য দক্ষতা উন্নয়ন, স্টার্ট-আপ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বিয়নড-২০২০’। গত ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ থেকে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপি চলবে এই ওয়েবিনার। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর সহায়তায় এই ওয়েবিনার আয়োজন করছে দেশীও উদ্যোগ ইন্সপায়রিং বাংলাদেশ।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন