টেকভিশন২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (BNNC), খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ ইউনিট (FPMU) এবং কেয়ার বাংলাদেশের নেতৃত্বে জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকামস (JANO) কনসোর্টিয়ামের যৌথ উদ্যোগে রংপুরে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ‘খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরে পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ২০২৪’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের প্রথম দিনের বিষয়বস্তু ছিল, ‘পুষ্টি ব্যবস্থাপনা: জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা ২ এর বাস্তবায়নে জানো (JANO)-এর অবদান এবং স্থানীয় পর্যায়ে পুষ্টি ব্যবস্থাপনা কৌশল’। প্রথম দিনের অধিবেশনে পুষ্টি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে দাতা সংস্থাগুলো পরস্পরের সাথে আলোচনা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।
তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন/সিম্পোজিয়ামটির লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (BNNC) এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ ইউনিট (FPMU) এর সহযোগিতায় কেয়ারের জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকামস (JANO) কনসোর্টিয়ামের উদ্যোগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা (FNS) কর্মসূচির অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা।
সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাস যিনি উন্নয়নের সকল খাতে পুষ্টির সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন একটি সুদৃঢ় গভর্নেন্স কাঠামোর মাধ্যমে। এরপর সম্মানিত বিশেষ অতিথি, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রংপুর ও নীলফামারীতে JANO প্রকল্পের সফল ফলাফলের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই প্রকল্পের দেশব্যাপী সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে JANO প্রকল্পের প্রেরণাদায়ক যাত্রার কাহিনী সমৃদ্ধ গল্পের বই উন্মোচন পর্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) এবং সদস্য সচিব, ডিএনসিসি, নীলফামারী, জানোর সাথে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে তার এলাকার মানুষরা পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান বিষয়ে কখনোই বিভ্রান্ত হবে না জানোর কারজক্রমের কারণে।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাসিবুর রশিদ, উপাচার্য, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, সুস্থ এবং শিক্ষিত _ উভয় ধরনের জনগণ তৈরির ব্যাপারে গুরুতারোপ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, নীলফামারী ও রংপুরে যে কাজ করা হচ্ছে তা এই লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডাঃ মোঃ শহীদ উজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ESDO, মাল্টি-সেক্টরীয় সমন্বয় করার চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করেছেন এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে বিএনএনসির প্রচেষ্টাগুলোর ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। তিনি যদিও উল্লেখ করেছেন যে পুষ্টি বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো দূর করতে এখনও অনেক পথ বাকি রয়েছে।
জানো (JANO) বাংলাদেশে বহু-ক্ষেত্রভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা এবং পুষ্টি ব্যবস্থাপনার মূল অংশীদারগণের মধ্যে সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এফএনএস কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী অংশীদারগণ আটটি মন্ত্রণালয় এবং অসংখ্য সংস্থা সহ বেশ কয়েকটি সরকারী বিভাগকে তাদের পুষ্টি-সংক্রান্ত এবং পুষ্টি-কেন্দ্রিক/সংবেদনশীল কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করেছে।
মার্ঘেরিটা ক্যাপালবি, প্রোগ্রাম ম্যানেজার – কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল, উল্লেখ করেন যে জলবায়ু-সহনশীল কৃষি পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে ফসল না হওয়ার ঝুঁকি এবং খাদ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, এফএনএস (FNS) প্রোগ্রামের অংশীদারগণ, প্র্যাক্টিশনার, ও শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।
জানো (JANO) সম্পর্কে:ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা (FNS) প্রোগ্রামের সাতটি প্রকল্পের মধ্যে জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকামস (JANO- জানো) অন্যতম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এর অর্থায়নে এবং অস্ট্রিয়ান উন্নয়ন সংস্থা (ADA) এর সহ-অর্থায়নে কেয়ার (CARE), প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল (Plan International) এবং ইএসডিও (ESDO) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (NPAN) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য প্রকল্পটি জাতীয়, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের (GoB) সাথে কাজ করছে। রংপুর ও নীলফামারী জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি উপজেলা এবং ৬৪টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন। প্রকল্পটির সার্বিক উদ্দেশ্য হলো গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী (PLW) এবং কিশোরী মেয়েদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে কাজ করা।