টেকভিশন২৪ ডেস্ক: দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের অন্যতম প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ বাংলাদেশ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিসাফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিষয়ক দিনব্যাপি সম্মেলন “সাইবার সিকিউরিটি সিম্পোজিয়াম ২০২৩”। শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ২৮ অক্টোবর ২০২৩-এ রাজধানীর মহাখালীস্থ “ব্র্যাক ইন” অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সিম্পোজিয়ামে উঠে আসে তথ্য প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং সাইবার সচেতন বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।
বিডিসাফ কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। সকালে উদ্বোধনী পর্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব স্মার্ট বাংলাদেশের বুনিয়াদি ভিত্তি হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতার বিষয়ে আলোচনা করেন। একই সাথে দেশে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির ব্যাবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে উপস্থিত তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের একটি সচেতনতা মূলক নিরাপদ সাইবার এক্সপ্রেস করে তোলার জন্য বিশেষ করে আহ্বান জানান। মাননীয় সচিব বিডিসাফ-এর কার্যক্রমের প্রশংসা করার পাশাপাশি; আইসিটি বিভাগের সাথে বিডিসাফ একসাথে কাজ সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
বিডিসাফের সভাপতি মোঃ জোবায়ের আল মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার সদস্যের এই সংগঠন পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে, ক্লাউড কম্পিউটিং সহ দেশের বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তির বিকাশে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা নামিয়ে আনবে শুন্যের কোটায়। তিনি আরো বলেন চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ চালিয়ে যাবে বিডিসাফ।
“Elivate Cyber Resilience: Uniting for a Secure Bangladesh” বা “সাইবার সহনশীলতা অর্জনের মাধ্যমে গড়ে তুলি নিরাপদ বাংলাদেশ” এই সিম্পোজিয়ামে ছিল দশটি টেকনিক্যাল সেশন, একটি প্যানেল ডিসকাশনসহ একাধিক বক্তিতা। অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসাবে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিডিসাফ-এর উপদেষ্টা বরেণ্য তথ্য প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্যোক্তা শায়েরুল হক জোয়ার্দার নীল। তিনি বলেন সাইবার সিকিউরিটিকে এখন শুধুমাত্র আইটি কার্যক্রম হিসাবে দেখার অবকাশ নেই। সামগ্রিক দিক থেকেই সাইবার সিকিউরিটির জন্য সমন্বিত স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করতে হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দেশের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ক্লাউড “মেঘনা ক্লাউড” এর সিওও সাইফ রহমান। তিনি ক্লাউড প্রজুক্তি এবং সাইবার নিরাপত্তায় সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এমাজন নর্থ আমেরিকা এর স্টার্ট-আপ টিমের প্রধান মেহেদি জামান।
দিনব্যাপী টেকনিক্যাল সেশনগুলোতে পরিচালনা করেন ব্যাংক, সফটওয়্যার নির্মাতা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগন। টেকনিক্যাল সেশনে মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের হেড অফ ক্লাউড নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি রাসকিন পাল, প্রিন্সিপাল সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন, এবং হেড অফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি মুহাম্মদ শওকত আলী বিভিন্ন ধরনের সাইবার টুল, স্ট্র্যাটেজি এবং অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া আইসিডিডিআর,বি-এর সিস্টেম এডমিন শংকর নন্দী, বিজিআইটি-এর হেড অফ ডেভঅপ্স অ্যান্ড ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারিং আমির হোসেন, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিস্থান ব্রেন স্টেশন ২৩ এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মেহেদী হাসান, কনটেসা সল্যুশনসের এসএম রুবায়েত ইসলাম, এবং আলফা কানেকশনের আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার সিকুইরিটি অবকাঠামো নির্মাণের এবং পরিচালনা বিষয়ে টেকনিক্যাল আলোচনা করেন। এছাড়া আকিজ ভেনচূর গ্রুপের হেড অফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি সাহানাজ বেগম ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার ঝুকির বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্যানেল ডিসকাশনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ফোন ও এয়ারটেল বাংলাদেশের সাবেক প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং কনটেসা সল্যুশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, কমিউনিটি ব্যাঙ্কের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাইউম খান, আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিস্থান ডেলয়েট বাংলাদেশ এর পরিচালক জনাব মুইজ তাসনিম ত্বকি এবং মুঠোফোন অপারেটর রবি-এর ভিপি সঞ্জয় চক্রবর্তী। জনাব এম এ কাইউম খান তার বক্তব্যে আর্থিক প্রতিস্থানে সাইবার নিরাপত্তা এর বিষয়ে আলোচনা করেন। সঞ্জয় চক্রবর্তী ডাটা সিকিরিটি ও প্রাইভেসি এর আইনগত দিক তুলে ধরেন। ডেলয়েট বাংলাদেশ এর পরিচালক মুইজ তাসনিম দেশে সাইবার বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি অন্যান্য সফটস্কিল এর বিষয়ে কথা বলেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে খাজা টাওয়ার অগ্নিকান্ডে পরিকল্পনা ও অবকাঠামো বিশয়ক দুর্বলতার বিষয়াদি উঠে আসে। জনাব লুৎফর রহমান তথ্য-প্রযুক্তির দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা এবং নিয়মিত মহড়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। এছাড়া বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ নির্বাহীদের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা হয় প্যানেলে। আইটি অ্যাসেট নিরূপণের মাধ্যমে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা। বলেছেন, টায়ার যা-ই হোক; ডাটা সেন্টার স্থাপনের আগে অ্যাসেসমেন্ট চেকআপ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুরো আলোচনায় যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দুর্যোগকালীন ডাটা সেন্টার স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্যানেল ডিসকাশনসহ দিনব্যাপী অনুস্থান পরিচালনা করেন বিডিসাফ-এর সাধারন সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল সাইবার সিকিউরিটি কুইজ প্রতিযোগিতা। আমন্ত্রিত অতিথি, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং পৃষ্ঠপোষকদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে ধরার মধ্যদিয়ে অনুস্থান শেষ হয়।