টেকভিশন২৪ ডেস্ক : সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের জাতীয় কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) বা জাতীয় সার্ট। বিশেষ করে তারা মোজিলা অ্যাপসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে যারা আর্থিক লেনদেন করেন তাদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সার্ট মঙ্গলবার এসব বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা বলেছে, মোজিলা অ্যাপস ও হুয়াওয়ে মোবাইল ফোনসেটে এক ধরনের ম্যালওয়্যার ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যেগুলো কোনো একটি আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ পাঠিয়েছে। এসব ভাইরাস সংশ্লিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকের গোপনীয় তথ্য চুরি করে হ্যাকার গ্রুপের কাছে পাঠাচ্ছে। পরে সেগুলো ব্যবহার করে হ্যাকার গ্রুপটি গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার ল্যাবে অনুসন্ধান করে বাংলাদেশেও সংশ্লিষ্ট দুটি খাতে আলোচ্য ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এর আগে গুগল ইমেইল ব্যবহার করে যারা স্মার্টফোন সচল করেছেন তাদের মোবাইল ফোন সেটে ম্যালওয়্যার ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে সার্ট। তখনো এ ধরনের গ্রাহকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
সার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব ইন্টারনেট গ্রাহক মোজিলা অ্যাপস ব্যবহার করেন তাদের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে ভাইরাসটি অপসারণ করতে হবে। এ জন্য সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। একই সঙ্গে হুয়াওয়ে ফোনের ক্ষেত্রেও এসব করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলা বিধিনিষেধের ফলে আর্থিক খাতে ডিজিটাল লেনদেনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে হোম অফিস চালু হওয়ায় অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে। এই সময়ে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই জরুরি। যে কারণে তারা খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোথাও কোনো ঝুঁকি দেখলে তা সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকির সমাধানের পথও। গ্রাহকরা এসব সতর্কতা অনুসরণ করলে সাইবার হামলা এড়ানো সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা সার্বক্ষণিকভাবে সজাগ আছেন। সাইবার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা সার্বক্ষণিক অফিস করছেন। সাইবার ল্যাবগুলোও সচল রয়েছে।
সূত্র জানায়, শুধু ব্যাংকের গ্রাহকই নয়, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে মোজিলা অ্যাপসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনেক গ্রাহক মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিচালনা করেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তাদের সিস্টেমসকে হালনাগাদ করে নিতে হবে।
সার্টের সতর্কবার্তায় বলা হয়, হ্যাকার গ্রুপটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নকল ও আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করে সেগুলোর মাধ্যমে লেনদেন করতে উৎসাহিত করছে। এগুলোতে গ্রাহকরা তাদের ব্যাংক হিসাবের গোপন তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্যাকার গ্রুপটির হাতে চলে যাচ্ছে। পরে তারা সেগুলো ব্যবহার করে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে গ্রাহক নকল ওয়েবসাইট দিয়ে কোনো টাকা লেনদেন করতে পারছে না। একই সঙ্গে বিভিন্ন লিংক সৃষ্টি করে গ্রাহকদের ইমেইলে পাঠানো হচ্ছে। সেগুলোতে ক্লিক করে গ্রাহকরা ভাইরাসটি অজান্তেই সচল করছে। এতে ভাইরাসটি চুরি করছে গ্রাহকের গোপনীয় তথ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছে ভাইরাস পাঠানো হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা সাড়া দিয়ে নিজের গোপনীয় তথ্য হ্যাকার গ্রুপকে দিয়ে দিচ্ছে। এভাবে গ্রাহকরা অনলাইন লেনদেনে সাইবার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
এ কারণে সার্টের প্রতিবেদনে অপরিচিত ওয়েবসাইট, আকর্ষণীয় কোনো লিংক, ইমেইল বা লোভনীয় কোনো প্রস্তাব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো মেইলে দেখলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে বলেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে সাড়ে ১১ হাজার এটিএম বুথ, অনলাইনে কেনাকাটার পস মেশিন ৬৬ হাজার, ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম) এক হাজার ৪২৩টি, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড আড়াই কোটি, মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সাড়ে ৯ কোটি।
কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ২৯ লাখ। লেনদেন হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।