টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ই-কমার্সে অনিয়মরোধে ই-কমার্স বান্ধব আইন ও বিধি প্রনয়ণ, কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় এসক্রো ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক লজিস্টিক সেবা চালু করা প্রয়োজন। কোনো ধরনের নতুন আইন ও নতুন কোনো নিয়ন্ত্রন কতৃপক্ষ ছাড়াই বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নীতি-পলিসির পাশাপাশি ডিজিটাল অবকাঠামোও জরুরী।
১৫ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব। আয়োজিত ‘‘ই-কমার্স পলিসি টক এড্রেসিং ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন’’ শীর্ষ আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
ডাক বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডাক বিভাগের ই-কমার্স সেবা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে লজিস্টিক সেবাকে আরো ডিজিটাইজড করার প্রস্তাব এসেছে। ধাপে ধাপে এগুলো ডাকসেবায় সংযুক্ত করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, সরকার ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা তৈরী করা হয়েছে। আদতে এই নির্দেশিকার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য অনিয়ম ধীরে ধীরে প্রস্তাবিত বিভিন্ন পদক্ষেপ এর মাধ্যমে হ্রাস পাবে এবং ক্রেতারা নিরাপদ ও নিসংশয়ে কেনাকাটা করতে পারবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এইএচএম সফিকুজ্জামান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, ই-কমার্সে অনিয়ম রোধ ও প্রকৃত উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করার জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এর চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, অসম প্রতিযোগিতা ও বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো অপচেষ্ট দেখলে সরকার ও প্রতিযোগিতা কমিশন সেখানে হস্তক্ষেপ করবে বা আইন প্রয়োগ করবে। প্রতিযোগিতা বিরোধী কোনো চর্চা কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাফিজা আকতার কান্তা বলেন, ই-কমার্সের ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন ঠেকাতে বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে এসক্রো সেবার আদলে টাকা আটকে রেখে ডেলিভারী নিশ্চয়তা পাওয়ার পর টাকা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এই মুহুর্তে এর কোনো জরুরী সমাধান নেই। এসক্রো সিস্টেম চালু না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাতে ক্রেতাদের জন্যই বেশী ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে দ্রুত এসক্রো সেবা স্বয়ংক্রিয় করতে।
ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, অনিয়ম বিভিন্ন সেক্টরের সমস্যা এটা কোনো নির্দিষ্ট সেক্টরের সমস্যা নয়। ই-কমার্স সেক্টরে অনিয়ম হলে এই বিষয়ে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারে সরকার। এ ব্যাপারে ই-ক্যাবের কোনো সহযোগিতার বিষয় থাকলে তা ই-ক্যাব থেকে করা হবে। আগামী দিনগুলোতে রুরাল ই-কমার্স ও ক্রস বর্ডার ই-কমার্স বিষয়ে কাজ করবে ই-ক্যাব। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের জন্য সহযোগিতামুলক কর্মকান্ডের বিষয়েও ই-ক্যাব সরকারকে সহযোগিতা করবে।
ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ক্রেতা-বিক্রোতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়েতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্থছাড় করলে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হবে। তাই ডেলিভারী রিপোর্টের ভিত্তিতে বিক্রেতার অর্থ ছাড় দেয়া এবং ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারী না হলে ক্রেতার অর্থ ক্রেতাকে ফেরত দেয়া উচিত। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
একশপ এর ই-কমার্স হেড রেজওয়ানুল হক জামি ই-কমার্স প্রতারণা রোধে কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, এসক্রো, লজিস্টিক এগ্রিগেটর ফ্লাটফর্ম ও ইউবিআইডি কিভাবে কাজ করে এবং এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যতে কিভাবে অনিয়ম রোধ করা যাবে তা একটি কী নোট উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন।
চালডাল এর সিইও ওয়াসিম আলিম তার উপস্থাপনায় ই-কমার্সের প্রয়োজনে শ্রমআইন সংশোধন, ডেলিভারী বাইকে বক্স অনুমোদনসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এবং ই-কমার্স খাতে সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত নীতি-পলিসির সংশোধনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। নগর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া সবই ই-কমার্স বান্ধব হওয়ার কথা বলেন তিনি।
ড. অনন্য রায়হান বিশ্বজুড়ে ভোক্তা সেবায় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা এর সমাধানকল্পে বিভিন্ন পরামর্শমূলক একটি উপস্থাপনা পেশ করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্ছালনা করেন ই-ক্যাবের ডিরেক্টর আসিফ আহনাফ।
আজকের ডিল এর সিইও ফাহিম মাশরুর প্রচলিত ব্যবসা ও ই-কমার্সের সাথে ভ্যাট ট্যাক্স এর নানারকম বৈষম্য তুলে ধরেন। এসএসএল কমার্জ এর ডিসিটিও ইফতেখার আলম ইসহাক যথাক্রমে এসক্রো ও ই-কমার্সে ট্যাক্স ভ্যাট এর বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাবের উপদেষ্ঠা ইকবাল জামাল, পেপার ফ্লাই এর সিইও রাজিব আহমেদ, ফুডপান্ডার সিইও সৈয়দা আম্বারিন রেজা , দারাজের হেড অব স্টেইক হোল্ডার রিলেশনস মোহাম্মদ সামসুল ইসলাম মাসুদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
অনুষ্ঠান আয়োজন সহযোগী ছিলো একশপ ও পেপার ফ্লাই।