দেশে অনলাইন নিরাপত্তা সহায়ক হতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা চায় ইঞ্জিনিয়ার রেইনী

ইসরাত জাহান রেইনী।

সাইবার ক্রাইম আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো তেমন ব্যাপকতা পায়নি। তবে সামাজিক অবক্ষয় বা অন্য যেকোনো কারণে ব্যক্তিগত লেভেলে সাইবার ক্রাইমের কিছু ঘটনা ঘটছে অহরহ। যেমন কারও ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য নোংরাভাবে উপস্থাপন করে হেয় করা, ব্ল্যাকমেইল করা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনা পত্রিকায় মাঝে মাঝেই দেখি। এসব তথ্য বা ছবি সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া, যা অপরাধীদের জন্য অনেক সহজ। কারণ ভিকটিম নিজেই অপরাধীদের কাজ সহজ করে দেয়। এসব অপরাধের পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কিছু বিষয় মূলত কাজ করে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, হতাশা, পারিবারিক অশান্তি, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখযোগ্য। 

এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশে অনলাইন নিরাপত্তা সহায়ক হতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা চায় ইঞ্জিনিয়ার রেইনী। বিস্তারিত শুনুন তার কাছ থেকে..

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ইসরাত জাহান রেইনী। ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর জন্ম নরসিংদীর সদরে। ছোট থেকেই অতি চঞ্চল এক দূরন্তপনা রেইনি। বাবা-মায়ের আর পরিবারের অত্যন্ত আদরের বড় মেয়েটি প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে স্কুলে পা রাখেতই তার মনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বড় হয়ে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। এসএসসি পাশ করেন গাজীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী তারাগঞ্জ এইচ.এন. উচ্চ বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজ থেকে। এরপর এইচএসসি পাশ করেন নরসিংদী জেলা থেকে। এইচ এস সি র পর থেকে শুরু হয় ইসরাত জাহান রেইনীর জীবনের পথ চলা। পরিবারের ইচ্ছায় বাধ্য হয়ে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন থেকে সরে এসে অনলাইন জগতের কিংবদন্তি হতে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। অতপর ভর্তি হন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। 

সেখান থেকে শুরু হয় ইসরাত জাহান রেইনীর পথ চলা। পড়াশোনার পাশপাশি একই ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয় কর্মজীবনও। পড়াশুনা করা অবস্থায় তিনি Global সর্ফটওয়ার আর্কিটেকচার এবং ভিউজিয়াল আইটি কোম্পানীতে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ঘরে বসে প্রতি মাসে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে আয় করেন রেইনি। অতপর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে সাফল্যের সঙ্গে বিএসসি পাশ করেন।

বিএসসি থেকেই শুরু হয় সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন। পরিচিক এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেণো নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি এবং এম এস সি সবই এক সাথে চলতে থাকে।

২০১৯ সালে বহু প্রতিক্ষার পর EC Council Certified Ethical Hacker এবং কিছু দিন আগে আবার EC Council Certified Computer Forensic Investigator হন।

সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পড়া এবং আইসিটি সেক্টরের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন বুনেন ইসরাত জাহান রেইনী। নিজ উদ‌্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন আইসিটি সিকিউর প্লাস প্রতিষ্ঠান।  

আইটি ফেস্ট ২০২২ এ ইসরাত জাহান রেইনী।

নবীন এই নারী উদ্যেক্তা কাজ করছেন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে। রেইনীর স্বপ্ন বাংলাদেশের প্রযুক্তি নির্ভর মানুষের ,বিশেষ করে নারীদের সাইবার নিরাপত্তা দিতে নিরলস ভাবে কাজ করছেন। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই সমাজে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফুরন্ত সহযোগীতায় যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করে  দেশের প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় আজ পৌছে গেছে ইন্টারনেট কিংবা অনলাইন সেবা। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য শুভ বার্তা। পাশপাশি অপরপৃষ্টে হতাশাও রয়েছে। কারন বর্তমানে সাইবার জগতের সাথে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ অনলাইনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত। কিন্তু তারা জানে না যে সাইবার বা অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন তার জন্য নিরাপত্তা বলয়ও প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জণের। আর তাই সাইবার নিরাপত্তা দিতে এই প্রথম কোন নারী উদ্যোক্তা সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছনে দেশ ব্যাপী। সভা-সেমিনার থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে সচেতন করে তোলা হচ্ছে ।

তবে প্রশ্ন ছিলো কেন তিনি এই আইসিটিতে আসলেন আর কেনইবা তিনি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন।

রেইনি : আইসিটি সেক্টরে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে মানুষ বেশির ভাগ প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয়েছে। নিচ্ছেন অনলাইনের যাবতীয় সেবা। এমনকি সাইবার জগতের সাথে নিজেকে এমনভাবে সম্পৃক্ত করেছেন যা ছাড়া প্রায় অচল অফিসিয়াল কিংবা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড। তবে যে সুবিধা তারা নিচ্ছেন হয়তো তারা জানেওনা তারা কতটা সাইবার বা অনলাইন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভাইবার, টুইটার , ডাটাবেজ, ব্যাংকিং লেনদেন সবকিছুই চলছে অনলাইনে অর্থাৎ সাইবার জগতের মাধ্যমে। তার সাথে মাঝে-মাঝে এটাও শোনা যায় অনেকেই  সাইবার ক্রাইমের  শিকার হয়। হ্যাক করা হয় তার আইডি।এমনকি হ্যাক হওয়ার কারনে অনেককে পড়তে হয় আইনি জটিলতায়। সেই জটিলতা থেকে বেড়িয়ে আসতে এবং সচেতন হতে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরী। আর তাই দেশের প্রত্যকেটি মানুষকে সাইবার ক্রাইমের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং নিরাপত্তা দিতেই এই উদ্যোগ নিয়ে আইসিটি সেক্টরে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।

প্রশ্ন ছিলো মানুষ কেনো সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়? উত্তরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ইসরাত জাহান রেইনি বলেন সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়ার মূল কারণ হলো অসতর্কতা। ফেসবুক, ইউটিউব এ্যকাউন্ট খুলতে পারলেই সব হয়ে যায় না। প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যন্তরীন কিছু নিয়ম জানতে হয়। ধরুণ একটা সাগরে জাহাজ চলছে এখন নাবিক যদি সতর্কতার সাথে জাহাজ না চালায় তাহলে জাহাজ অবশ্যই সাগরে ডুবে যাবে? প্রযুক্তির বেলাও ঠিক তাই। ঠিক মত ব্যবহার করতে না জানলে সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে অনেক মানুষ যেমন আইনের জটিলতায় পড়েছে ; তেমনি সাইবার বা অনলাইনে নিজেকে মোকাবেলা করতে না পারলে নিজের জীবনের স্বপ্ন আর ভবিষ্যতও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি সাইবার নিরাপত্তা না থাকার কারনে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের মত কাজেও নিজের অজান্তে যুক্ত হতে পারে।

সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট ইসরাত জাহান রেইনির কাছে প্রশ্ন ছিলো এটিতো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ? কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, আমি জানি। আর এটাও আমার জানা যে প্রযুক্তিগত ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব। ব্যাক্তিগত উদ্যাগে যতটকু করছি তা দেশ সেবার মানসকিতা থেকেই করছি। তবে আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারিভাবে সহযোগীতা পেলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি দেশবাসীকে সাইবার ক্রাইমের হাত থেকে রক্ষা করা বা সাইবার নিরাপত্তা সর্ম্পকে সচেতন করে তোলা সম্ভব।

বর্তমানে আইসিটি সিকিউর প্লাস এর অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে রেইনি বলেন, আমি মূলত সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশের অন্তত ৩০ টি প্রতিষ্ঠানে সাইবার ক্রাইম রোধের জন্য সেমিনারও করেছি। যার সতর্কমূলক বার্তা বলা যেতে পারে। একজন ব্যবহারকারী জানে না আসলে সাইবার সিকিউরিটি কি? এটা জানানো এবং সতর্ক থাকার জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে কাজ করতে আইসিটি সিকিউর প্লাস  হাউস প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এসব বিষয় নিয়ে এখন রীতিমতো ব্যস্ত সময় পার করছি।

টেকনোলজি সেক্টরের কয়েকজনের সাথে ইসরাত জাহান রেইনী।

এই সেক্টরে অর্থাৎ আইসিটি নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা কি ভাবে পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে নারীরা বেশির ভাগ সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। যার ফলে অনেকের সংসারও ভেঙ্গেছে। অনেকই আত্নহত্যা পর্যন্ত করার নজির দেশের গনমাধ্যমগুলোতে ফুটে উঠেছে। এছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টরেও অনলাইন কার্যক্রমে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। প্রসঙ্গত কারনে বলতেই হয়, যদি পর্যাপ্ত সাইবারা নিরাপত্তা থাকতো তাহলে বাংলাদশে ব্যাংকের টাকা লুট হতো না। তবে এর সাথে এটাও মনে করি অনকে ব্যাংকে এখনো সাইবার নিরাপত্তার ঘার্টতি রয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়েছে। তবে বিশেষ করে আমার পরিবার আমাকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার জন্য ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছেন।

প্রশ্ন ছিলো সত্যিই কি সাবইবার ক্রাইম প্রতিরোধ করা সম্ভব? উত্তরে ইসরাত জাহান রেইনি বলেন ,অবশ্যই সম্ভব ।এজন্য বর্তমানে আমাদের প্রয়োজন সরকারি পৃষ্টপোষকতা। সরকার সামান্যতম আন্তরিকতা আর সহযোগীতা পেলে সাইবার ক্রাইম নির্মূল করা সম্ভব।

আর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা সর্ম্পকে পরমর্শ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিন যতই যাচ্ছে ততই মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। সামাজিক এই মাধ্যমটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা হয়তোবা আছে। কিন্তু  এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিগুলো দরকার সেগুলো তারা প্রয়োগ করতে জানেন না। যার ফলে দেশে অনেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন