বিটিসিএল’র ফাইভজি প্রকল্পের বাণিজ্যিক প্রস্তাব উন্মোচন

ছবি গুগল থেকে

বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন’ প্রকল্পটি জটিলতা কাটিয়ে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। অবশেষে আদালতের রায়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন” প্রকল্পের জিডি-১ প্যাকেজের আর্থিক প্রস্তাবনা (ফিনান্সিয়াল অফার) গত ৮ নভেম্বর উন্মুক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আর্থিক প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রেসপন্সিভ ৩টি কোম্পানির মধ্যে চীনের টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে প্রায় তিনশত ছাব্বিশ (৩২৬) কোটি  টাকা দরপত্র করে কার্যাদেশ পেতে এগিয়ে। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য দুটি কোম্পানি হচ্ছে চীনের অপর টেলিকম কোম্পানি জেডটিই এবং ফিনল্যান্ডের টেলিকম জায়ান্ট নকিয়া। যাদের দাখিলকৃত দরপত্রমানি ছিল চারশত পনের (৪১৫) কোটি ও পাঁচশত উনআশি (৫৭৯) কোটি টাকা । ফলে কার্যাদেশ প্রাপ্ত হুয়াওয়ে থেকে ২য় স্থানে অবস্থানকারী জেডটিই এর ব্যবধান প্রায় নব্বই (৯০) কোটি টাকা।

জানা গেছে, হুয়াওয়ের প্রস্তাবিত মূল্য প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের (৪৬৩ কোটি টাকা) তুলনায় ১৩৭ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ কম। হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের শর্তানুযায়ী কার্যাদেশপ্রাপ্ত কোম্পানি হিসেবে সর্বাধুনিক মডেলের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে হুয়াওয়ে।

সূত্রমতে, গত ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)’র সভার সিদ্ধান্ত ৪.৪ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি) সম্পন্ন করা হয়। সরকারের ২৮.৭৫ লক্ষ টাকা খরচের এই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি রিপোর্ট ২০২১ সালের এপ্রিলে জমা প্রদান করা হয়, যার ভিত্তিতে “৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন” প্রকল্পের ডিপিপি বুয়েট কর্তৃক প্রনীত সমীক্ষার আলোকে প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে সংস্থা প্রধান হিসেবে বিটিসিএল এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ রফিকুল মতিন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তৎকালীন সচিব জনাব মোঃ খলিলুর রহমান এর স্বাক্ষরের পর এ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ডিপিপি উপস্থাপিত হয়। উক্ত সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মহাসড়কে উঠবে। সার্বিক বিবেচনায় তিনি প্রকল্পটি অনুমোদনের অনুরোধ জানান। একনেক সভায় ঐদিন প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অতঃপর বর্নিত প্যাকেজের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের নিমিত্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কর্তৃক অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১৩ এপ্রিল কারিগরি বিনির্দেশ (Technical Specification) প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

যেহেতু টেন্ডারটি ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত, তাই বিটিসিএল এর ট্রান্সমিশন বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয় এবং এ কমিটিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত ছিল। উক্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দীর্ঘ প্রায় ৫ (পাঁচ) মাস ধরে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং ট্রান্সমিশন খাতে কাজ করেছে এমন সম্ভাব্য দরদাতা এবং বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে বিটিসিএল এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ২ জুন মতবিনিময় সভা করেন এবং তাদের মতামত, পরামর্শ গ্রহণপূর্বক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ডিপিপির আলোকে দরপত্রের কারিগরী বিনির্দেশ প্রস্তুত করেন। এই কারিগরি বিনির্দেশটি সংস্থা প্রধান হিসেবে বিটিসিএল এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ রফিকুল মতিন ঐ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদন করেন।

কারিগরি বিনির্দেশের আলোকে ১৩ সেপ্টেম্বর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন করা হয়। দরপত্র বিনির্দেশ প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রনীত বিনির্দেশটি হোপ অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিটিসিএল কর্তৃক অনুমোদনের পর এ প্যাকেজের ক্রয় কাজের বিপরীতে পরদিন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রটিতে সিপিটিইউ এর স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট (পিচি-৫এ) ব্যবহার করা হয় এবং এটা এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর নির্ধারিত সময় ও বিধি অনুসারে প্রথমে কারিগরি প্রস্তাব ও পরবর্তীতে আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্ত ও পর্যালোচনা এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

প্রকল্পের দলিল (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা হবে ২৯৮০০ জিবিপিএস যা বুয়েটের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য যে, বর্ণিত দরপত্রে ১২৬২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের সংস্থান রাখা হয়েছে যা উল্লেখকৃত ক্যাপাসিটির চার গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। বিটিআরসি’র প্রক্ষেপণে ২০৩০ সাল নাগাদ সারাদেশের ব্যান্ডউইথ এর সম্ভাব্য চাহিদা হবে ৩৭৫০০ জিবিপিএস। যার ৩০% হিসেবে ১১২৫০ জিবিপিএস যা বিটিসিএল বহন করবে। সে তুলনায় আলোচ্য টেন্ডারে ১২৬২০০ জিবিপিএস ক্যাপাসিটি’র সংস্থান রাখা হয়েছে যা বিটিআরসি এর প্রক্ষেপণের প্রায় ১২ গুণ বেশি। সুতরাং, এই ক্যাপাসিটির ব্যান্ডউইথ দিয়ে ২০৩০ সালের চাহিদা মিলিয়ে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার নিমিত্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন