গ্রামীণফোন একযোগে ১৫৯ কর্মী ছাঁটাই করেছে

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: এবার ১৫৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে গ্রামীণফোন। এসব কর্মীর জন্য ভলেন্টারি রিটায়ার্ডমেন্ট স্কিম (ভিআরএস) বা স্বেচ্ছা অবসর পরিকল্পনা দিয়েছিলো মোবাইল ফোন অপারেটরটি। যা নেয়ার মেয়াদ শেষে হয়েছে ১৭ জুন। এই কর্মীরা ভিআরএস নেননি। এরপর রোববার সন্ধ্যায় একযোগে তাদের ছাঁটাই নোটিশ পাঠায় গ্রামীণফোন।

কর্মীদের অভিযোগ, তাদের এক বছরেরও বেশি সময় কর্মহীন করে রাখা হয়েছিলো। চাকরি হতে সরাতে ঘোষিত ভিআরএস ঐচ্ছিক হলেও তা বাধ্যতামূলক অবসরই ছিলো একরকম। তারা ভিআরএস নেননি আর এখন ছাঁটাই করা হয়েছে।

আর গ্রামীণফোন বলছে, ‘সময়ের সাথে সাথে কাজের দায়িত্ব ও পরিধি পরিবর্তনশীল। সম্প্রতি তারা ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন এমন কিছু সংখ্যক কর্মীদের ছাঁটাই করেছে।’

ছাঁটাইয়ের নোটিশ পাওয়া গ্রামীণফোন সেন্টারের এক কর্মী জানান, ‘এক বছর তাদের কর্মহীন রেখে শেষে ইনক্রিমেন্ট বৈষম্যও করা হয়েছে। ভিআরএস ঐচ্ছিক বলা হলেও তা নিতে মানসিক চাপ অনুভব করেছেন তিনি। আর শেষে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর তাকে ছাঁটাইয়ের মেইল দেয়া হলো।

এদিকে ছাঁটাই হওয়া এসব কর্মীরা প্রত্যেকেই আবার নিবন্ধিত গ্রামীণফোন অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) এর সদস্য । জিপিইউ বলছে, বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত ভিত্তি নেই গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের।

জানতে চাইলে গ্রামীণফোন অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) এর সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. শফিকুর রহমান মাসুদ টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এসব কর্মীদের শিল্প বিরোধের বিষয়টি বিচারাধীন। এ অবস্থায় এমন কার্যক্রম সর্বোচ্চ আদালতকে অসম্মান করার শামিল। এটা বেআইনি।’

‘বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতের আশ্রয় নেবেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি তুলে ধরবেন। এছাড়া আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে এটি নিয়ে তারা কী কী পদক্ষেপ নেবেন’ বলছিলেন তিনি।

গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গ্রামীণফোন নিরবিছিন্নভাবে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং অধিকতর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে যা ডিজিটালইজেশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। সময়ের সাথে সাথে কাজের দায়িত্ব ও পরিধি পরিবর্তনশীল। সম্প্রতি গ্রামীণফোন ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন এমন কিছু সংখ্যক কর্মীদের ছাঁটাই করেছে। গ্রামীণফোন তার সকল কর্মীদের বিষয়ে যত্নবান। এমনকি যারা গ্রামীণফোনের বাইরে ক্যারিয়ার তৈরির করতে চাইছে তাঁদের বিষয়েও।’

‘কর্মীদের জন্য গ্রামীণফোন আকর্ষণীয় স্বেচ্ছাবসর প্রনোদনা, পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সুবিধা দিয়ে থাকে। গ্রামীণফোন যথাযথ আইন অনুসরণ করে কর্মসংস্থানের শর্তাদি কঠোরভাবে রক্ষা করে।’ বিবৃতিতে উল্লেখ করে অপারেটরটি।

কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা অবসর পরিকল্পনা ২০২০ সালেও দিয়েছিলো অপারেটরটি। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া দেয়নি কর্মীরা। আর কর্মীরা বলছেন, কাজ আউটসোর্স করে চাকরিতে থাকা কর্মীদের কর্মহীন করা ছাঁটায়ের পরিকল্পনারই অংশ। গ্রামীণফোন বলছে, কর্মহীন হওয়া কর্মীদের জন্য এবারও বেশি সুবিধাসহ আবারও ভিআরএস ঘোষণা দিয়েছে তারা।

এবারে ভিআরএসে ছিলো, চাকরির বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০০টি বেসিক ।
স্বাস্থ্যবীমা, গ্রামীণফোনে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পেতেন অবসরে যাওয়ার পরে পরবর্তী ২ বছর একই সুবিধা পাবেন। এই স্বাস্থ্যবীমার মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মীরা, তাদের স্ত্রী, ছেলে মেয়ে ও মা, বাবা ওপিডি ও আইপিডি সুবিধা পাবেন ।

জীবন বীমার আওতায় আগামী দুই বছরে মৃত্যুজনীত কারণে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিবারকে ২৪ মাসের গ্রস বেতনের সমপরিমান ক্ষতিপূরণ রয়েছে। ওপিডির আওতায় অবসরে যাওয়া কর্মী, স্ত্রী, ছেলে মেয়ে ও মা, বাবা দুই বছর (যতবার হাসপাতালে ভর্তি হবেন) ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা পাবেন।

তাছাড়া ভিআরএস নেয়া কর্মীদের বাজার চাহিদা মোতাবেক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। টেকশহর অবলম্বনে

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন