বিটিআরসিতে ৪টি কিউওএস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেমের উদ্বোধন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান পরিমাপের জন্য নতুন ও অত্যাধুনিক কোয়ালিটি অব সার্ভিস (QoS) বেঞ্চমার্কিং সিস্টেমের উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযৈাগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

রবিবার দুপুরে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ সিস্টেমের উদ্ধোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা দেশে অব্যাহতভাবে আউটডোর এবং ইনডোর স্থানসমূহে সেবার মান পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Rohde & Schwarz হতে কেনা উচ্চপ্রযুক্তির এই বেঞ্চমার্কিং যন্ত্রপাতির টেস্ট ও ট্রায়াল এবং বিটিআরসি’র জনবলের কারিগরি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন এ সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেবার মান পরিমাপে ০৪ টি ইউনিট ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে ০২টি ভেহিকেল মাউন্টেড চেসিস বেইজড সিস্টেম এবং ০২টি ব্যাকপ্যাক বেইজড সিস্টেম। প্রতিটি চেসিস বেইজড সিস্টেমের মোট ২৪টি টার্মিনালের মাধ্যমে একসঙ্গে সকল অপারেটরের টুজি (2G) ভয়েস, থ্রিজি (3G) ভয়েস, ফোরজি (4G) ভয়েস, থ্রিজি(3G) ডাটা, ফোরজি (4G) ডাটা ও ওভার দ্যা টপ অ্যাপস (OTT) তথা ফেসবুক,গুগল ও হোয়াটসঅ্যাপ এর সেবার মান পরিমাপ করা যাবে। চেসিস বেইজড সিস্টেমগুলি গাড়িতে স্থাপিত হয়েছে এবং এসকল গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানের রাস্তা দিয়ে পরিভ্রমণ করবে। আর ব্যাকপ্যাক বেইজড সিস্টেমের মাধ্যমে আউটডোর স্থানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইনডোর স্থানে (যেমনঃ মার্কেটের অভ্যন্তরে, বিভিন্ন বিল্ডিং এর বেইজমেন্ট, বাড়ি ও অফিসের অভ্যন্তরে ইত্যাদি) সহজে মোবাইল সেবার মান যাচাই করা যাবে। ০৪টি ইউনিটের প্রতিটির সঙ্গে সংযুক্ত স্ক্যানার এর মাধ্যমে যেকোন স্থানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ (অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্কের সিগন্যাল সবল অথবা দুর্বল) এর অবস্থা যাচাই করা যাবে।

QoS বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম সর্ম্পকে বিশদ উপস্থাপনা করেন বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: এহসানুল কবীর। তিনি বলেন, টেলিকম সেবা বর্তমানে মানুষের মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, বিটিআরসিতে স্থাপিত একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সেবার মান পরিামপের চারটি ইউনিট সার্বক্ষণিক সংযুক্ত থাকবে এবং স্মার্ট-মনিটর নামের এ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্রাইভ-টেস্ট কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল ইউনিটের রিমোট মনিটরিং, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং ০৪টি ইউনিটের পরিবীক্ষণের লগ ফাইলসমূহ সহজেই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় গ্রহণপূর্বক পোস্ট-প্রসেসিং অর্থাৎ ড্রাইভ টেস্ট এর ফলাফল দ্রুত প্রাপ্তি সম্ভব হবে।

নতুন যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান পরিবীক্ষণে বিটিআরসির’র নিম্নোক্ত সুবিধা ও সক্ষমতা অর্জিত হবে:
ক) একসঙ্গে ০৪ স্থানে সেবার মান পরিবীক্ষণ করা যাবে।
খ) একসঙ্গে সকল মোবাইল অপারেটরের বিভিন্ন প্রযুক্তির ভয়েস, 3G ডাটা, 4G ডাটা, OTT সেবাসমূহ, নেটওয়ার্ক কাভারেজ পরিবীক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
গ) সিস্টেমটি 5G প্রযুক্তির সেবার মান যাচাই করতে সক্ষম হবে।
ঘ) কেন্দ্রীয়ভাবে সকল যন্ত্রপাতি এবং পরিবীক্ষণ কার্যক্রম লাইভ টাইম পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান টেলিকম খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কল ড্রপ হ্রাস এবং ডাটা স্পিড বৃদ্ধিসহ সেবার মান বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে প্রথমদিকে কিছু মানুষের জন্য মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ঘরে ঘরে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী রয়েছে। গ্রাহক বৃদ্ধি সাময়িক ব্যবসার হাতিয়ার হলেও দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই ব্যবসার জন্য গ্রাহক সন্তুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তিত প্রযুক্তির এই যুগে সেবার মানের দিকে নজর না দিলে গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে। এমএনপি চালু হওয়ায় নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর বদলানোর সুযোগ রয়েছে, তবে কোনো অপারেটরের গ্রাহক সেবার মান সন্তোষজনক নয় বলেও জানান তিনি। ২০১৮ সালে তরঙ্গ নিলাম হলেও ২০২২ সালেও সেই তরঙ্গ পুরোপুরি রোলআউট করতে পারেনি মোবাইল অপারেটররা। ২০২২ সালের মধ্যে সে তরঙ্গ রোল আউট করার জন্য অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বিটিআরসি গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা উন্নয়নশীল দেশের জন্য মাইলফলক বলেও জানান তিনি। মোবাইল ডাটার প্রাইস নির্ধারণ করে দিতে পারলে গ্রাহক উপকৃত হবে উল্লেখ করে তিনি ডাটা প্রাইস নির্ধারণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, টেলিকম খাতে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসি’র অব্যাহত প্রচেষ্টায় নতুন এই বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে সারা দেশে মোবাইল সেবার মান পরিবীক্ষণে এবং সেবার মান উন্নতিকল্পে বিটিআরসি অধিকতর সক্ষমতা অর্জন করবে। শিগগিরই টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বিটিআরসি থেকে দেশের সকল এলাকার মোবাইল সেবার মান নজরদারি করা যাবে এবং অপারেটরদের থেকে রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা আসবে। তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর হওয়ায় বাজারে অনিবন্ধিত থাকবে না। টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার হয় উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি কর্তৃক রেডিয়েশন পরিমাপে পরিবেশ ও মানব দেহের ক্ষতিকর জন্য কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং পরিচালকবৃন্দসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন