আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বৈষম্য কমাতে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরি প্রয়োজন

আর্থিক
আর্থিক

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ জরুরি। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এটুআই আয়োজিত এক জাতীয় পর্যায়ের কর্মশালায় বিশেষজ্ঞগণ এমন বক্তব্য তুলে ধরেন। কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সেলিমা আহমেদ, এমপি। এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) জনাব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর-এর সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবুল বশর, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়রা আজম এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার (এফএসপি কান্ট্রি টিম বাংলাদেশ অফিস) স্নিগ্ধা আলী উপস্থিত ছিলেন।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বৈষম্য কমাতে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়োজন: জাতীয় কর্মশালায় বক্তারা
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বৈষম্য কমাতে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব
ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়োজন: জাতীয় কর্মশালায় বক্তারা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিমা আহমেদ, এমপি, বলেন, “বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সমতার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সবসময় বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য নারী উদ্যোক্তাদের এখন আর শুধু পণ্য উৎপাদন ও ক্ষুদ্র ঋণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তবে, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমিয়ে এখন ব্যাংক ঋণে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এজন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে জেন্ডার ইক্লোসিভ ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম এবং জেন্ডার লেন্স ইনভেস্টমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসন করে জেন্ডার লেন্স ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের কাছে পৌঁছে দিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। যাতে নারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে শহরমুখী উদোক্তাদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য গ্রামীণ এলাকায় নারী উদ্যোক্তাদের সময়মতো ঋণ দিতে হবে। তাদেরকে সঠিক, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের সাথে তাদেরকে বাজারমূখী করে তুলতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আমরা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারি সেটা খোঁজে বের করা প্রয়োজন। প্রান্তিক মানুষের চাহিদা না জেনে ত্রুটিপূর্ণ সার্ভিস ডিজাইন করলে তা থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ সেবা পাবে না। সেজন্য সার্ভিসগুলো ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্যাকেজ আকারে চিন্তা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সবগুলো সেবা একসাথে নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। আমাদেরকে সাপ্লাই ড্রাইভেন চিন্তা না করে ডিমান্ড ড্রাইভেন চিন্তা করতে হবে। এটুআই-এর ফিনটেক ল্যাবে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ব্যবসায় পরিকল্পনা ও দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এটুআই-এর এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল সেন্টারগুলোর বিদ্যমান সুবিধাগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।”  

কর্মশালায় পৃথক আলোচনায় বক্তারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি, লিঙ্গবৈষম্যগত বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান দূরীকরণে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনসহ নারীদের আর্থিক সেবাপ্রদানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এতে জানানো হয়, ২০১৭ সালে গ্লোবাল ফিনডেক্স তথ্যানুসারে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যকার সময়ে বাংলাদেশে আর্থিক লিঙ্গবৈষম্য ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশে পৌঁছায়।

দিনব্যাপী কর্মশালায় আর্থিক সেবাপ্রদানকারী নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠান-বাংলাদেশ ব্যাংক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, অর্থ বিভাগ, বেসরকারি ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, পিকেএসএফ, বীমা কোম্পানি, নারী উদ্যোক্তা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, জয়িতা ফাউন্ডেশন, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং উদ্যোক্তা অ্যাসোসিয়েশনসহ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নারী উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন।

এছাড়া কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এটু্আই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) নাহিদ সুলতানা মল্লিক, ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহম্মেদ এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন