জমির খতিয়ান সংগ্রহে হয়রানি কমাবে ডিজিটাল রেকর্ডরুম – ভূমিমন্ত্রী

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, জমির খতিয়ান সংগ্রহে হয়রানি কমাবে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। খতিয়ান সংগ্রহে মানুষের জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যাতায়াত কমে যাবে। এছাড়া দালালদের উৎপাত আর থাকবেনা। 

আজ বুধবার ‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশের ২১টি জেলার রেকর্ড রুমের নাগরিক সার্ভিস ই-সার্ভিস বা ডিজিটাল সার্ভিসে রূপান্তরের কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এমপি এ কথা বলেন।

ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও সিরাজগঞ্জ – আজ থেকে এই ২১টি জেলায় সিএস, এসএ, আরএস ও দিয়ারা জরিপের ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ০৬শত ২৪টি খতিয়ান ডিজিটাল রেকর্ডরুমে পাওয়া যাবে। মৌজার হিসেবে বিভিন্ন জরিপের অন্তর্গত মোট ৯৭ হাজার ৪৪৫ টি মৌজার খতিয়ান প্রকাশ করা হয়েছে। অনলাইনে খতিয়ানের জন্য আবেদন করে শুধু সার্টিফাইড কপি প্রয়োজন হলে তা সংগ্রহ করতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসতে হবে। এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ডিজিটাল রেকর্ডরুম স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করেছে।

ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, অনলাইনে খতিয়ান প্রাপ্তির সাথে সাথে যেন অনলাইনে খতিয়ানের অটোমেটেড সার্টিফাইড কপিও পাওয়া যা সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আন্তরিকতা ও সততার সাথে রূপকল্প অনুযায়ী কাজ করে যাওয়ার কারণে আমরা আজকে কর্মদক্ষতার দিকে দিয়ে শীর্ষ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আসতে পেরেছি।  

আগামী বছরের মধ্যেই সমগ্র দেশে ডিজিটাল রেকর্ডরুমের কার্যক্রম শেষ হবার আশা প্রকাশ করে ভূমিমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা মানুষের আস্থার ঠিকানা হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়কে স্থাপন করতে চাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আমরা ঠিক পথেই আগাচ্ছি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা খুব সচেতনভাবে কাজ করছি। সরকারের জননিরাপত্তা ও আইসিটি বিভাগকে এই বিষয়ে সহায়তার জন্য আমরা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা টেকসই কাজ করছি যেন ভবিষ্যতে যেই আসুক মৌলিক বিষয়গুলো যেন এর নিজের গতিতে চলতে পারে।

এ সময় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মাক্‌ছুদুর রহমান পাটওয়ারী জানান অনলাইন খতিয়ান প্রদান ও ডিজিটাল রেকর্ড রুম তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এ বছর ভূমি মন্ত্রণালয়ের দল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরষ্কার ২০২০’ পুরষ্কার অর্জন করে। জাতিসংঘ পুরস্কার অর্জনের পর এই পুরস্কার অর্জন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভালো কাজের একটি স্বীকৃতি।

এর আগে ডিজিটাল রেকর্ড রুম সংক্রান্ত কারিগরি ও অগ্রগতির উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন মনিটরিং সেলের প্রধান মোঃ দৌলতুজ্জামান খাঁন।

অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এবং জুম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক ড মোঃ আব্দুল মান্নান, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো: আসিব আহসান প্রমুখ।

ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান বেগম উম্মুল হাছনা, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী সহ  ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকবৃন্দ সহ মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা জুম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 

উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মহাফেজখানা তথা রেকর্ড রুম শাখার মাধ্যমে সিএস/আরএস/এসএ/বিআরএস খতিয়ানের জাবেদা নকল আবেদন গ্রহণ ও সরবরাহ, কেস নথি ও মিস কেইস ইত্যাদির নকল প্রদান, যে সকল খতিয়ানের নকল প্রদান করা যাবে না, সে ক্ষেত্রে তথ্য প্রদান ও মৌজা ম্যাপ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৬১ জেলায় জেলা তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে রেকর্ডরুমের সেবা প্রদান কর হতো।

রেকর্ড নাগরিকের জন্য খুবই একটি স্পর্শকাতর একটি ডকুমেন্ট হওয়ায় এই সকল তথ্যকে নাগরিকের জন্য আরও বেশি কার্যকর করার জন্য ডিজিটাল রেকর্ড রুমের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। www.eporcha.gov.bd, www.land.gov.bd, www.dlrs.gov.bd, www.minland.gov.bd সাইট হতে নাগরিক অনলাইনে এই সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন। 

৬১টি জেলার সিএস, এসএ, আরএস ও দিয়ারা জরিপের মোট ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ০১শত ১৩টি খতিয়ান অনলাইনে পাওয়া যাবে। আজকের ২১ জেলার পর পর্যায়ক্রমে (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) বাকি ৪০টি জেলার রেকর্ডরুমকে ডিজিটাল রেকর্ড রুম হিসেবে চালু করা হবে।

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন