ইন্টারনেট থেকে ভ্যাটের জটিলতা ও আইটিইএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভুক্তির দাবি আইএসপিএবি’র

টেকভিশন ডেক্স : ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% আরোপিত ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার কারণে চলমান ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আইএসপিএবি মনে করছে। গত অর্থ বছরে ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% ভ্যাট নির্ধারিত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা খাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।(সূত্র ১: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নং এস.আর.ও নং-২০৪ আইন/২০১৮/৮০৭-মূসক, তারিখ-২৮ জুন, ২০১৮)। এই সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর (আবুল মাল আব্দুল মুহিত) নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনায় ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।  পরে সে অনুযায়ী ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। (সূত্র ৩: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নং- এস.আর.ও নং-১২আইন/২০১৯/৮২৩-মূসক, তারিখ-১৫ জানুয়ারি, ২০১৯)।

কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরের বাজেটে (২০১৯-২০২০) পুনরায় ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর নের্তত্বে সমাধান করা বিষয়টিতে আবারো আগের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাচ্ছে। (সূত্র ৪:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নং- এস.আর.ও নং-১৭০আইন/২০১৯/২৭-মূসক, তারিখ-১৩ জুন, ২০১৯)। 

ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন)  খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপকে বৈষম্যমূলক এবং মূসক আইনের পরিপন্থি বলেও মনে করছে আইএসপিএবি। ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইএসপিএবি- এর প্রস্তাবনা, ইন্টারনেটের সকল ক্ষেত্রে ৫% অথবা ০% হারে ভ্যাট  আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য ((আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন খাতে ১৫% ভ্যাট) সৃষ্ট নিরসন হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টরনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হবে। এর ফলে সর্বস্তরের ইন্টারনেট গ্রহীতা ও দেশের জনসাধারণ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের সকল শ্রেণির জনগণের কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেটে ভ্যাট জটিলতা নিরসন করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপের পরিবর্তিত কাঠামোটি অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইন্টারনেট সেবাকে একই গতিতে সচল রাখতে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।

আইএলডিসি , আইআইজি এবং আইএসপি ইন্ডাস্ট্রিকে আইটিইএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি

আইএলডিসি, আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এবং আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) একসঙ্গে নির্ভরযোগ্য উচ্চ গতির ইন্টারনেট এক্সেস সরবরাহ করে যা অনেক সংস্থাকে আইটি এনাবেলড সার্ভিসেস ( আইটিইএস) এ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম করে তোলে। আইটিইএস, আইটি সুবিধাসম্পন্ন সার্ভিসেসের একটি সংক্ষিপ্ত রুপ, যা খুব বেশি পরিচিত নয় এবং প্রায়শই ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং নীতি নির্ধারকরা একে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। এটি যৌক্তিক যে, আজকের আধুনিক এবং কম্পিউটারাইজড বিশ্বের প্রতিটি জিনিসই আইটি সক্ষম। বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে ভিন্ন ধারনা রয়েছে। তবে, সহজ ভাষায় আইটিইএস অর্থ – ইনফরমেশন টেকনোলজি যা সেবার মান উন্নত করে ব্যবসাকে সক্ষম করে তোলে। মূলত একে আইটি সক্ষম পরিষেবা বলে অভিহিত করা হয়।

যৌক্তিক কারণেই আইএলডিসি, আইআইজ ও আইএসপিকে আইটিএস ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভ্ক্তু করা উচিত। বিটিআরসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৮০ লাখ ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী আছে। আইটিইএস-এ অর্ন্তভুক্ত হলে আইএসপি ইন্ডাসট্রিজগুলোর ট্যাক্স প্রদানে সুবিধা হবে, যা ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক প্রসারে ব্যবহৃত হবে। ব্রডব্যান্ডের নেটওয়ার্ক বিস্তারের ফলে আশা করা যায়, বাংলাদেশে আগামী ১ বছরে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সংখ্যা২কোটিতে রুপান্তর হবে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ১০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১.৩৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটে। অতএব, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আমরা বলতে পারি যে, ২ কোটি ব্রডব্যান্ড সংযোগ মানে জিডিপির ১০-১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। জিডিপির ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি মানেই বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, প্রতি ১ হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অতএব, আরও ১ কোটি ২০ লাখ সংযোগ মানে আগামী ১ বছরে প্রায় ১২০০০ কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান।

আইটি সক্ষম পরিষেবা বা আইটি অ্যানাবলড সার্ভিসেস এর মধ্যে ২২ ধরনের আইটিইএস পরিষেবা রয়েছে। এগুলো হলো –

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপলিকেশন কাস্টমাইজেশন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল এ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিসেস, ওয়েবলিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েব হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি এন্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডাটা এনালিটিক্স, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট টেস্ট ল্যাব সার্ভিসেস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিসেস, কল সেন্টার সার্ভিসেস, ওভারসিস মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডকুমেন্ট কনভারসেশন, ইমেজিং এন্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবটিক্স আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস।

উল্লেখ্য যে, প্রায় সমস্ত আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপি একই ফর্মে বা ভিন্নভাবে আইটিইএস পরিষেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়া আইটিইএস সরকারি নীতিমালা গঠনের আগে থেকেই ওয়েব পৃষ্ঠার নকশা, উন্নয়ন ও হোস্টিং, ই-মেইল হোস্টিং, আইটি ও নেটওয়ার্কিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস, কল সেন্টার সার্ভিসেস, টেলিমার্কেটিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লুকিং গ্লাস ইত্যাদি সেবা প্রদান করে আসছে।

যেহেতু ইন্টারনেট আইটিইএস পরিষেবাগুলোর প্রধান, সে কারণে আমরা বিশ্বাস করি – আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপি উভয়ই আইটিইএস বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য। আইএলডিসি, আইআইজি এবং আইএসপিকে আইটিইএস বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হলে আইটি খাতে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হবে, যা পুরো আইটি শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। উরোক্ত বিষয়টিতেমাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন