চাই আরও বাজেটবান্ধব আইসিটি সেক্টর : রেজওয়ানা খান

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ দুটি শব্দ এবং এই দুই শব্দকে প্রতিষ্ঠিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করছেন। নিশ্চয় সবার মনে আছে সেইসব দিনের কথা। যখন শুরু হয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা তখন নানান জনে নানান কথা বলেছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ এক মূহূর্তের জন্য পিছপা হয়নি। বর্তমানেও তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আমাদের প্রিয় জুনাইদ আহমেদ পলক ভাই। তিনিও কাজ করছেন প্রতিনিয়ত এই সেক্টর পরিবর্তন।

      ছবি ফোকাস বাংলার সৌজন্যে।

বাংলাদেশ আজ সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর হয়েছে। অনেকে লালসবুজের এই প্রিয় আমাদের দেশটিকে অনুসরণ করছে। অনেক দেশের প্রধান আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আইকন মেনে অনুসরণ অনুকরণ করে, এটাই তো আমাদের বড় পাওয়া। যাই হোক, এবার বাজেটের দিকে আসি। বাজেট পেশ হয়েছে। সব সেক্টরের মতো আমাদের কাজের জায়গা, প্রাণের জায়গা, প্রিয় তথ্য ও প্রযুক্তি সেক্টরেও বাজেট প্রস্তাব হয়েছে। কিন্তু ওই যে এখন তো আমাদের দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। তা ভুলে গেলে চলবে না। ২৪ ঘন্টায় জীবনের পুরোটুকু তো এখন প্রযুক্তিময়। প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের কি একমূহুর্তও চলছে, চলছে না। তাই সব দিক থেকে বিবেচনা করে দরকার আরও বাজেটবান্ধব আইসিটি সেক্টর।

এবার আসি মূল আলোচনায়। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৬ শতাংশ বেশি। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সুখের সংবাদ। করোনা মোকাবিলা করে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানামুখী কৌশলসহ ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্নিং, ই-বুক, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং সেবা থেকে উদ্ভূত আয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি হার্ডওয়্যার পণ্য বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও ২২টি আইটিইএস খাতকে আরও সম্প্রসারণের প্রস্তাব পেশ করেন আমাদের অর্থমন্ত্রী।

আইসিটি সেক্টরের বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তির কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটে কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত ২২টি আইটিইএস খাতকে আরও সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব পেশ করছি। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশন ত্বরান্বিত হবে, সহজে ও কম খরচে উন্নত ডিজিটাল সেবাকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা যাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দেশে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হবে। ক্লাউড, সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং সেবা হতে উদ্ভূত আয়কে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব পেশ করছি। এছাড়াও কতিপয় আইটি হার্ডওয়্যার বাংলাদেশে উৎপাদন করলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবো এমন বাজেটের জন্য। আসলে দেশের ইতিহাসে এটি বড় বাজেট, তাই প্রস্তাবিত এই ভালোমন্দ দুইদিকই থাকবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে বেশিরভাগই ভালো আর এমনটাই হওয়া উচিত। আমি এই বাজেটের অবশ্যই প্রশংসা করব। তবে ছোটছোট যে দিকে খেয়াল রেখে আরও বাজেটবান্ধব করা উচিত আইসিটি সেক্টর, সেগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলে চলবে না। ছোটছোট দিক হলেও বিষয়গুলোকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে রেখে চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর উপর কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তাতে যা দাঁড়ালো এই ট্যাক্স আসলে গ্রাহক পর্যায় থেকেই আদায় করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে গ্রাহকেরা এমএফএস এ নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়া নেতিবাচক আরো একটি দিকের মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে ইন্টারনেট সেবাকে আইটিইএস সেবার আওতায় না আনা। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের করের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এটি না করে ইন্টারনেট ওপর ভিত্তি করে যেসব নতুন নতুন সেবা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে সেগুলোর উপর কর ধার্য করা যেত। এসব বিষয় সরকারকে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, দেশে ই-কমার্সের প্রসার ঘটাতে এবং ই-কমার্স খাতে নতুন উদ্যেক্তা তৈরিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে ই-বাণিজ্য করবে, নিজের ব্যবসা গড়ব শিরোনামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ই-কমার্সকে উৎসাহিত করার কথা বললেও উৎসে করের সংজ্ঞায় ই-কমার্সকেও নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে উৎসে করের আওতায় চলে আসছে ই-কমার্স। এতোদিন ই-কমার্স উৎসে করের আওতামুক্ত ছিল। তবে কি আকারে কিংবা কত হারে উৎসে করারোপ করা হবে তার উল্লেখ নেই প্রস্তাবিত বাজেটে।

এখন কথা হলো, মাত্র শুরু হওয়া এবং ঘুড়ে দাঁড়ানো ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটি হয়তো বড় ধরনের একটি ধাক্কা হতে যাচ্ছে। এই ধাক্কা যদি না সামলাতে পারে এই সেক্টর তবে বড় ধরনের একটি বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। আমার মনে হয় ই-কমার্সের উৎসে করের ব্যাপারে আরেকবার চিন্তাভাবনা করে এগুনো উচিত হবে। যার কারণ বার বার বলা হচ্ছে এবারের বাজেট ই-কমার্স বান্ধব নয়।

আর বাজেটের পর ই-কর্মাস নেতারাও কিন্তু বলছেন, এই খাত এখনো লাভের মুখ দেখেনি এবং বেশিরভাগ উদ্যোক্তা এখনো নিয়মিত হয়ে উঠেনি। তাই এই সময়ে ই-কমার্সখাতকে উৎসে করের আওতায় নিয়ে আসলে এর বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হবে। ই-বুক ও ই-লার্নিং থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া ই-কমার্স কোম্পানীর অফিস ও গুদামভাড়া মওকূপ, ক্রসবর্ডারে প্রণোদনা, নূন্যতম কর ০.১% করা, ভিডিএস কর্তন হইতে ৫ বছরের জন্য এই খাতকে অব্যাহতি প্রদান, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের সীমা ১ কোটি টাকা নির্ধারণ এবং অনলাইন পেমেন্টে ভ্যাট প্রত্যাহার, অনলাইন ডেলিভারিতে ভ্যাট ন্যূনতমকরণ, ফুড ডেলিভারি সেবায় ভ্যাট হ্রাসকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন তারা। তাই আরো বলতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনও ভাবতে হবে।

আইসিটি খাতের বাজেটের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশে ফাইভ-জি চালু করতে প্রাথমিকভাবে ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজ ও ৩৩০০-৩৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড (তরঙ্গ) নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। সরকার চলতি বছরে দেশে ফাইভ-জি চালুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এর আগে দ্রুত পরিবর্তনশীল টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রাহকদের মোবিলিটি ও উচ্চতর ডাটারেটের চাহিদার উত্তরোত্তর বাড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে ৮ মার্চ ১৮০০/২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম সম্পন্ন করেছে বিটিআরসি।

এছাড়া ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইটি ফ্রিল্যান্সিং পেশা থেকে উদ্ভূত আয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। কতিপয় আইটি হার্ডওয়্যার বাংলাদেশে উৎপাদন করলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহিত প্রদানের প্রস্তাব করছি।’

ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে আইটি সেক্টরে এরই মধ্যে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে আরও ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চলতি বছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এমনটিও জানিয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এরই মধ্যে বছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। বাকি আছে সাত মাস। বাজেট বক্তৃতায় তিনি কিন্তু আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে আইটি সেক্টরে এরই মধ্যে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে আরও ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ হওয়ায় অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এই হার উন্নত বিশ্বে ২০-২৫ শতাংশের বেশি নয়। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।’

অর্থমন্ত্রী জানান, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’, ‘ভিশন ২০৪১’ ও ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর বাস্তবায়নে দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানে পারদর্শী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয় সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার সঙ্গে শিল্পের নিশ্চিত যোগসূত্র স্থাপন করা হচ্ছে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ যে আরো এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকে কোনো সন্দেহ নেই। আমরাও চাই এগিয়ে যাক। তারপরও যেটুকু মন্দদিকগুলো আছে সেগুলো ভালোদিকে নিয়ে আসতে কাজগুলো করতে হবে।

এরপর ই-লার্নিং। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা হিসাবে ই-লার্নিং এবং ই-বুককে ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবেল সার্ভিসেসের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয় এবারের বাজেটে। এছাড়া আদালত হবে ই-কোর্ট প্রসঙ্গে। দেশের প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্টে পরিণত করা হবে। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মামলার বর্তমান অবস্থা, শুনানির তারিখ, ফলাফল ও পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে ওয়েবসাইটে। বিচার কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় দেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা হবে। সুপ্রিমকোর্টসহ অধস্তন আদালতের সব কার্যক্রমকে অটোমেশন এবং নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। অবশ্যই এই উদ্যোগগুলো নেয়া এখন জরুরি।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবাদাতা (এমএফএস) কোম্পানিগুলোর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে। প্রস্তাবে তালিকাভুক্ত এমএফএস কোম্পানির ক্ষেত্রে কর হার বাড়িয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত ছাড়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এটিও আগে ছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। দেশে এখন বিকাশ, নগদ, রকেট, শিওরক্যাশ, ইউক্যাশ ও এমক্যাশসহ ১৫টি কোম্পানি এমএফএস সেবায় রয়েছে। তাই আবারো বলছি ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর উপর কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তাতে যা দাঁড়ালো এই ট্যাক্স আসলে গ্রাহক পর্যায় থেকেই আদায় করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে গ্রাহকেরা এমএফএস এ নিরুৎসাহিত হবে।

দেশীয়ভাবে হ্যান্ডসেট তৈরিতে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আরও ২ বছর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত মোবাইলের সিংহভাগই এ দেশে উৎপাদন ও সংযোজন হয়। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা ২ বছরের জন্য বর্ধিতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু কম্পিউটার যন্ত্রাংশের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে দেশে উৎপাদিত কম্পিউটারের দাম কমবে। একইভাবে ব্র্যান্ড পিসির তুলনায় একই মানের ক্লোন পিসির দাম কমতে পারে। পাশাপাশি মোবাইলের মতো বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ তৈরির কারখানা স্থাপনের সুযোগ তৈরি হলো। মন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, মোবাইল সিম ব্যবহার করে সেবা গ্রহণের বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, বার্তা পাঠানো এবং ডাটা ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাবে। উত্থাপিত বাজেটে কমানো হয়নি ২০০ টাকা সিমট্যাক্সও। মুঠোফোনে ১০০ টাকার কথা বলায় ৩৩ টাকা ২৫ পয়সা এবং ডাটা ব্যবহারে প্রায় ২২ টাকা খরচ অপরিবর্তিত থাকছেই।

দেশের আইটি কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু দিন দিন বড় হচ্ছে। এই সেক্টরও বড় হচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা এবং দক্ষ লোকবলও তৈরি হয়েছে। এই সেক্টর নিয়ে সরকারকে আরো ভাবতে হবে। আরও বাজেটবান্ধব সেক্টরে পরিণত করতে হবে। তা হলেও আইসিটি সেক্টরে সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাই শান্তি শ্বাস নিতে পারবে। আর আমরাও ছোট বড় সব উদ্যোক্তা, এমন কি সব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিবছর বাজেট শেষে ভালোদিকগুলো নিয়ে এগিয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা করি। আর এগিয়ে যাক আমাদের বাংলাদেশ।

লেখক : রেজওয়ানা খান
সিইও, স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেড (এসসিএসএল)

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন