ছোটদের সহজ প্রোগ্রামিং শিক্ষায় প্রকাশিত হল বাংলা স্ক্র্যাচ বই

বাংলা স্ক্র্যাচ
বাংলা স্ক্র্যাচ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রোগ্রামিং চর্চাকে সহজ করার লক্ষ্যে “ছোটদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং“ শীর্ষক বই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। ইএমকে সেন্টার এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের উদ্যোগে পরিচালিত “স্ক্র্যাচ ফর টেক এডভান্সমেন্ট” নামে পাঁচ মাস মেয়াদী প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই বই প্রকাশিত হল।

৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছাবির আহমেদ, বিডিওএসএন এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি এর সহযোগী অধ্যাপক ড. বি এম মাইনুল হোসেন, তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি প্রমুখ। মূলত প্রোগ্রামিং ভাষাকে শিশুদের বোধগম্য উপায়ে তাদের কাছে উপস্থাপন করতে এই বই প্রকাশ করা হল। এই বইয়ের মাধ্যমে একইসাথে যেমন শিক্ষার্থীরা মজার উপায়ে প্রোগ্রামিং এর সাথে পরিচিত হতে পারবে তেমনি শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো উপভোগ্য ও সহজবোধ্য করতে এই বইয়ের সহযোগিতা নিতে পারবেন।  

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় যে কয়েকটি দক্ষতায় দক্ষ জনশক্তি দরকার তার মাঝে একটি হল প্রোগ্রামিং। যৌক্তিক চিন্তাভাবনা ও প্রযুক্তিগতভাবে সমস্যা সমাধানে দক্ষ ছেলেমেয়েরাই প্রতিনিধিত্ব করবে ভবিষ্যতের পৃথিবী। আর এজন্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই প্রোগ্রামিং শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সেই অর্থে এখনো প্রাথমিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আইসিটি শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পাননি।৩য়-৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোডিং কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রাকে সমর্থন করতে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় মোট ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২ জন তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষকদের নিয়ে পাঁচমাস মেয়াদী এই প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে বিডিওএসএন। প্রকল্প সময়সীমায় এই শিক্ষকদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং একটি দুইদিনের আবাসিক ক্যাম্পের মাধ্যমে একটি ম্যানুয়াল তৈরী করা হয়। এই ম্যানুয়াল ব্যবহার করে শিক্ষকমন্ডলী তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং এর উপর পাঠদান করেন এবং পরবর্তীতে তাদের অভিজ্ঞতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে একদিনের আবাসিক ক্যাম্পের মাধ্যমে এই ম্যানুয়াল পরিমার্জন ও চূড়ান্ত করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ২২ টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০১৭ জন শিক্ষার্থী স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা নেয় ।  

বই প্রকাশনী উৎসবে শিক্ষকমন্ডলী তাদের ক্লাসরুমের স্ক্র্যাচ পাঠদানের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রতন কুমার বসাক জানান, “ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্লক টেনে টেনে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং প্রথমবারের মত শিখেছি এবং স্কুলে ফিরে শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছি। তাদের আগ্রহ দেখে স্কুলের প্রতিদিনের রুটিনের মাঝে স্ক্র্যাচ ক্লাস যুক্ত করেছি”। একই স্কুলের শিক্ষার্থী সাদমান জানায় “বাসায় পড়াশুনার পাশাপাশি স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং শিখেছি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন গেম তৈরী করতে আমার এখন গেম খেলার চাইতেও বেশী আনন্দ লাগে।“ নরসিংদী থেকে হাতিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবুল আলম জানান, “পাশের স্কুল থেকে মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টর নিয়ে এসে আমার শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছি। ডিভাইস সংকট আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা”। ময়মনসিংহ থেকে হাজী সদর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রওনাক আফরোজা জানান, “বাচ্চারা এমনিতেই ডিভাইস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে তাদের এই নতুন দক্ষতার সাথে পরিচয় করাতে আমাদের অভিভাবকসহ নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতা প্রয়োজন”।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে আমাদের বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা তৈরী করতে তাদের শৈশবকালকে বেছে নিয়েছে বিডিওএসএন। স্কুল পর্যায় থেকে যৌক্তিক চিন্তা করার পদ্ধতি তাদের প্রবলেম সলভার হিসেবে গড়ে তুলবে। আজ আমাদের জন্য খুব আনন্দের দিন যে তৃতীয় শ্রেণীর বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য যে প্ল্যাটফর্ম দরকার তা তৈরীর সব উপকরণ এখন আমাদের আছে। আজকের প্রকাশিত “ছোটদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং“ শীর্ষক বইটি বাচ্চাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে।     

প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী ২২ টি স্কুল হল- ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার হাজী সদর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশোরের অভয়নগরের মধ্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ সদরের নামা কাতলাসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনার তেরখাদার ইখরি কাটেংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেহেরপুর সদরের যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদীর রায়পুরার গকুলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বগইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,শরিয়তপুরের নড়িয়ার রোকুন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদীর রায়পুরার পিরপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদীর মনোহরদীর খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাতিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা সদরের নুরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকার বাংলাবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগুড়ার আদমদিঘীর সান্তাহার হার্ভে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধামরাইয়ের পাল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এর উয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা সদরের নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, নোয়াখালীর হাতিয়ার কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাঁশগাড়ী নং-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ইএমকে সেন্টারের সহযোগিতায় ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের উদ্যোগে প্রকাশিত এই বইটি দেশের অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রোগ্রামিং শিক্ষাকার্যক্রমের সহায়ক হবে এবং দেশের সকল স্তরের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রোগ্রামিং ভীতি দূর করে জটিল সমস্যা সমাধানে  আগ্রহী করে তুলবে। বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে পাঁচমাস মেয়াদী প্রকল্পের সমাপ্তি হয় যার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে পরিচিত হবার সুবিধা পাবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন