সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করে উইমেন ইন ডিজিটাল

নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ক সেমিনার।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আজকের টেকনোলজির দুনিয়ায় ইন্টারনেট ছাড়া জীবনকে আমরা চিন্তা করতে পারিনা। তাই বলে কি ইন্টারনেট আমাদের সব সময় নিরাপত্তা দিচ্ছে? আমরা সবাই কি নিরাপদ? মোটেও তা নয়।

সবাইকে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ক সেমিনার।

শুক্রবার  (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের আয়োজন করে নারী নেতৃত্বাধীন সফটওয়্যার কোম্পানি ‘উইমেন ইন ডিজিটাল লিমিটেড’ এবং ‘উইমেন ইন সাইবার সিকিউরিটি’।

প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করাই উইমেন ইন ডিজিটাল এর মূল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের নারীদের টেকনোলজি তে কাজ করার জন্য বিভিন্ন রকম ইনিশিয়েটিভ নিয়ে আসছে, উইমেন ইন ডিজিটাল শুরু থেকে টেক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করে, তারা নারীদেরকে নানা ধরনের টেকনোলজি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।  কিছু বছর পর উইমেন ইন ডিজিটাল অনুধাবন  করে যে, তাদের কমিউনিটির নারীরা বিভিন্নভাবে সাইবারক্রাইমের/ সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে।শুধুমাত্র কমিউনিটির নারীরা নয় সারা দেশে অসংখ্য নারী-পুরুষ প্রতিনিয়ত সাইবারক্রাইম অথবা সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। আমাদের সকল নারীদের সাইবার ওয়ার্ল্ড এর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০২১ সালে উইমেনের ইন ডিজিটাল প্রথম সেপ্টেম্বর মাস  উইমেন সাইবার  সিকিউরিটি আওয়ার্নেস মাস হিসেবে  ঘোষণা করে এবং পুরো মাস ধরে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

২০২১ সালে সারা দেশে উইমেন ইন ডিজিটাল নানা ধরনের সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং বিভিন্ন রকম ওয়ার্কশপ, ফেসবুক লাইভ, ভার্চুয়ালি নানা ধরণের  প্রোগ্রাম করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর ও  প্রতিষ্ঠানটি  নানা রকমের কাজ কার্যক্রমের পদক্ষেপ নিয়েছে।

উইমেন ইন ডিজিটালের মূলমন্ত্র হচ্ছে নারীদের প্রযুক্তিতে পারদর্শী করে তোলা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা এটি করতে গিয়ে উইমেন ইন ডিজিটালের কমিউনিটি মেম্বাররা নানারকম সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে।

২০২১ সালে উইমেন ইন ডিজিটালের সেপ্টেম্বর মাসে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস মাস হিসেবে ঘোষণা করার পর আমরা দেখতে পারি বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং ইউনিভারসিটিতে সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই থাকে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম। উইমেন ইন ডিজিটাল বিভিন্ন ট্রেনিং এবং প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারীদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি করছে।

আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউএনডিপি, টেকভিশন২৪, এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম,একশনিস্ট ফাউন্ডেশন এবং কবি সুফিয়া কামাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নাসির উল্লাহ। আরো ছিলেন একাশনিস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আ.ন.ম. ফখরুল আমিন (ফরহাদ), কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রতিনিধি লাবিসা রিমা, ‘উইমেন ইন ডিজিটাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আছিয়া নীলা, প্রোগ্রাম হোস্ট নওশীন ইসলাম ন্যায়না, টিম লিডার মৌমিতা মাহফুজ, অর্গানাইজার কুহেলিকা রায় পূজা।

সেমিনারে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর কার্যক্রম তুলে ধরেন  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নাসির উল্লাহ। তিনি বলেন, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন পরিষেবাটি নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণ করে এবং অভিযোগকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তিগত ও আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাইবার বুলিং, ট্রলিং, পরিচিতি তথ্য অপব্যবহার ও প্রকাশ, ব্ল্যাকমেইলিং, রিভেঞ্জ পর্নোসহ বিভিন্ন উপায়ে সাইবার স্পেসে যত হয়রানির ঘটনা ঘটে তার প্রধান শিকার হন নারীরা। ভুক্তভোগী নারীরা অধিকাংশ সময় বুঝতে পারেন না কীভাবে, কী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং কাকে বিষয়টি জানাবেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তারা অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করেন।

এমন নারীদের পাশে দাঁড়াতে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন কাজ করছে। সাইবার স্পেসে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা দেওয়া এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এ সেবার মূল উদ্দেশ্য। তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয় এবং এরপর সংশ্নিষ্ট পুলিশ ইউনিটের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

‘উইমেন ইন ডিজিটাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আছিয়া নীলা বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে সচেতনতা। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ‘অনলাইন নিরাপত্তা’র বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। কম্পিউটার, স্মার্টফোন ব্যবহারের করলেও ইন্টারেনট ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইটে বা অ্যাপ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য অপরিচিত ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার না করাই ভালো। লটারি বা বিভিন্ন পুরস্কারের প্রলোভনে পাঠানো ই-মেইল বা বার্তা খোলা যাবে না। একটি বিষয় মনে রাখলে ভালো হয়, অনলাইনে নানা ধরনের পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে মূলত ব্যবহারকারীদের যন্ত্রে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস পাঠিয়ে সাইবার হামলা চালানো হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রয়োজন শেষ হলে অবশ্যই মুঠোফোনের ব্লুটুথ ও জিপিএস ফিচারটি বন্ধ রাখতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অবস্থান অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ হয়ে যায়। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার ও তিন থেকে ছয় মাস পর পরিবর্তন করা উচিত। কম্পিউটার, মুঠোফোনের পাশাপাশি ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। আমরা অনেকেই ঘরে বা বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লগইন থাকা অবস্থায় কম্পিউটার বা মুঠোফোন চালু রেখে বিভিন্ন কাজ করি। এতে তথ্য চুরির পাশাপাশি পাসওয়ার্ড বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বলেন ‘উইমেন ইন ডিজিটাল’-এর প্রধান নির্বাহী।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হতে হবে সচেতন। সচেতন হলেই ভার্চ্যুয়াল জগতের বিপদ, হয়রানি থেকে মুক্তি মিলবে এবং নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট-সেবা গ্রহণ করা যাবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন