বিটিআরসির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পিএসটিএন অপারেটর ওয়ার্ল্ডটেলের মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে খারিজ

বিটিআরসি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর বিরুদ্ধে জনাব নাঈম এ. চৌধুরী কর্তৃক দায়েরকৃত ২.৩৯ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখে খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালত।

গত ১৯ মার্চ ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জনাব নাঈম এ. চৌধুরী বিটিআরসি এবং VEON (বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান) এর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত মামলায় জনাব চৌধুরী নিজেকে বিটিআরসি থেকে পিএসটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটর ওয়ার্ল্ড টেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে দাবি করেন। গত ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে বিটিআরসির তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। জনাব চৌধুরী দাবি করেন যে, উক্ত নিলামের কারণে তার প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে তিনি বিটিআরসি এবং VEON-এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপুরণ দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে উক্ত মামলা দায়ের করেছেন। উল্লেখ্য যে,  উক্ত নিলামে ১৮০০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম ব্যান্ড VEON এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক এবং অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

মামলাটি ২১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১লা অক্টোবর ২০২১  তারিখে বিটিআরসি মামলাটি খারিজের জন্য এই মর্মে বিজ্ঞ আদালতে একটি আবেদন দাখিল করে যে, সার্বভৌম দায়মুক্তি আইন অনুযায়ী বিটিআরসির বিরুদ্ধে চৌধুরীর দাবিগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Foreign Sovereign Immunities Act (FSIA) বিদেশী সার্বভৌম দায়মুক্তি আইন অনুযায়ী  বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত একটি বিদেশী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের বিচারিক এখতিয়ার থেকে মুক্ত থাকবে।

গত ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টের বিচারক জন পি ক্রোনানের এর আদালত বিটিআরসি’র আবেদন মঞ্জুর করেন এবং মামলাটি উক্ত আদালতের এখতিয়ারের বহির্ভূত হওয়ায় তা খারিজ করে দেন। তিনি আদেশে উল্লেখ করেন যে, বিটিআরসি বাংলাদেশের একটি সংবিধিবব্ধ সংস্থা হিসাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের সার্বভৌম দায়মুক্তির আওতায় পড়ে এবং বিটিআরসি যুক্তরাষ্ট্রের FSIA এর অধীনে একটি বিদেশী সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যেহেতু বিটিআরসি মামলার দায় থেকে মুক্ত, সেহেতু বাদী কর্তৃক আনীত অভিযোগ সংশোধনের সুযোগ নেই। তৎপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির মামলা সম্পূর্ণ খারিজ হয়ে গেছে।

মামলার অপর বিবাদী VEON এর বিষয়ে জনাব চৌধুরী যদি একটি সংশোধিত অভিযোগ দায়ের করতে চান এবং মামলাটিতে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হোন, তবে বাদীকে আগামী ২৯ এপ্রিল ২০২২ এর মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে ৷ যদি বাদী সেই তারিখের মধ্যে অভিযোগ সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়, তবে বিজ্ঞ আদালত VEON-এর মামলাটি খারিজ করার পাশাপাশি এই মামলার রায় প্রদান করবেন।

এই রায় বিটিআরসির জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক ।  এটি নজির স্থাপন করলো যে, বিটিআরসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সার্বভৌম দায়মুক্তি আইনের অধীনে একটি সার্বভৌম সত্ত্বা হিসাবে বিবেচিত হবে। এই মামলা পরিচালনার জন্য বিটিআরসি বাংলাদেশের স্থানীয় অ্যালায়েন্স লজ (Alliance Laws) এর আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ফোলি হোয়াগ এলএলপিকে (Foley Hoag LLP) আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিল।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আদালতেও বিটিআরসির বিরুদ্ধে ওয়াল্ডটেল একাধিক মামলা রুজু করেছিল যার প্রত্যেকটিতে তারা পরাজিত হয়েছে।

বিটিআরসির প্রেস মিডিয়া উইংস থেকে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ-সব তথ্য জানানো হয়। 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন